কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৯ |
আইহোল
আমি আজকাল ট্রেনে উঠলে ড্রিল মেশিন সঙ্গে নিয়েই উঠি। বহু বছর ধরে ট্রেন জার্নি করে দেখেছি, দরজা দিয়ে অনেক কিছুই দেখা যায় না যেটা জানলা দিয়ে ধরা পড়ে। কিন্তু জানলা দিয়েও অনেক সূক্ষ্ম দৃশ্য ধরা পড়ে না, যেটা খুব ছোট্ট একটা ফুটো থাকলে তার মধ্যে দিয়ে দেখা যায়। সেজন্যই এই ড্রিল মেশিন। শেষ একমাস হল এই টেকনিক ব্যবহার করছি। যেখানে বসি, তার পাশেই ট্রেনের দেওয়ালে একটা ছোট্ট ছ্যাদা করে নিই। তারপর দিব্যি দেখা যায়।
ছোঁ মেরে বক যখন ব্যাং ধরে, সেই
মুহূর্তে ব্যাঙের চোখ। আকাশ থেকে বৃষ্টি টুপ করে পুকুরে পড়ার পর ফেটে যাওয়ার মুহূর্ত।
গ্রামের কিশোরীর খোলাচুল শুকোতে দিয়ে দৌড়ে পালানোর রিদম। সবকিছু। অনেকটা ডিফারেন্সিয়েশান
করার মত। ডেল ওয়াই বাই ডেল এক্স হোয়েন ডেল এক্স টেন্ডস টু জিরো।
আজ মাঝেরহাট থেকে উঠেছি, বজবজ যাব। দুপুরের ট্রেন, ফাঁকা। কেউ নেই। বড়জোর আধঘণ্টা সময় লাগবে। ড্রিল করে নিলাম।
কিন্তু মুশকিল হল সন্তোষপুর ছাড়ার
পর। হঠাৎ রমা উঠল।
-- তুই এখানে? কোথায় যাচ্ছিস?
-- বজবজ যাব, একটু কাজ আছে।
-- কী কাজ? আমাকে বলতে হবে। বল!
-- পারসোনাল। বলা যাবে না।
-- না, আমি কিছু শুনব না। তুই এক্ষুনি
নেমে আয় আমার সঙ্গে। নামতে তোকে হবেই। ফিরতি ট্রেন ধরে চল ব্রেসব্রিজে নামব। রাজেশকে তুলব। তারপর তোকে মানসিক
ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব। চাকরিটা যাবার পর
থেকে তোর মাথার ব্যামো আমার ভাল লাগছে না।
রমা আমাকে জামা ধরে টানতে শুরু
করল। দূর থেকে কয়েকজন উৎসাহী চোখে, হাঁ করে।
আকড়া ঢুকছে। আমি রমার হাত ছাড়িয়ে
নিয়ে একলাফে নেমে পড়লাম। রমাও আমার পিছু পিছু। ট্রেন ছেড়ে দিতে আবার একলাফে উঠে
পড়লাম। রমা পারল না।
পুরনো সিটে ফেরত এলাম। ফুটোয় চোখ
রাখলাম। সব ঝাপসা। কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। আমার ড্রিল মেশিনটাও হাওয়া। তাহলে?
দরজার সামনে এসে দাঁড়ালাম। ট্রেন
দৌড়চ্ছে। দরজার দৃশ্যগুলোও কি ঝাপসা হয়ে গেল? বুঝতে আরেকটু সময় লাগবে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন