কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / সপ্তম সংখ্যা / ১৩৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / সপ্তম সংখ্যা / ১৩৪

শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বিমান মৈত্র

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৯


দ্বিতীয় সংস্করণ

যদি তাঁর মনে পড়ে যেত পুরনো বাড়ি ভাঙার শব্দের সাথে তামাদি হয়ে যাওয়া জীবনের সেইসব ভাস্কর -মুহূর্তের এবং খুঁটিনাটি ঘটনার কথা যা ইটের টুকরো, ধুলোবালি আর সুরকির গন্ধের সাথে একাত্ম হয়ে আছে - অনায়াসে সেটা হতে পারত একটা পূর্ণাঙ্গ মানসভ্রমণ। কিন্তু কিছুই হল না। যশোর রোডের দিকে মুখ করা ভাড়া বাড়ির বারান্দায় চিরন্তনের নিঃসঙ্গ সন্ধ্যা চুপচাপ বসে রইলো। ব্যস্ত শহরের ছুটোছুটি কিম্বা অদূরে বাড়ি ভাঙ্গার শব্দ কিছুই তার স্নায়ুকে বিন্দুমাত্র উদ্দীপ্ত করতে পারল না। এক অপরিচিত বিহ্বলতায় অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ, যা চিরন্তনের শিরা-উপশিরা–ধমনীর ভেতর দিয়ে উদভ্রান্তের মত ছুটছিল - সেটাও যেন এখন তার নাগালের বাইরে। যেমন গভীর রাতে বিক্ষুব্ধ ঢেউ স-গর্জনে নির্জন সৈকতের বুকে আছড়ে পড়ে – ফিরে যায়, ফিরে আসে। আসা যাওয়ার মাঝে যে একফালি অস্পষ্ট অবসর, সেই বোধকরি নো-ম্যানস–ল্যান্ড - চিরন্তনের বারান্দা। অনন্ত, সমুদ্রের তীরে যেমন মূর্ত, তেমন বুঝি আর কোথাও নয়!

তোমার চা। ট্রে হাতে দাঁড়িয়ে ছিল সমর্পিতা। চিরন্তন মুখ ঘুরিয়ে ওকে দেখল। পাশের চেয়ারে বসতে ইশারা করল। বহুদিন যাবৎ প্রতি ঘন্টা, মিনিট, সেকেন্ড ধরে দেখা, এই নির্বাপিত বাক্যালাপ, যেন অনবরত কিছু ঘটে চলেছে সমর্পিতার মুখমণ্ডলে, তারই খোঁজে চিরন্তন মগ্ন – না, এই খোঁজ থেকে চিরন্তন মুক্তি পেয়েছে; যা কিছু জাগতিক সে সব থেকে অনেক দূরে তার বিচরণ বারান্দায় - বরং সমর্পিতাই বিগত কিছুদিন যাবত চিরন্তনের সাম্প্রতিক পরিমার্জিত সংস্করণের নতুন সংযোজনটির হদিস পাওয়ার চেষ্টা করছে।

নদীটি এসে গেছে। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে চিরন্তনকে দেখে যাওয়া তার প্রতিদিনের অভ্যাস। নদীটিকে দেখেই চায়ের ট্রে তার হাতে ধরিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সমর্পিতা। বোসো! দেখ যদি চা’টা খাওয়াতে পারো। জানো, আজ এখনো ঝিমলি এলো না। ও-ই পারে তোমার বন্ধুকে সামলাতে। হ্যাঁ ঝিমলি। তাকে চিনি। বেলাশেষে এই প্রথম চিরন্তন আজ কথা বলল। এমনই দুটো একটা শব্দ সারাদিনে তার মুখ থেকে শোনা যায় কি যায় না। কিম্বা বেড়িয়ে পড়ে। কাপড়ের খুঁট দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে সমর্পিতা চলে গেল। আর আমাকে? নদীটির এই প্রশ্নে চিরন্তনের হাসি যথা সরল শিশুর মত প্রকাশিত। সে দু হাত দিয়ে নদীটিকে জাপটে ধরে মুখ নেড়ে নেড়ে বলল, বলবো না, বলবোও না, বলবো নাআআআ...

প্রতিদিনের মত আজও সন্ধ্যায় যশোর রোডে কঠিন জ্যাম। এ জ্যাম কী সহজে ছাড়ার!


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন