কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / প্রথম সংখ্যা / ১২১

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / প্রথম সংখ্যা / ১২১

সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪

সমরেন্দ্র বিশ্বাস

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৬


রাষ্ট্রের মেরামত চলছে

 

টায়ারের নীচে ক্ষমাহীন চাপা পড়ছে সবুজ ঘাস, নড়বড়ে সব পাথর।

গতিশীল টায়ার। মিলিটারীর গাড়িগুলো ছুটে ছুটে আসছে। প্রচন্ড কর্কশ তার আওয়াজ! এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মানুষজন – সন্ত্রস্ত! লুকিয়ে পড়ছে আড়ালে, আবডালে। নিজের আত্মরক্ষা বড়ো দায়!

রাজপথে নেমেছে সশস্ত্র ফোর্স। গাড়ির সামনে লেখা বড় বড় হরফ – ‘এসময়ের একমাত্র কর্তব্য / স্বাধীন দেশের সুরক্ষা’!

পালানের বাবা। বুড়ো লোকটা। রাস্তায় এদিক ওদিক উঁকি দিয়ে দেখছে। কাঁদতে কাঁদতে বলছে – ‘শোনলাম, কারা য্যানো আমার ছেলেডারে খুন কইর‌্যা নদীতে ভাসাইয়া দ্যাছে! বাপ পালান! আয়, তুই ঘরে ফিইর‌্যা আয় - পালান আমার!’ 

বিনা প্ররোচনায় গতকাল কয়েকটা গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল। সেখানে ধোঁয়া ওড়া ধ্বংসস্তুপ! পাশেই ছোট্ট ছেলেটাকে আঁকড়ে ধরে একজন সধবা মা কাঁদছে। তার স্বামী কোথায় গেছে, জানে না! নিভে যাওয়া আগুন। চারধারে নেমে এসেছে পোড়া ধোঁয়ার শ্বাসরোধী গন্ধ!

গতকালের গণহত্যার প্রতিবাদ! কলেজের কিশোর যুবক ছাত্র ছাত্রীরা! তারা স্কুলের সামনেটা জ্যাম করে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা চেঁচাচ্ছে, ‘গণহত্যার বিচার চাই! বিচার চাই!’ সমস্বরে আওয়াজ উঠছে – ‘অত্যাচারী নিপাত যাও,  নিপাত যাও!’

তক্ষুনিই মোবাইলে মোবাইলে ভেসে এলো কল, কোনো হিতৈষীর ফোন। মিলিটারীর গাড়ি এদিকেই আসছে! ধীরে ধীরে ভীড় হালকা। প্রাণের দায়ে ছাত্রের দল স্কুল বাড়িতে। কেউ কেউ এদিক ওদিকে ছিটকে গেলো। সরে পড়লো। একজন পাগলাগোছের ফেরিয়ালা! রাস্তায় দাঁড়িয়ে তখনও চীৎকার করছিল – ‘সাবধান। সাবধান। সারা দ্যাশে মিলিটারির জুতা পালিশ চলছে!’

গণহত্যার প্রতিবাদে একটা রাজনৈতিক দল মিছিল করে স্বাধীন রাষ্ট্রটার রাজধানীর দিকে এগোচ্ছিল। পুলিশ তাদের  রাস্তা আটকালো। সাথে সাথে চোখ জ্বালা করা ধোঁয়া - টিয়ার গ্যাসের শেল।

পূর্ব নির্ধারিত মঞ্চে সেদিন একটা নাটক অভিনীত হবার কথা ছিলো। সেই  সেই নাটকের নাট্যকার অসহায়, ঘোষণা করলো – ‘নাটক আপাততঃ বন্ধ। রাষ্ট্র কী পেয়েছে? কতদিন চলবে এই জুলুম, এই গণহত্যা!’

একজন লেখককে এইমাত্র অ্যারেস্ট করা হলো। কারণ সে একটা পোস্টারে লিখছিলো – ‘কবিতার খাতাতে বিদ্রোহের কথা লিখলেই বিপ্লব হয় না। রাস্তায় নামুন।’

একজন নেতা। সে ধর্মীয় সমন্বয়ের কথা বলেছিল। অনেকগুলো খোলা মিটিং করেছিলো। স্বাধীন রাষ্ট্রটার সমালোচনা করেছিল। তার লাশ পাওয়া গেলো একটা নির্জন মাঠে!

সমস্ত দেশ জুড়ে সন্ত্রাস! লকডাউনের পরিস্থিতি।

সেদিন বিকেলেই টিভিতে ভেসে এলো রাষ্ট্র নায়কের মুখ। তিনি বললেন – ‘আমরা সফলভাবে বিদ্রোহীদের দমন করেছি। জনগণ! আপনারা পাশে থাকুন। ভুলবেন না ... এখন রাষ্ট্রের মেরামত চলছে!’

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন