কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / প্রথম সংখ্যা / ১২১

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / প্রথম সংখ্যা / ১২১

সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪

শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৬


মায়ার খেলা

 

-ধুর মশাই। এই নামটাই তো চেনা চেনা ঠাহর হচ্ছে।

-হ্যাঁ। ঠিক ধরেছেন। শ্রীমতী সরলা রায়ের অনুরোধে এই নাটক লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

-তা। আপনি আপনার প্রথম উপন্যাসের আর নাম খুঁজে পেলেন না দাদা? কতদিন আর রবীন্দ্রনাথ ভাঙিয়ে চলবে?

প্রবীণ প্রকাশকের সামনে তরুণ ঔপন্যাসিক জড়োসড়ো হয়ে তার পাণ্ডুলিপি হাতে দাঁড়িয়ে থাকে। এই লেখা লিখতে গিয়ে তাকে সব ছাড়তে হয়েছে। ঘর, পরিবার, চাকরি, নিশ্চয়তা। সব। ভেবেছিল উপন্যাসখানা জয়েসের ফেনেগানস ওয়েক হয়ে উঠবে। ভাবতে ভাবতে আটকে গেল রবীন্দ্রনাথে। মা ভাঙা হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান শেখাতেন ছাত্রছাত্রীদের। 'এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মিলে না।' গলার ক্যান্সার তার গান থামাতে পারেনি শেষ অবধি। বাবা শুধু সারাজীবন একটিই বই পড়ে গেলেন। 'গোরা'। আর কিছু না। বলতেন, ওটি পড়লেই তার সব পড়া হয়ে যায়। এই বাবা-মাই কাল করল তার। নাম রজনীকান্ত। এই আধুনিক এ আই যুগে এমন মাখনলেপা আফিমখাওয়া নাম! প্রথম হেসেছিল সুপর্ণা। পরে অবশ্য রজনীর সুরেলা গলা তাকে খানিকটা শান্ত করতে পেরেছিল। কিন্তু সে তো মাত্র কিছুদিন। ওই উপন্যাসের ভূত ঘাড়ে চেপে বসা মাত্র। সুপর্ণার সঙ্গে ব্রেক আপের দিন রজনীর কানে বাজতে থাকল একটাই কলি। 'শুধু সুখ চলে যায়, এমনই মায়ার ছলনা।'

-একজন আর্টিস্ট তার ক্যানভাসের ভিতর ঢুকে হাঁটছে। সেখানে ঘর বাঁধছে। এসব সুররিয়ালিজম কি আজকাল আর চলে ভায়া? একটু প্র্যাকটিক্যাল লিখলে হতো না? এমনকি প্রেমিকাটিও শুধুই কল্পনার খেলা। অবশ্য চাপ নেই। বাংলা বই এমনিও কেউ পড়ে না। কলকাতায় এখন বাঙালি কজন? আপনার 'মায়ার খেলা' নামটা ক্যাচি। মনে হচ্ছে তুক্কা লেগে যাবে।

রজনী মেঝের দিকে তাকিয়ে রইল খানিকক্ষণ। প্রকাশক বলে চলেছে।

-কুড়ি ফর্মার রেট পঁয়ত্রিশ। কম করেই বললাম। বেশি লাগলে চেয়ে নেব। পারবেন?

রজনী ঘাড় নাড়ে। পারার প্রশ্নই নেই। গাড়ি ভাড়া জোটে কোনও মতে টিউশানি করে। হদ্দ বেকার। পাণ্ডুলিপি ফিরিয়ে দিতে দিতে পাবলিশার বলে, "এখনও কী এতো রবীন্দ্রনাথে পড়ে আছেন কে জানে! ওইসব মায়ার খেলাটেলা কী আর  কলকাতার বাঙালিদের আছে? বাংলাভাষাতেই কথা বলে না কেউ। রবিঠাকুরফাকুর সব ব্যাকডেটেড" বলতে বলতে হঠাৎ তার মোবাইলে বেজে ওঠে "সখী চলো, গেল নিশি, স্বপন ফুরাল, মিছে আর কেন বলো।" রজনীকান্ত মুচকি হেসে প্রকাশনার অফিস থেকে পাণ্ডুলিপি হাতে বেরিয়ে এল।

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন