কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / প্রথম সংখ্যা / ১২১

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / প্রথম সংখ্যা / ১২১

সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪

জয়িতা ভট্টাচার্য

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৬


অষ্টমঙ্গলা

 

কুশী পাশ ফিরে শুয়ে আছে। একটু পরে চিত হয়। মরা মাছের মতো চোখ তার। প্রহরে প্রহরে চৌকিদারের বাঁশি শোনা যাচ্ছে। নীলাভ আলো। এসির হাল্কা আওয়াজ। নরম ব্ল্যাঙ্কেট, বালিশ তবু নির্ঘুম সে। কুশী বুঝতে পারছে না গণ্ডগোলটা ঠিক কোথায়। কুশী আজ বাপের বাড়ি এসেছে। অষ্টমঙ্গলায়। থাকার কথা কয়েকটা দিন। বিয়েটা প্রেম করেই করেছে কুশী তবে বাড়ির ট্র্যাডিশন মেনে সমজাতে। অযথা ঝঞ্ঝাট সে চায়নি। ভাস্কর ইঞ্জিনিয়ার টি সি এস এ। সব দেখে নিশ্চিন্তে প্রেমটা করেছে কুশী বছর দুয়েক। কারণ কে না জানে প্রেমের একটাই পরিণতি বিয়ে। অমিতের ডাকে  তাই সাড়া দিতে পারেনি। অমিত সেন বাংলা এম এ পাশ করে স্কুলে টিচার। ছাপোষা মধ্যবিত্ত অমিত। কুশী বোঝে জীবনটা ভালো করে হিসেব-নিকেশ করেই চলতে হয়। ভাস্কররা বনেদী না হলেও বেশ বড়লোক। পশ এলাকায় বিরাট ফ্ল্যাট। তাদের বাড়িটার সঙ্গে অবশ্য তুলনা চলে না। ভবানীপুরে তাদের বনেদি বাড়িটা প্রাসাদই বলা যায়। বাড়ি এখন নানা শরিকে ভাগ। তুলনায় ভাস্করদের ফ্ল্যাট ছিমছাম। কাকীমা মানে এখন শাশুড়ি মা, বেশ মডার্ন। কুশী উসখুশ করছে।

প্রতিবার মনটা তিক্ত  হয়ে গেছে। পারমিতা এসেছিল দুপুরে, বেস্টফ্রেন্ড। পাঁচবছর বিয়ে হয়েছে। কুশীর জন্য উড়ে  এসেছে মুম্বই থেকে কলকাতা। বড়োরা আড়াল হতেই চোখের দিকে তাকিয়ে ইসারা করেছিল, "কুশু সব ঠিকঠাক তো?"

--হু।

সত্যিই  তো,সবই তো ঠিকই আছে।

কুশু চোখ সরিয়ে নিয়েছে। কী বলবে সে! বলার মতো তেমন কিছু নেই। নীল ডিম লাইটের বৃত্তে একটা ছোট্ট কালো মথ। অস্বস্তিকর সব ভাবনা। এমন নয় যে ভাস্করের কোনো যৌন সমস্যা আছে। কিন্তু বড্ড ভদ্র! নরম।

এটা কী কোনো অভিযোগ হতে পারে! স্ত্রীর তো বীর্য পেলেই ধন্য হওয়ার কথা। সোনার আংটির আবার ব্যাঁকা চোরা! ঠাকুমা বলতেন। তবু তারা দুইবোন।

কুশী এলোচুলে বারান্দায় আসে। দুটো কুকুর ফুটপাথে মিলিত হচ্ছে। কুশী চোখ সরিয়ে নেয়। এই কদিনে প্রতিবারই হতাশ হয়েছে কুশী। এত সংক্ষিপ্ত! ভাস্কর উঠে যায় সিগারেট খেতে। কখনও জড়িয়ে ধরে নাক ডাকে। অমিতের উন্মত্ত কাম, বিলম্বিত ফোরপ্লে, ক্রমশ তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা সিংহটা... ভাস্কর শীর্ষ বিন্দুতে পৌঁছে দিতে  অক্ষম।

কুশী ঘেমে উঠছে। সঙ্গম একটা আর্ট, তার বিভিন্ন কলা। অমিতের কাছে ক্ষত বিক্ষত হতে হতে কুশী পরিপূর্ণ হতো। সঙ্গম কি শুধুমাত্র জৈবিক ক্রিয়া!

রাত তিনটে। এটা ব্রাহ্ম মুহূর্ত! কুশীর মনের মতো শূন্য পথ। পুরুষের একচেটিয়া অধিকার রমণসুখে! একথা কি কহতব্য!

স্টেটাস আগে না সুখ! কুশী কী ভুল করে ফেলল?


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন