বড় পর্দায় ইংরজী ছবি
(তৃতীয় পর্ব)
১৯৬৪-তে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ
ছবি দেখেছিলাম। সেই যে প্রতি বছর জুলাই মাসে
‘রেক্টর দিবস’ উপলক্ষে আমাদের সেন্ট জেভিয়ার্সে নিয়ে গিয়ে ছবি দেখানো হতো। প্রথম শ্রেণীতে
দেখেছিলাম Magic Boy, যে কথা প্রথম কিস্তিতেই
বলেছি।। দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠে দেখলাম ১৯৬১ সালের The Absent-minded Professor,[1] আমার প্রথম ওয়াল্ট ডিজনি-ছবি!
আমার সারা জীবনের সবচেয়ে প্রিয় ছবি Mary
Poppins এই ভদ্রলোকের প্রযোজনা-সংস্থা থেকেই বেরোবে ঠিক এই ১৯৬৪ বছরেই, যদিও এই
দেশে সেটি আসবে আরো চারবছর পর! কিন্তু এই প্রথম-দেখা ছবিটি কিছুই বুঝিনি, এবং একেবারেই
ভাল লাগেনি! পরে অবশ্য দেখে উড়ন্ত মোটর গাড়ির গল্প উপভোগই করেছি। এই ব্যাপারটি পরে
এই ১৯৬৪-র কিশোরকুমার-অভিনীত হিন্দী ছবি Mr X in Bombay-তে টুকে বসানো হয়েছিল।[2] অনেক পরে আরেক ম্যাজিক মোটর
গাড়ির ছবি আমায় অভিভূত করবে – তার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে ১৯৭০-এর বড়দিনের ছুটি অবধি!
অবশেষে
আবার মেট্রোতে! পুরনো দিনের হাসির ছবি থেকে দৃশ্য নিয়ে ১৯৬৪ সালের সঙ্কলন The Big Parade of Comedy। প্রথমেই এক কাণ্ড
ঘটালাম আমি! গাড়ি থেকে দেখছি মেট্রোর ঢোকবার মুখে লেখা রয়েছে, আমার চোখে, NO SHOWING! সেটা উচ্চকণ্ঠে
বলতে বাবা তো চমকে উঠলেন, “সে কি!” তারপর আমাকে বললেন, “ভালো করে দেখোঃ N O W মানে
NOW SHOWING! ভেবেছিলাম শো বুঝি বন্ধ হয়ে গেছে!” হলে ঢুকে আবার নতুন চমক! দেখি পর্দা
দু-দিকে ভাগ হয়ে সরে না গিয়ে সম্পূর্ণভাবে ওপরে উঠে যাচ্ছে! অবাক হয়ে চেঁচিয়ে উঠতে
দাদা আমায় নিরস্ত করেন। অনেক বিখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কৌতুক অভিনয়ের এই সমাহারে
আমার মনে আছে যে দুজন আমার সবচেয়ে প্রিয় জুটি হয়ে উঠবেন, সেই লরেল-হার্ডি, আর The
Three Stooges-দের।
এইরকম
সময়েই পূর্ণতে পুনর্মুক্তি পায় চার্লি চ্যাপলিনের বিখ্যাত ছবি The Kid (১৯২১), সম্ভবত আমার দেখা একমাত্র
পূর্ণদৈর্ঘের নির্বাক ছবি। এর সঙ্গে দেখানো হচ্ছিল লরেল-হার্ডির স্বল্পদৈর্ঘের, কিন্তু
সবাক, The Chimp (১৯৩২)। মনে নেই এই যুগলকে
পূর্ণতে প্রথম দেখেছিলাম না মেট্রোতে। কিছুদিন পরে দাদার সঙ্গে সিনেমা দেখার অভ্যস্ত
এলাকা ছেড়ে জীবনে প্রথম শেয়ালদায় যাই আরেক ঐতিহ্যশালী প্রেক্ষাগৃহ প্রাচীতে চ্যাপলিনের
The Gold Rush (১৯২৫)-এর সবাক ভার্সান দেখতে।
মা’র স্মৃতিচারণ অনুযায়ী সময় ১৯৬৫ সালের এপ্রিল মাস।
এরপর আসব একটি বিশেষ প্রেক্ষাগৃহের প্রসঙ্গে। ষাটের দশকের প্রথমার্ধে কলকাতায় ৭০ মিমি প্রোজেকসানে ছবি দেখার প্রেক্ষাগৃহ একটাই ছিল। তখনকার ‘ধর্মতলা স্ট্রীট’, এখনকার লেনিন সরণীতে ‘জ্যোতি’। এখানে মূলত হিন্দী ছবিই আসত, শুধু, সাধারণত মেট্রোতেই আসার কথা (কারণ ‘মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়র’ প্রযোজিত) কোন ছবির প্রকাণ্ড পর্দা প্রয়োজন হলে, সেই ছবি মুক্তি পেত জ্যোতিতে। জ্যোতিতে এর আগে যখন হিন্দী ছবি দেখেছি, দাদা দেখিয়েছিলেন কিভাবে সাদা স্ক্রীন-ঢাকা ধূসর পর্দা পুরোপুরি দু-দিকে সরে যাচ্ছে না, অর্ধেক সরছে, কারণ হিন্দী ছবি, বাংলার মতই, ৩৫ মিমি প্রোজেকসানেই দেখানো হত (প্রথম ৭০ মিমি হিন্দী ছবি হয় ১৯৬৭ সালে)।
পর্দা
পুরো সরে গেল ১৯৬৪/৬৫-তে, যে ছবির ট্রেলর দেখেছিলাম মেট্রোতে, তার জন্যঃ তিনজন স্বনামধন্য
পরিচালকের (জন ফোর্ড, হেনরি হ্যাথাওয়ে, জর্জ মার্শাল) তৈরী ১৯৬২-র ছবি How the
West was Won, যাতে একটি পরিবারের তিন প্রজন্মের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে পশ্চিম
আমেরিকার ইতিহাস। প্রথমে পর্দা সরে গিয়েও হল অন্ধকার রেখে কিছুক্ষণ ধরে শোনানো হলো
ছবির গান ও আবহ সঙ্গীত। এরপর তারকা-খচিত মূল ছবি। মুগ্ধ হয়ে দেখলাম খরস্রোতা নদীতে
পড়ে হারিয়ে গেল বাবা (অভিনয়ে কার্ল মালডেন)-মা কে নিয়ে প্রেসকট পরিবারের প্রথম প্রজন্মের
ভেলা। দুই বোন দ্বিতীয় প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে চলল, বড় বোন ইভ (অভিনয়ে ক্যারল বেকার)
ভালোবাসার মানুষ লিনাস রলিংস (জেমস স্টুয়ার্ট)-কে - যে তাদের সবাইকে (বাবা-মাকে নদী
তখনো গ্রাস করেনি) রক্ষা করেছিল একদল খুনে ডাকাতদলের হাত থেকে - বিয়ে করে সংসার পাতে।
ছোটবোন লিলিথ (ডেবি রেনল্ডস) ভাল গান গায়, তার অন্য উচ্চাশা আছে, সে সেইদিকেই পা বাড়ালো।
তাকে যে পছন্দ করল (গ্রেগরি পেক) তার সঙ্গে ছোটবোন লিলিথ এগিয়ে চলল পশ্চিমের অভ্যন্তরে
একটি বৃহৎ দলের সঙ্গে, যাদের ওপর নেমে এল আমেরিকার আদি বাসিন্দা লাল মানুষদের আক্রমণ।
তৃতীয় প্রজন্মে, বড়বোন ইভের বড়ছেলে জেব (জর্জ পেপার্ড) যোগ দিল গৃহযুদ্ধে, দাসপ্রথা
বিলুপ্তির পক্ষে, এব্রাহাম লিঙ্কনের প্রচেষ্টাকে সম্মান জানিয়ে। যুদ্ধক্ষেত্রে তার
পরিচয় হল বিপক্ষের এক সমবয়সীর সঙ্গে, যার পিস্তলের গুলি থেকে কথোপকথনরত জেনারেল শার্মানকে
(জন ওয়েন) রক্ষা করতে গিয়ে জেব তাকে হত্যা করতে বাধ্য হল। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত জেব
বাড়ি ফিরে দেখে শান্ত প্রকৃতির ছোটভাই চাষবাস চালাচ্ছে, কিন্তু অনেকদিন আগে প্রয়াত বাবার কবরের পাশে আরেকটি সমাধি – তার
মা ইভের! আবার প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে জেব এবার যোগ দিল গঠনমূলক কাজের রক্ষণাবেক্ষণেঃ পশ্চিম
আমেরিকার বুকের ওপর দিয়ে তৈরী হচ্ছে সুদীর্ঘ রেলপথ। কিন্তু সেই রেলপথ ব্যবহার করে হানা
দিচ্ছে শ্বেতাঙ্গ মোষ-শিকারীর দল, লাল মানুষদের অন্যতম খাদ্যের উৎসে ভাগ বসাতে। এর
জবাবে লাল মানুষরা নির্মীয়মাণ রেললাইনের ওপর দিয়ে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে ক্ষ্যাপা মোষদের
দল। দম-আটকে যাওয়া দৃশ্য! তাদের পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা যাবে অনেকে, তার মধ্যে এক শিশুর
বাবা-মা। কেঁদে-কেঁদে বাচ্চাটি ছুটে বেড়াবে রেললাইনের চারদিকে। তাই দেখে মুহ্যমান জেবকে
রেলপথ তৈরির কর্তা মাইক কিং (রিচার্ড উইডমার্ক) বলবেন, “এটা শেষ নয়, এটা নতুন জীবনের
সূচনা!” আর ঠিক সেই মুহূর্তে অসহায় শিশুটিকে বুকে তুলে নেবেন আরেক মহিলা!
জেব
অবশেষে বিয়ে করে সংসার পাতবে। সেখানে এসে পৌঁছবেন তার সেই মাসীমা লিলিথ। ছবির অন্তিম
অংশে জেবের সঙ্গে টক্কর দেবে একদল রেল-ডাকাত, চলন্ত রেলগাড়ি আক্রমণ করে। সবশেষে ভাষ্যকার
স্পেন্সার ট্রেসী বর্ণনা দেবেন আধুনিক পশ্চিম আমেরিকার, বর্তমানের দৃশ্যসহ, যা সম্ভব
করেছিল এই প্রেস্কট-রলিংসদের মতো পথিকৃৎ পরিবারসমূহ।
৬৪
সালে ‘হাটারি’তে মন কেড়েছিলেন জন ওয়েন ও দুটি গণ্ডার। এখানেও জন ওয়েন, যদিও একেবারেই
অতিথি শিল্পী হিসেবে কয়েক মিনিটের একটি দৃশ্যে, আর একপাল ক্ষ্যাপা মোষ! ছোট পিসেমশাই
বললেন, “তা এখন অবধি তোমার সবচেয়ে ভালো-লাগা ছবি তো ‘হাটারি’ই?” ছিটকে উঠে উত্তর দিলাম,
“আরে দূর! কোথায় লাগে ‘হাটারি’ এর কাছে!” How the West was Won বড় পর্দায় আরও ২ বার
দেখব। প্রথমবার সঙ্গে ছিলেন দাদা। ৭০-এর দশকে ঐ জ্যোতিতেই ছবিটি পুনর্মুক্তি পায়, দেখি
বাবা, মা, আর এক খুড়তুতো দাদাকে নিয়ে। সবাইয়েরই খুব ভাল লাগে। কয়েক বছর পরে আবার মিনার্ভায়
(পরে ‘চ্যাপলিন’) ছবিটি এলে বাবাই আমাকে আর মা’কে নিয়ে আবার যান। তবে মিনার্ভায় ছিল
৩৫ মিমির ‘সিনেমাস্কোপ’ প্রোজেকশান।
জ্যোতিতে
এরপর মূলত ৭০ মিমির ইংরেজী ছবিই দেখেছি। ১৯৬৫/৬৬-তে ডেভিড লীনের Lawrence of
Arabia (১৯৬২), সঙ্গে বাবা , মা, আর দাদা (দাদা ইতিমধ্যে বোধহয় ছবিটি একবার বন্ধুদের
সঙ্গে দেখে নিয়েছিলেন)। প্রথম মহাযুদ্ধের সময়কালের এক কিংবদন্তী চরিত্রকে নিয়ে ছবি,
তবে ঐ ৮/৯ বছর বয়সে যুদ্ধের রূঢ় নৃশংসতা নিতে পারিনি, ছবি শেষের দিকে এগোচ্ছে বুঝে
মনে-মনে স্বস্তি উপলব্ধি করেছিলাম। এরপর ১৯৬৭ মধ্যযুগের জার্মান মহাকাব্য
Nibelungenlied অবলম্বনে Whom the Gods wish to Destroy (ছবিটি ২ পর্যায়ে জার্মান ভাষায়
১৯৬৬-৬৭-তে তৈরী হয়ে ইংরেজীতে কিছুটা সংক্ষেপিত করে ‘ডাব’ করা হয়)। ড্রাগন-বধকারী মহাবীর
সীগফ্রীডের কীর্তি, এবং তারপর তাঁর বিধবা স্ত্রী
ক্রীমহীল্ডের স্বামীর হত্যাকারী এবং ক্রীমহীল্ডের ভাই, বার্গান্ডির রাজা গুন্থেরের
অনুগত হাগেনের ওপর নির্মম প্রতিশোধের বিয়োগান্ত গাথা, যে প্রতিহিংসার আগুন থেকে রক্ষা
পান না ক্রীমহীল্ডের ভাইও! উত্তর ইউরোপের পৌরাণিক চরিত্রগুলির পাশাপাশি ক্রীমহীল্ডের
দ্বিতীয় স্বামীর চরিত্রে আছেন ইতিহাসের অ্যাটিলা, হূনদের রাজা। ছবিটি দেখতে আমার সঙ্গে
পাঠানো হয়েছিল বাড়ির অবাঙালী কাজের লোককে।
১৯৬৮-তে
পুনর্মুক্তি পায় ১৯৫৭ সালের The Bridge on the River Kwai। জ্যোতিতে সপরিবারে যাওয়া
হলো। চমকে উঠে দেখলাম যে পর্দা আর দু-দিকে ভাগ হয়ে সরছে না, মেট্রোর মতো সবটাই ওপরে
উঠে যাচ্ছে। ছবিটি তো একেবারে সীটের ধারে এগিয়ে বসে দেখার মতো। স্যর অ্যালেক গিনেসের
অভিনয় প্রশংসার অনেক ঊর্দ্ধে। তাঁর কর্নেল নিকলসন এবং তাঁর অধীনস্থ সৈন্যদের পরিশ্রমে
গড়ে ওঠা সেতুটি, মনে-প্রাণে চেয়েছিলাম, মিত্রপক্ষের সৈন্যরা যেন ভাঙতে না পারে!
১৯৬৯-এ
নীল আর্মস্ট্রং ও এডউইন অ্যাল্ড্রিন অ্যাপোলো ১১-য় পাড়ি দিয়ে চাঁদের মাটিতে পা রাখার
কয়েকদিনের মধ্যেই জ্যোতিতে দেখি দুর্বোধ্য কিন্তু পর্দা থেকে চোখ ফেরাতে না দেওয়া
2001: A Space Odyssey। ভিন-গ্রহের মানুষ দেখার আশা কিন্তু মেটেনি! সে সাধ পূরণ করলো
ঐ একই বছরে পূর্ণ সিনেমা! রবিবার সকালে নিয়ে এল ১৯৬৪ সালের ছবি, এইচ জি ওয়েলসের উপন্যাস
অবলম্বনে First Men in the Moon। বাবা সঙ্গে গিয়েছিলাম, চমৎকৃত হয়েছিলাম।
Dynamation – Miracle of the Screen-এ তোলা এই ছবিতে শুধু চাঁদের মানুষই দেখলাম না,
ছিল প্রকাণ্ড শুঁয়োপোকা!
স্পিলবার্গ
একাধিকবার গ্রহান্তরের জীবদের সঙ্গে মানুষের সৌহার্দের গল্প চিত্রায়িত করেছেন। এর বিপরীত
ধারার গল্প, যা হয়তো শুরু হয় ঔপন্যাসিক এইচ জি ওয়েলসের The War of the Worlds (১৮৯৭)-এ
মঙ্গল গ্রহের বাসিন্দাদের পৃথিবী-আক্রমণ দিয়ে, দেখলাম ঐ জ্যোতিতে, ১৯৮৯ সালের
Alien-এ। মহাশূন্যে যাত্রা করতে-করতে মহাকাশযান ‘নস্ট্রোমো’ অবতরণ করে একটি উপগ্রহে।
এখানে এক পরক মহাকাশযানের মধ্যে তারা পায় পরপর ডিম্বাকৃতি বস্তু। এই ডিম থেকেই তাদের
ওপর আক্রমণ শুরু করে এক হিংস্র জীব, যার পরবর্তীকালে নামকরণ হয়েছে Xenomorph। হাড়-হিম
করা, দম-বন্ধ করা ছবি, যার পোস্টারে লেখা ছিলঃ ‘মহাশূন্যে কেউ তোমার আর্তনাদ শুনতে
পাবে না!’
এই
ছবির আগেই আরেকটি কল্পবিজ্ঞান কাহিনীচিত্রের ট্রেলর দেখানো হয়েছিলঃ ডিজনি সংস্থার
The Black Hole (১৯৭৯)। সেটিও যথাসময়ে জ্যোতিতে মুক্তি পায়, এবং মা আর আমি, আগের দুটি
কল্পবিজ্ঞান ছবির মতো সেটিও দেখি। ছবির সবচেয়ে বড় চমক কাহিনীর শীর্ষবিন্দুতে মহাকাশযানে
করে মূল চরিত্রের কয়েকজনের কৃষ্ণগহ্বর অতিক্রম করে এক শ্বেতগহ্বর দিয়ে কোন এক নতুন
বিশ্বে বেরিয়ে আসা। অভিনয়ে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন Psycho-(কু?)খ্যাত অ্যান্টনি পার্কিন্স!
৭০
মিমির বিদেশী ছবি জ্যোতিতে আর একটিই দেখেছি বলে মনে পড়ছে। স্নাত্তকোত্তর শ্রেণীতে পড়ার
সময় ১৯৭৯/৮০ সালে অধ্যাপক জ্যোতি ভট্টাচার্যের কথা শুনে – তিনি শেক্সপীয়রের ‘রাজা লিয়ার’
পড়াতেন – রাশিয়ান ভাষায় ‘ডাক্তার জিভাগো’-খ্যাত বরিস প্যাস্টারন্যাকের অনুবাদ-আধারিত
কোজিন্টসেভ পরিচালিত ১৯৭১ সালে তৈরী King Lear। এ ছিল আক্ষরিক অর্থে ‘জ্যোতির নির্দেশে
জ্যোতির্গমন’! নিজেকে কখনই চলচ্চিত্রের ‘বোদ্ধা’ দর্শকদের দলে ফেলিনি, তাই বলতে দ্বিধা
নেই যে নমস্য অধ্যাপকের প্রশংসা সত্বেও আমি আজও মনে করি যে শেক্সপীয়রের সবচেয়ে মর্মান্তিক
বিয়োগান্ত নাটক কলেজ স্ট্রীটের শ্রেণীকক্ষে যেভাবে তিনি জীবন্ত করে তুলতেন, উক্ত ছবি,
আমার ক্ষেত্রে, তা করতে পারেনি!
জ্যোতিতে
আর যেসব বিদেশী ছবি দেখেছি, সবই ৩৫ মিমির। সত্তর দশকের গোড়ায় দাদা এবং হবু-বৌদির সঙ্গে
দেখি লরেল-হার্ডির দমফাটা হাসির ছবি, ১৯৩৩ সালের Sons of the Desert, ও তার সঙ্গে ঐ
জুটিরই স্বল্প-দৈর্ঘের Another Fine Mess (১৯৩০)। মা’র সঙ্গে দেখেছি কবীর বেদী, রডি
ম্যাকডাওয়েল, পীটার ইউস্টিনভ, ও টেরেন্স স্ট্যাম্প অভিনীত রূপকথা The Thief of
Baghdad (১৯৭৮)। আর সবশেষে, ১৯৮৮ সালে বিদেশ থেকে ফিরে একদিন ধর্মতলা অঞ্চলে ঘুরতে-ঘুরতে
দেখা হয়ে গেল বয়ঃজ্যেষ্ঠা এক ইংরেজীর অধ্যাপিকার সঙ্গে। তাঁকে রাজী করালাম আমার সঙ্গে
জ্যোতিতে ঢুকে জন মাল্কোভিচ, মিশেল ফেইফার, ও গ্লেন ক্লোজ অভিনীত ১৯৮৮ সালের
Dangerous Liaisons ছবিটি দেখতে। এটি ১৭৮২ সালে Pierre
Choderlos de Laclos রচিত ফরাসী উপন্যাস থেকে ১৯৮৫ সালের ক্রিস্টোফার হ্যাম্পটন-কৃত
নাট্যরূপের চলচ্চিত্রায়ণ। বিলেতে থাকাকালীন এর নাট্যাভিনয়ের টিকিট পাওয়া ছিল দুষ্কর।
অন্তর্জালে জ্যোতির ছবি খুঁজতে গিয়ে দেখি সিনেমা হলটি নাকি পুড়ে
ছাই হয়ে গেছে। একি কলকাতার জ্যোতি না অন্য কোন শহরে ঐ নামের কোন প্রেক্ষাগৃহ? চন্দননগরেই
তো এককালে ‘জ্যোতি’ নামের সিনেমা হল ছিল!
(ক্রমশ)
[2] By Source, Fair use,
https://en.wikipedia.org/w/index.php?curid=59481381
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন