কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / প্রথম সংখ্যা / ১২১

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / প্রথম সংখ্যা / ১২১

সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪

কাজল সেন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৬


উত্তরাধিকার

 

শহর থেকে একটু দূরে ন্যাশন্যাল হাইওয়ের ধারে বেশ কিছুটা জমি অনেকদিন আগে কিনে রেখেছিলেন শ্যামানন্দবাবু। তখনও অবশ্য রাস্তাটা ন্যাশনাল হাইওয়ের আওতায় আসেনি, রাস্তার গুরুত্বও বিশেষ ছিল না। দূর পাল্লার গাড়ি তেমন যাওয়া আসা করত না। তাই শ্যামানন্দবাবু কী ভেবে জায়গাটা কিনে রেখেছিলেন, তা তাঁর ছেলে রামানন্দবাবু প্রথমটা ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি। তবে তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, রাস্তাটার মেরামতি শুরু হয়েছে, নতুন করে পিচ ঢেলে চওড়া করা হচ্ছে।

যখন এই রাস্তার সংস্কার করে তাকে ন্যাশনাল হাইওয়ের মর্যাদা দেওয়া হলো, তার অনেক আগেই শ্যামানন্দবাবু পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। রামানন্দবাবু জীবিত থাকলেও বয়স অনেকটা গড়িয়ে গেছে। তাই ঐ জমিটা নিয়ে তিনি আগেও যেমন কোনো চিন্তাভাবনা করেননি, তেমনি পরেও কিছু ভাবতে পারেননি। ভাবনাটা প্রথম এসেছিল তাঁর ছেলে নন্দলালের মাথায়। নন্দলাল শিল্পশহরেই একটি কোম্পানিতে চাকরি করত। উপার্জন মোটামুটি ছিল। নন্দলাল  ভেবে দেখল, রাস্তার গুরুত্ব যেভাবে বেড়ে গেছে, তেমনি তার ধারেকাছের জমির গুরুত্বও ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। সুতরাং এই জমিকে যদি কাজে লাগানো যায়, তাহলে আখেরে লাভই হবে। আর ঠিক এই প্রাথমিক ভাবনাটা একদিন শেয়ার করল তার ছেলেবেলার বন্ধু অনিমেষের কাছে। শুধু ছেলেবেলার বন্ধুই নয়, তার সুখ দুঃখেরও সঙ্গী। অনিমেষ অবশ্য চাকরি নয়, বরং সিভিল কন্ট্রাকটারি করত। নন্দলাল বোঝালো, দেখ অনিমেষ, আমাদের শহরে বাইরে থেকে অনেক  মানুষ কাজেও যেমন আসে, তেমনি বেড়াতেও আসে। তাদের থাকার জন্য শহরে প্রচুর হোটেল ও লজ আছে ঠিকই। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ শহরের কোলাহলে থাকতে পছন্দ করে না। তারা নিরিবিলিতে থাকার জায়গা খোঁজে। তাই  আমরা যদি শহর থেকে একটু দূরে থাকার মতো একটা লজ বা রিসর্ট তৈরি করতে পারি, তাহলে তা খুব পছন্দ হবে তাদের। আইডিয়াটা শুনে ভালো লাগলো অনিমেষের। বলল, নন্দ, তোর প্ল্যানটা কিন্তু দারুণ। কিন্তু জমি তো কিনতে হবে! নন্দলাল বলল, জমির জন্য তোকে ভাবতে হবে না। জমি আমার ঠাকুরদা রেখে গেছেন। দেখ অনিমেষ, আমার কাছে কিন্তু টাকা নেই রিসর্ট তৈরি করার। আমরা ব্যাংক-লোনের জন্য অ্যাপ্লাই করতে পারি। কিন্তু বাকি টাকাটা তোকে ইনভেস্ট করতে হবে। তুই বিজনেসে আশাকরি এরমধ্যে ভালো টাকাই সঞ্চয় করেছিস। আমার জমি, তোর ইনভেস্টমেন্ট আর ব্যাংক—লোন, চল কাজটা আমরা শুরু করি।

সত্যি সত্যিই বছর কয়েকের মধ্যে ন্যাশনাল হাইওয়ের ধারে একটা রিসর্ট খুলে ফেলল নন্দলাল আর অনিমেষ। দলিলে দুই বন্ধুর অংশীদারী থাকল ফিফটি-ফিফটি। নন্দলালের বাবা রামানন্দবাবু তখনও বেঁচে ছিলেন। তিনি তাঁর বাবা শ্যামানন্দবাবুর কথা ভেবে খুব বিষণ্ণ হয়ে পড়তেন। বাবা আর দেখে যেতে পারেননি, একদা তাঁরই কেনা জমি  আজ কী ফসল উৎপাদন করছে। রামানন্দবাবু ছেলে ও ছেলের বন্ধুর এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত। একইসঙ্গে আর একটি আশঙ্কায় তিনি উৎকণ্ঠিত, নন্দলাল আর অনিনেষ দুজনেরই বয়স প্রায় পঞ্চাশ, অথচ দুজনেই এখনও সন্তানহীন। তাহলে কার জন্য এই জমি, কার জন্যই বা এই নির্মাণ!


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন