ধারাবাহিক উপন্যাস
দ্য ক্লাউড
(দ্বিতীয়
পর্ব)
কোথায় যেন গান হচ্ছে। সে গানের
কথাগুলো মানুষের জন্য মানুষের কথা। যেমন, 'ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো, দীপালিকার জ্বালাও আলো।
জ্বালাও আলো, আপন আলো সাজাও আলোয় ধরিত্রীরে'।
নিমচাঁদ এখন একটা কাটা ঘুড়ি হয়ে
দেশের জাতীয় পতাকায় আটকে আছে। দেহ ছাড়ার পরে নিজেকে তার অসম্ভব হালকা মনে হচ্ছে।
গানের কথাগুলো তার বাতাসের শরীরে
ঢুকে গেলো। এখন নিমচাঁদ নিজেই আগুন হয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। কনিষ্ঠ পুত্র অভিজিৎ
মুম্বাই থেকে ফ্লাইটে রওনা হয়েছে যে, সেটা নিমচাঁদ-এর বাড়ির ও প্রতিবেশীদের কথোপকথন
থেকে সে সব বুঝতে পারছে। সে তো এখন বাতাস ছাড়া আর কিছুই নয়! আর, এই বাতাস কেটে কেটেই
মুম্বাই থেকে আকাশপথে ছেলে আসছে তার বাবার
অন্তেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে।
সন্তান বড় আদরের। নিমচাঁদ ভীষণভাবে পতাকায় আটকে থাকা ঘূর্ণিঝড়ের মতো একটি ঝাপটা বাতাস। সে সুনীল আকাশ সংলগ্ন অফুরন্ত বাতাস কেটে কেটে মুম্বাই থেকে আগত তার আদরের অতি প্রিয় ছোট পুত্র অভিজিৎকে ছুঁতে চাইছে।
নিমচাঁদ হাত ছোঁড়াছুড়ি করছে। কিন্তু
পারছে না। ভেতরটা নিসপিস করছে।
কাছে পিঠেই বোধহয় বিমানবন্দর। কিছুক্ষণ
পরপরই এক-একটা বিমান অবতরণের দৃশ্য সে দেখছে, আর মুখ দিয়ে বলার চেষ্টা করছে - অভিজিৎ,
বাবা আমার, আমি আটকে গেছি রে দেশের জাতীয় পতাকায়!
চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেলো। সম্ভবত শেষ হয়ে গেলো একটি দিন। পাখিদের নীড়ে ফেরার সময়, ঠিক এইসময়-ই। পাখিদের যে ঠোঁটে কেঁচো, কেন্নো বাসায় থাকা আদরের ছানাদের জন্য, সে ঠোঁটের আগাতেই তাদেরই জন্য চুম্বনস্নেহ। কিন্তু নিমচাঁদ দাগার অবস্থান যে এখন অন্তরীক্ষে! অর্থাৎ শূন্য একটা স্থানে। সেই স্থানিকতায় অবস্থিত তার পরিত্যক্ত শরীরের সমস্ত ঠিকানার একদা আবাসভূমি রাষ্ট্র নামক একটি অদ্ভুত স্টোরির জাতীয় পতাকায় লটকে আছে সে।
রাষ্ট্রের গল্পের মোটা মোটা দাগে ভালো-মন্দ সৎ-অসৎ এমন অনেক চরিত্র আছে, যাদের এতদিন নিমচাঁদ দেখতেই পায়নি। কেননা, এক কুইন্টাল সরিষায় কতোটা শিয়ালকাঁটা গাছের বীজ দিলে শতকরা একশো ভাগই লাভ হবে, সেটা নিয়েই সে এতকাল ধরে ব্যস্ত ছিলো। ফলে, সময় তাকে ফেলে আগে আগে দৌঁড়েছে। সময় নির্দেশক কাঁটা, যেন ঘড়ির হাত। যে হাত নিমচাঁদকে ইশারায় ডেকে কতবার বলেছে, ওরে থাম! এমন রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করিস না!
(ক্রমশঃ)
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন