জিসেই
জিসেই
অর্থ জাপানি ‘মৃত্যু-কবিতা’। এই কবিতার উৎস জেন বৌদ্ধধর্মে। জেন সন্ন্যাসীরা মৃত্যু
সমাসন্ন অনুভব করলে তাঁদের ইচ্ছাপত্রের সঙ্গে
একটি কবিতাও লিখতেন। ইচ্ছাপত্র বিষয়-সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে লিখিত। আর জিসেই উত্তরাধিকারদের
উদ্দেশ্যে লিখিত কিছু নীতি পালনের নির্দেশ। এই কবিতায় মধ্যে অন্তর্নিহিত থাকে মৃত্যু
সম্পর্কে এক অন্তর্দৃষ্টি। জাপানি সংস্কৃতিতে মৃত্যু এক পৃথক মাত্রা পায়। এই ঐতিহ্য
কিছু চিনা এবং কোরিয় সংস্কৃতিতেও লক্ষ্য করা যায়। বেশির ভাগ জিসেই কবিতা তানকা বা হাইকু
রীতিতে লিখিত। আমি প্রথমে জেন সন্ন্যাসীদের লিখিত জিসেই-এর অনুবাদ করে পরিবেশন করবো
(ইংরেজি কবিতা থেকে)।
প্রত্যেক কবিতার উপরে থাকবে জেন সন্ন্যাসীর
নাম। তারপর কবিতার শিরোনাম।
১)
দাইগি সোচিকু
[৮০ বছর বয়সে ১৬৬৯ সালে মারা যান।]
দাইরিন
সোতো
সারা জীবন তরবারি শানিয়েছি
আর এখন মৃত্যুর মুখোমুখি
আমি খাপ থেকে খুলি
তরবারির ফলা ভাঙা
হায়!
২)
দোকিও এতান
[৮০ বছর বয়সে ১৭২১ সালে মারা যান।]
শিরোনামহীন
এখানে মৃত্যুছায়ায় বড় কঠিন
অন্তিম শব্দোচ্চারণ
তাই শুধু বলি,
“কিছু না বলে”
নাধিকন্তু
নাধিকন্তু।
৩)
ইনগো
[৭২ বছর বয়সে ১২১৮ সালে মারা যান।]
তিয়াত্তর বছর
আগুন থেকে জল ছেঁচেছি-
এখন আমি এক ক্ষুদ্র ছারপোকা
আমার দেহের সামান্য ধাক্কায়
পৃথিবী ধ্বংস করি।
৪)
কোহো কেনিচি
[৭৬ বছর বয়সে ১৩১৬ সালে মারা যান।]
উপবিষ্ট বা দণ্ডায়মান চলে যাবো - সে
সমান
রেখে যাবো শুধু
এক স্তুপ অস্থি
মহাশূন্যে আবর্তিত হয়ে উড্ডীন হই
আর বজ্রের গর্জনে ফিরে আসি
সমুদ্রে
হাইকু
মৃত্যুকবিতা
[হাইকু রীতি বজায় রাখার চেষ্টা করেছি।]
৫)
আমানো হাচিরো
[৩৮ বছর বয়সে ১৮৬৮ সালে মারা যান।]
তড়িতের ঝিলিক
শুধু উত্তরের আকাশে
মেঘাচ্ছন্ন বরষা
৬)
আসেই
[১৭৫২ সালে মারা যান।]
ফুলে ঢাকা ঘাসঃ
প্রায় অদৃশ্য আর শুষ্ক
নাম আর সবকিছু
৭)
আতসুজিন
[৭৯ বছর বয়সে ১৮৩৬ সালে মারা যান।]
মাটি আর ধাতু...
আমার নিঃশ্বাস থামলেও
কাল-ঋতু চলবে
৮)
বাইকা
[সত্তর বছর বয়সে ১৮৪৩ সালে মারা যান।]
মানব, ধূম দেখে
ভেবো না ওরা প্রান্তর
জ্বালিয়ে দিচ্ছে
৯)
বাইনেন
[৮০ বছর বয়সে ১৯০৫ সালে মারা যান।]
আমার জীবনে
বসন্ত এসে গেছে
হে মানব, বিদায়!
১০)
বাইসেকি
[৬৭ বছর বয়সে ১৭১৬ সালে মারা যান।]
পশ্চিমা পথে
যেতে যেতে সবাই চায়
কুসুমের বাগান
জীবনের পথে অনন্তের সাথে
উত্তরমুছুনথাকে হাসি আনন্দ
আর থাকে কত ব্যথা।
জাগ্রত বিবেক
উত্তরমুছুনজীবনের পথে অনন্তের সাথে
থাকে হাসি আনন্দ
আর থাকে কত ব্যথা।