কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩

শুক্তি ঘোষ

 

কবিতার কালিমাটি ১২৭


সত্য হিরণ্ময়

 

কোনদিন

মানুষ ছিলাম না আমি,

শুধু ব্যর্থ কথার বুদ্বুদ --

লক্ষ্যহীন হাসির উৎসার;

শুষ্ক মরু, সঙ্গিহীন --

কোথাও কি ঘর আছে, আশ্রয়, নীড়?

যাযাবর জীবনের বাঁকে

কোথাও কি পথ আছে, গন্তব্য অতএব,

কোন এক লক্ষ্য অবিচল?

উত্তর মেলে না --

পায়ে পায়ে চলা পথ

উদাসী বালিতে

বারবার ঢেকে ঢেকে যায়,

দিশাহীন, নশ্বর,

আমার ছায়ার মত একান্ত অলীক --

চলতে চলতে পথ ছোট হতে হতে

অবশেষে শূন্য হয়ে যায়;

অলাতচক্রে শুধু

বৃত্তাকারে ঘুরে ঘুরে আসি,

চলা আর থামা

একাকার হয়ে যায়

প্রত্যন্ত প্রান্তর ছুঁয়ে।

নক্ষত্রপুঞ্জ জুড়ে

মৃত সব মানুষেরা

কতদিন বাঁচে?

কেন বাঁচে?

কেবল অভ্যাসবশে,

মুদ্রাদোষে,

ভ্রূযুগের ভাঁজে

নির্বাক প্রশ্নচিহ্ন হয়ে?

উত্তর মেলে না --

স্ফটিক আকাশ জুড়ে

শুধু এক বেপথু বিশ্বাস

আমি আছি,

আমি আছি,

আমি আছি --

যার কোন স্বপ্ন নেই, পরিচয়, পরিণতি নেই,

নামহীন, নিরর্থক

একফোঁটা অস্তিত্ব আমার --

আজও আছি

এইটুকু

সত্য হিরণ্ময়!

 

সাধ

 

ভারি ইচ্ছে করছে

পিছু ফিরে একবার পুরনো দিনগুলোকে

ছুঁয়ে আসতে,

যখন সময় ছিল বুনো ফুলের গন্ধমাখা,

রাত ছিল কোজাগর!

ভারি ইচ্ছে করছে

ছুটে গিয়ে জীবনের বুড়ি

ছুঁয়ে আসি --

দেখে আসি কোথায় আমার একান্ত নীড়,

কোথায় আমার প্রাপ্তির সীমা।

এখন সময় বড় অর্থহীন --

কালনিদ্রায় মগ্ন দিন

ভুলে গেছে যুদ্ধের প্রস্তুতি;

রক্তে কেন বাজে না মাদল?

চোখের তারায় কেন জ্বলে না উৎসব?

কেন এই জীবনের তীব্র কটু স্বাদ

জাগায় না সঘন বিস্ময়?

আবার সঞ্চয় করো তিক্ত বারুদ,

বিন্দু বিন্দু হতাশার ঝরে পড়া মুহূর্তেরা --

পরাগরেণুর মত এলোমেলো সময়ের কণা,

সেখানে ছোঁয়াও প্রাণ,

ফুটুক ফুটুক ফের আগুনের ফুল!

 

অধমর্ণ

 

দণ্ডপাণি, বিধাতা তোমায় জানি,

দত্ততাপহারক, সময় তোমার নাম,

আরো কী কাড়বে? কেড়েছ জীবনজ্যোতি,

ক্ষয় করে গেছ বিস্ময়, বিশ্বাস।

ছিল বুঝি কিছু প্রিয় নাম আশেপাশে,

ছিল আনন্দ, আশাও দু’এক কুচি,

তাও তো কেড়েছ, শূন্য করেছ জড়ো --

খসে খসে গেছে সমস্ত সঞ্চয়।

 

তবুও তোমার অসহ ঋণের ভার

আজও কি গেল না? একক, নিরুদ্দেশ –

আর কী বা আছে? আরো কত চাই বলো?

কেড়ে নিতে চাও শেষ সম্বলটুকু!

 

আমার আঁচলে ঢেলেছ অগাধ গ্লানি,

সকল গর্ব করেছ ধূলিসাৎ --

সেই লজ্জায় হেঁটমুখ হয়ে থাকি,

নিজের ছায়াও লুকাই বারংবার।

ঋণশোধ তাও হ’ল না তো দেখি আজও,

আরো বুঝি কিছু রয়ে গেছে তবু দেয়?

এতটা মূল্য দিয়েছ আমায় তুমি?

এ ভালোবাসায় সত্যি অবাক্‌ মানি!

 

প্রত্যাশা কিছু রাখিনি তোমার কাছে,

তুমি মহাকাল, তুমি জানো পরিণাম;

গ্লানিহীন এক মৃত্যু কেবল দিও,

ছেঁড়াখোঁড়া এই জীবন থাক আমার।

 

 

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন