কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩

অভিজিৎ মিত্র

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৭


সম্পর্ক

- মা, তুমি কি বাবাকে ছেড়ে দিয়ে সমীরকাকুকে বিয়ে করবে?

ছেলের প্রশ্নের ধরনে বেশ আমোদ পেলাম। ক্লাস টেনের টেস্ট দিচ্ছে। এখন বেশ চালাক চতুর হয়েছে। মাথায় আমাকে ছাড়িয়ে আরো তিন ইঞ্চি। ওর মাথায় হাত বুলোলাম।

- কেন?

- তুমি চলে গেলে আমিও এখানে থাকব না। বাবা আমায় ঘেন্না করে, আমি জানি। সেদিন মদ খেয়ে সবার সামনে আমায় তোমায় যেভাবে অপমান করল!

- দ্যাখ্‌ শুক, এখানে আমার কোন বায়াস নেই। কোন থিয়োরী নেই, কোন লেমা নেই। একজন স্বাধীন মানুষ হিসেবে আমি যেখানে ফ্রিডম পাব, সন্মান পাব, ভালবাসা পাব, সেখানেই তো থাকতে চাইব, তাই না?

- তাহলে আমি কোথায় থাকব? আমায় কি বোর্ডিং পাঠিয়ে দেবে?

- এখন এসব না ভেবে মনোযোগ দিয়ে টেস্ট দে।

ছেলে বাথরুম গেল। আমি ব্যালকনিতে এসে বসলাম। এ বাড়িতে কত বছর হল? ষোল? সন্মান আর ভালবাসা ছাড়া ষোল বছর। সমীর আমার বিয়ে করবে বলে কথা দিয়েছে। অবশ্য ওর-ও বৌ নিয়ে ঝামেলা চলছে। ডিভোর্স পাবে কিনা সেটা সময় বলবে। মাঝে মাঝে মনে হয়, এইরকম সম্পর্কের একটা কনস্ট্রাকশন থাকে, খানিকটা ওরিগামির মত। আমি কি আবার সেই রকম কোন স্ট্রাকচারে সত্যিই যেতে চাই? যাওয়া উচিৎ হবে?

বাথরুমে যাওয়া দরকার। ভেতরে এসে দরজায় ছিটকিনি তুললাম। একটা চেনা গন্ধ। অনেকটা কষা শশাবীজের মত। ম ম করছে। একটু আগে তো শুক বাথরুমে ঢুকেছিল। তাহলে ও আজকাল? মনে পড়ল, কয়েকদিন আগে শুকের বইয়ের ভেতরে সানি লিওনির নগ্ন ছবি দেখেছিলাম। এবার দুই দুই চার হল। যাক, শুক তাহলে বড় হয়ে গেল।

আমার থেকে বয়সে ছোট পরী। আমি আর পরী মাঝে মাঝেই আড্ডা দিই, স্কুটিতে ঘুরে বেড়াই, বেশ কয়েক জায়গায় একসঙ্গে বেড়াতেও গেছি। সেখানে গিয়ে ও বাথরুমে মাস্টারবেট করে, সেটাও বুঝেছি। আমাকে তো স্কুলের এক সহকর্মী একবার জিজ্ঞেস করেই ফেলেছিল, তোমার আর পরীর এই যে এত মাখামাখি, তোমরা কি লেসবি? হেসে ফেলেছিলাম। মানুষ এত সহজে কনক্লুশন টেনে ফেলতে পারে, ভাবা যায় না।

ছুটির দিন। পরী দুপুরে ফোন করেছিল। বিকেলে চা আর আড্ডার জন্যদুপুরেও বলল, আমি ফ্রি সোল। আজকাল ওর কথা শুনে মাঝে মাঝে ভাবি, আমারও কি আর নতুন করে সমীরের সঙ্গে কোন সম্পর্কে জড়ানোর দরকার আছে? নাকি আমিও পরীর মত ওর সঙ্গে ভেসে যেতে পারি?

বিকেল পাঁচটা বাজল। এবার বেরোতে হবে। বাড়ির সবাই ঘুমোচ্ছে। ছেলেকে কোচিংয়ে নামিয়ে এসে স্টেশনপাড়ায় চায়ের দোকানে স্কুটি পার্ক করলাম। শহরের দক্ষিণ দিকে সমীর ওয়েট করছে। উত্তর দিকে পরী। করুক। আগে জমিয়ে চা খাই। নিজের সঙ্গে নিজে।

- এ ভাই, একটা উইলস্‌ ফ্লেক দেখি!   

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন