কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩

কাজল সেন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৭


বদলা

রাত গড়াতে গড়াতে প্রায় ভোর হয়ে এলো। একটু পরেই অন্ধকার ফিকে হয়ে আবছা আলো আঁধারিতে  অস্পষ্ট দৃশ্যমান হবে জানালার বাইরে পাঁচিলের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা একটা লেবুগাছ আর একটা জবাগাছ। চুমকি এখনও বিছানায় ঘুমিয়ে আছে উপুড় হয়ে। প্রথম রাতে সেই যে শরীরের সব আবরণ সরিয়েছিল, তারপর তো আর সুযোগই হয়নি আবরণের আড়ালে যাবার। কিন্তু তখন আমাদের চারপাশের  পৃথিবীটা ছিল অন্ধকারে ঢাকা। ঘরের ভেতরে জ্বলছিল সবথেকে কম পাওয়ারের একটা সবুজ আলোর বাল্ব। সেই আলোয় ঘরটা যতটা আলোকিত হয়েছিল, তার থেকে বেশি ঘনিয়ে উঠেছিল আবছায়া। আমার অবশ্য রাতে আলো জ্বেলে ঘুমনোর অভ্যেস একেবারেই নেই। কিন্তু যেদিন চুমকি আমার সঙ্গে শোয়, সেদিন এই সবুজ আলোর বাল্ব জ্বেলে রাখতেই হয়। নিরেট অন্ধকারে শরীরী খেলায় আমার উত্তেজনা জাগে না। অদৃশ্য একটা অবয়বকে অন্ধের মতো আঁকড়ে ধরতে কেমন যেন ভয় ভয় করে। মনে হয়, কোনো শবদেহ স্পর্শ করছি। একটা শীতের অনুভূতি বয়ে যায় সারাটা শরীর বেয়ে।

না, দেরি হয়ে যাচ্ছে। একটু পরেই পুরোপুরি ভোর হয়ে যাবে। সেই ভোরের আলোয় আমার বিছানা ছেড়ে উঠে চলে যেতে যেতে কারও নজরে পড়ে যেতে পারে। অথচ এমন একটা ভালোলাগা ও তৃপ্তির আলস্য নিয়ে উপুর হয়ে ঘুমিয়ে আছে যে, আমার খুব মায়া হচ্ছে, সেই ঘুমে ব্যঘাত ঘটাতে। অন্যান্য রাতেও কখনও কখনও এই বিপত্তি ঘটেছে। জানালার বাইরের অন্ধকার তরল হয়ে আসার মুহূর্তেই আমি ঘুমন্ত  চুমকিকে রীতিমতো নাড়া দিয়ে, ধাক্কা মেরে বিছানা থেকে উঠিয়ে দিই। আসলে শরীরী খেলায় চুমকি এতটাই তৎপর হয়ে ওঠে যে, খেলাশেষে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে। গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। কিন্তু ঘুম থেকে দেরি করে উঠলেই সবাই জেনে যাবে যে, চুমকি আমার সঙ্গে শুয়েছিল!

চুমকির সঙ্গে আমার সম্পর্কটা বড় অদ্ভুত। প্রচলিত কোনো সম্পর্কের নিরিখে তা বিশেষিত করা যাবে না। চুমকি আমার বউ নয়, প্রেমিকা নয়, শ্যালিকা নয়, বান্ধবীও নয়। হ্যাঁ, অনেকদিন আগে, আমাদের  যোগাযোগ হয়েছিল। আমার সঙ্গে বিয়ের জন্য চুমকিকে মনোনীত করেছিল বাড়ির সবাই। আমি নির্দিষ্ট সন্ধ্যায় বরযাত্রী সহ বিয়ে করতেও গেছিলাম। কিন্তু বিয়েটা হয়নি। চুমকি পালিয়েছিল সেই সন্ধ্যায় তার প্রেমিকের হাত ধরে। জীবনে এতবড় ধাক্কা, তীব্র অপমান আমি মেনে নিতে পারিনি। জীবনে বিয়ে না করার কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু শরীরকে তো আর উপোষী রাখা যায় না! বিকল্প পথ বেছে নিতেই হয়েছিল। সেক্স-ওয়ার্কার এজেন্সির সঙ্গে চুক্তি করেছিলাম। তারাই প্রথম রাতে পাঠিয়েছিল চুমকিকে। চুমকি আমাকে চিনতে পারেনি, আমি চিনেছিলাম। তারপর থেকে শুধু চুমকিকেই আমি পাঠানোর জন্য অনুরোধ করতাম।

আসলে উদ্দেশ্য আরও একটা ছিল। সেদিনের সেই তীব্র অপমানের আমি বদলা নিতে চেয়েছিলাম।  প্রতিবার রমণের পরে প্রস্তুত হই রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত চুমকির গলা নির্মমভাবে টিপে ধরতে। আজও প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু চুমকি নিশ্চিন্তভাবে ঘুমিয়ে আছে আমার বিছানায়! আজ থাক। পরে একদিন বদলাটা নিতেই হবে!   


1 কমেন্টস্:

  1. ভালো লাগা একটা গল্প। তবে শেষ প্যারাটা আরো সংক্ষিপ্ত, টানটান হতে পারে। - সমরেন্দ্র বিশ্বাস

    উত্তরমুছুন