কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩

উপল মুখোপাধ্যায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৭


দুর্ভিক্ষ - প্রিয় আমার

আমি সেই খিদের গন্ধ পাচ্ছি। আমি সে খিদের গন্ধ পাব। আমি সেই খিদের গন্ধ পেয়েছিলাম। আমি। খিদে। গন্ধ। এ নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে কী লেখা সম্ভব? আমি কী করে লিখব যার খিদেই পায় না খেয়ে খেয়ে খেয়ে?  আমার খিদেই পায় না। তবে হাওয়া দেয়। শব্দেরা ভেসে ভেসে আসে হাওয়ায়। ইথারে ভেসে পুরনো যুগ থেকে বলা কথা। বলা আর্তনাদেরা আসে। শব্দেরা অমর। শব্দেরা অতীত। শব্দেরা বর্তমান। শব্দেরা শব্দ। শব্দেরা মৃতদের মতো কথা বলে। শব্দেরা জীবিতদের মতো কথা বলে। সে কথা আমি লিখতে লিখতে শুনতে পাচ্ছি। দেখছি মনে মনে। মনে মনেই সব দেখতে পেয়ে প্রত্যক্ষ দেখছি খিদেকে। দেখা যাচ্ছে এমন খিদে দিয়ে দিয়ে কোন শব্দ হচ্ছে না। সে জন্য তাদের ছবি বলে। সে ছবিরা এতো শক্তি ধরে যে কোন শব্দ করার দরকারই করে না। তাই হয়ে যাওয়া সব ছবিদের আমি চাই না। হয়ে যাওয়া সব শব্দদের জন্য আমি কান পেতে পেতে আছি। আমি। কান। খিদে। শব্দ। ইথারে ভেসে আসছে খুব আস্তে আস্তে খিদের শব্দ। দুর্ভিক্ষের । চার্চিলের। যুদ্ধাপরাধের। চার্চিলের যুদ্ধাপরাধের সব শব্দেরা গোপন বাঙ্কার থেকে উঠে আসছে। তারা ছেয়ে ফেলছে। চকচকে শহরমালার আলোকদের খিদেরা ঘিরে ধরে ধরে - ফ্যান চাইছে। আলোকেরা বুঝতে না পেরে সারারাত জ্বলতে থাকছে। আমি এক সুউচ্চ আলোকস্তম্ভের তলায় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে খিদেদের শব্দ শুনছিলাম। ফিসফিস ফিসফিস করছে সাম্রাজ্যের  তৈরি করা ১৯৪৩য়ের দুর্ভিক্ষের শব্দ। অনেক দূর থেকে। অনেক হাওয়া ধরে ধরে তারা আসে। তারপর আলোকস্তম্ভকে বললাম, “দরকার নেই।” সে বলল, “কাকে?” আমি বললাম, “তোমাকে। চার্চিল টার্চিলদের। আর লাগবে না।” আলোকস্তম্ভ আস্তে আস্তে নিভতে লাগল। আমি এক উদ্দেশ্যমূলক সকালে যুদ্ধাপরাধীকে শাস্তি দিয়ে এই ফিরছি।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন