কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩

অর্ক চট্টোপাধ্যায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৭


ভূজ : আয়না মধ্যান্তর

অনেককালের পুরনো সব আয়না। পারা গলে সময় হয়ে গেছে। এখন আর কিছু বিম্বিত হয় না। বিম্বন কেবল সময়ের। সময়ের পারা গলা আয়নামহল বিকেলের সোনালী আলোয় একরাশ দুঃখ নিয়ে হাজির হয় ভূমিকম্পখ্যাত ভূজ শহরে।

ঢুকতে গিয়ে বাঁকাচোরা বাড়ি খোঁজে পর্যটকের চোখ। শহরের একাংশ অনেকটাই পুনর্নির্মিত। সেখানেই কেবল অতীতের ছাপ। ভূকম্পের আর কোন ফসিল চোখে পড়ে না। যতক্ষণ না লোকটা পুরনো শহরের আয়নামহলে পৌঁছয়। অবহেলায় পড়ে থাকা ঐ আরশিনগর লোকটাকে ভূমিকম্পের সন্নিকটে নিয়ে আসে।

আয়নাগুলোর সঙ্গে আর্থকোয়েকের এমনিতে কোন সম্পর্ক নেই। অথচ ওদের দেখে লোকটার ভূজের ভূমিকম্পের কথা মনে হল। একমাত্র ওদের পারা গলা ত্বকেই  ভূমিকম্পের রেশ লেগে আছে। বাকি শহর জুড়ে ঐ ইতিহাস যেন মুছে দেওয়া হয়েছে। ভূমিকম্প থেকে ভূমিকল্প!

২০০১ সালে যখন ভূমিকম্প হয়েছিল, লোকটা তখন ছেলেমানুষ, হাইস্কুলে পড়ে। স্মৃতি তাই দুর্বল। ১৩ হাজারের বেশি মানুষ মারা পড়েছিল। গুগল করে দেখেছে সে। আর জেনেছে, পাহাড়ের ওপর বানানো মেমোরিয়াল পার্কের কথা। ঝটিকা সফরে সেখানে যাবার অবশ্য সময় পায়নি। ওর কাছে আয়নামহলই ভূজ ভূকম্পের স্মৃতিযান।

অনেককালের পুরনো সব আয়না। পারদ গলে সময় হয়ে গেছে। এখন আর কিছুই বিম্বিত হয় না। সে আয়নায় ধরা দেয় না সেজলের জীবন। লোকটা সেজলকে চিনতো না, কেবল কাগজ পড়ে তার গল্প জেনেছে। ভূমিকম্পের দিন সেজলের বয়েস ছিল ১৩ মাসের মতন। এখন ২৩, তাও পা’টা সারেনি। মা চলে গিয়েছে ভূমিকম্পে। প্রস্থেটিক ফুট  শরীরে কম্পনের অনাকাঙ্ক্ষিত স্মৃতি হয়ে বসে গেছে নাড়ি ভেদ করে।  

দিনটা ছিল ২৬ শে জানুয়ারি: প্রজাতন্ত্র দিবস! কত ঘন্টা যেন ডেব্রির ভিতর আটকা পড়েছিল ছোট্ট সেজল? শ্বাস নিতে পারছিল কী করে? তারপর পায়ের ওপর কী যেন একটা ভেঙে পড়লো! সেজলের হাতে একটা পতাকা ধরা ছিল। সে অবশ্য তখনো প্রজাতন্ত্র দিবস বুঝতো না। পতাকাটা তার মা তাকে দিয়েছিল। মা ভূজের স্কুল শিক্ষিকা  ছিলেন। সকাল সকাল স্কুল যাবার তোড়জোড় করছিলেন যখন হঠাৎ কম্পন শুরু হয়। পতাকাটা পড়ে যায় হাত থেকে! তারপর বিশেষ কিছু মনে নেই।

সন্ধ্যার সময় বাড়ির ধ্বংসাবশেষ থেকে যখন তাকে উদ্ধার করা হয়, সেজলের হাতে পতাকা নয়, ছিল আয়না ভাঙা একটুকরো কাঁচ। হাতে গেঁথে গেছিল। উজিয়ে আসছিল রক্ত। চারপাশের মাংসে হালকা কাঁপন ধরছিল।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন