কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৪ |
নীল আকাশের পাখি
বৈশালী মেট্রোস্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে সোহিনী। এখান থেকে হাইরাইজগুলো দেখা যায়।
ডিসেম্বর মাস। এখানো তেমনভাবে জাঁকিয়ে শীত পড়েনি। প্রতি বছর এসময় দিল্লিতে বেশ
কনকনে ঠান্ডা পড়ে যায়। দিল্লির বর্ডারে গাজিয়াবাদের বৈশালী। মোবাইল বের করে চারপাশের
ব্যস্তছবি কয়েকটা তুললো সে। জীবনটা ধীরে ধীরে কেমন পাল্টে যাচ্ছে! স্টেশনে মেট্রো ঢুকে পড়েছে। হঠাৎ ছেলেবেলার বন্ধু শবনম
পান্ডের সঙ্গে তার দেখা। দুজনেই পাশাপাশি বসে পড়লো। বহুকাল দেখা নেই তাদের। অবশ্য
মোবাইলে ভিডিও কলে মাঝেমধ্যে কথা হয়। এরমাঝে নানান চড়াই-উৎরাই ভেঙে যেতে যেতে কোথাও
পলি পড়েছে, আবার কোথাও ব-দ্বীপ গড়ে উঠেছে। সোহিনী হ্যাঁ, না-এর মাঝখানে কিছু একটা
বলছিল ওর সঙ্গে।
‘সোহিনী, তুই শেষপর্যন্ত পাল্টে গেলি!’
‘কী আশ্চর্য!’ সোহিনীর মুখ থেকে বেরিয়ে এল।
দিল্লির রাজীব চকে মেট্রো থামলো। নেমে পড়লো ওরা দুজন। ‘কফি খাবি তো, শবনম?’
শবনম আলতো করে হাত ছুঁয়ে বলল, ‘ক্যাফেটেরিয়ায় চল। বসি।’
কফির ধোঁয়ায় ফিলটার কফির স্বাদ দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছিল।
শবনম সোহিনীকে বেশ চাপ দিচ্ছিল। ‘সত্যি রে, ইন্দ্রের এই অসময়ে চলে যাওয়াটা মন
থেকে মেনে নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। ঘটনাটা কী ঘটেছিল, বল।’
‘ইন্দ্রের চিৎকার কানে ভেসে আসছে এখনও। সে এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য। রক্তে ভেসে যাচ্ছে
রাস্তা। নতুন গাড়িতে ইন্দ্র, সঙ্গে এক মহিলা। রোড অ্যাক্সিডেন্ট। কিভাবে এসব ঘটলো,
জানি না।’ সোহিনী কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে হাঁপাতে থাকল।
‘মহিলাটি কে? ইন্দ্র ড্রিঙ্ক করে ড্রাইভ করছিল?’
‘জানি না। বুঝতে পারিনি যে ওর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা এত ফিকে হয়ে আসছিল। খুব ভালোবাসতাম ওকে’।
‘তো, ঐ আহত মহিলাটির জন্য তুই ছুটোছুটি করছিস কেন? দিনরাত এক-করে হাসপাতাল-ঘর
করছিস কেন?’
‘বলতে পারিস, আমার বিবেক আমাকে ছোটাচ্ছে। একজন অজানা অচেনা মহিলা মৃত্যুর
সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে এখন, তার গর্ভের
সন্তানকে বাঁচাবার জন্য।’
‘কী আশ্চর্য!’ শবনম কফিমগ হাতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেল। সোহিনীর কথাগুলো কেমন
যেন ধূসর পাখি হয়ে নীল আকাশে ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছিল।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন