কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২

কাজল সেন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৪


বান্ধবী

 

বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিটের ফুটপাথ ধরে চলতে চলতে হঠাৎই আমার মনে হলো, প্যান্টের পকেট থেকে দামি মোবাইল ফোনটা হাওয়া হয়ে গেছে। মনে হতেই চমকে উঠলাম। সেকী! কখন হাওয়া হলো? কীভাবে হলো? একটু আগে  যানজটের জন্য রাস্তায় ও ফুটপাথে যে ক্যাওস তৈরি হয়েছিল, তখন কি হয়েছে? হ্যাঁ, কোনো সন্দেহ নেই, আমারই অসচেতনতায় তখনই কোনো পকেটমার সচেতনভাবে ফোনটা টুক করে তুলে নিয়েছে। এখন আমি করি কী! ফোন ছাড়া যে কোনো কাজ হবে না!

নিরুপায় আমি হতাশ হয়ে শোকে দুঃখে সেদিনের মতো সব কাজ বাকি রেখে বেহালায় নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে এলাম। ফিরে এসেই মনে পড়ল বউবাজারে মাস কয়েক আগে আমার স্কুলের বান্ধবী সুচরিতার সঙ্গে আচমকাই দেখা হয়ে গেছিল।  স্কুল ছাড়ার পর দীর্ঘদিন বাদে দেখা হতে খুব উচ্ছ্বসিত হয়েছিল সুচরিতা। চা- পকোড়া খাইয়েছিল। আর নিজের ফোন নম্বর দিয়ে বলেছিল, এই পাড়াতেই থাকি। কখনও প্রয়োজন হলে আমাকে ফোন করতে পারিস।

কথাটা মনে হতেই একটা ডায়েরির পাতায় লিখে রাখা নম্বরটা দেখে বউয়ের মোবাইল থেকে ফোন করলাম। বললাম, দেখ সুচরিতা, আমি জানি তোর কিছুই  করার নেই। কিন্তু তোরই এলাকায় ঘটনাটা ঘটেছে, আর তুই বলেছিলিস কোনো প্রয়োজন হলে ফোন করতে, তাই করলাম আর কী! যাইহোক কেমন আছিস? সেদিন দেখা হয়েছিল, খুব ভালো লেগেছিল। সুচরিতা আমার দুঃখের ইতিহাস  শুনল। তারপর বলল, আমি একটা কাজে হাওড়ায় এসেছি। বউবাজারে ফিরতে  সন্ধ্যে হয়ে যাবে। তাই এখন তোকে আমি কিছু বলতে পারছি না। তোকে কাল সকালে এই নম্বরে আমিই ফোন করব।

সুচরিতার কথা শুনে কেমন যেন খটকা লাগল। কাল সকালে আমাকে আবার   ফোন করবে কেন? ফোন করে কী বলবে? মোবাইলটা খুঁজে বের করবে নাকি? পাশেই দাঁড়িয়ে আমার বউ আমাদের কথা শুনছিল। কথা শেষ হতেই আমার মুখের দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে থেকে বলল, তোমার তো পকেটমারি হয়েছে! তোমার বান্ধবীও পকেটমার নাকি?  

-মানে? তুমি এসব কী বলছ?

-আমার তো তাই মনে হচ্ছে। যখন তোমার পকেটমারি হয়েছে, তখন সুচরিতা  বউবাজারে ছিল না, হাওড়ায় ছিল, আর তাই সন্ধ্যেবেলা ফিরে এসে খোঁজখবর নেবে কে তোমার পকেট মেরেছে। শুনলে না, সুচরিতা জানতে চাইল ঠিক কোন  জায়গায় ঘটনাটা ঘটেছে! ঐ সময় ঐ জায়গায় কে কাজ করেছে, তা এনকোয়ারি করলেই জানতে পারবে। তুমি নিশ্চিন্ত থাক, কাল তুমি তোমার মোবাইল ফেরত পেয়ে যাবে। কাল সকালে সেটাই তোমাকে জানাবে।

বউয়ের কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল পরদিন সকালে। সুচরিতা ফোন করে  বলল, তুই এখনই বি বি গাঙ্গুলী স্ট্রিটে চলে আয়। তোর বউয়ের ফোনটা সঙ্গে আনবি। এখানে পৌঁছে আমাকে ফোন করবি।

সুচরিতা আমার অপেক্ষায় ছিল। মোবাইলটা আমার হাতে তুলে দিয়ে বলল,  সাবধানে রাখিস!

-একটা প্রশ্ন করব?

-কী?

-তুইও পকেটমার?

হাসল সুচরিতা। বলল, ছিলাম। এখন ছেড়ে দিয়েছি।

-তাহলে কী করিস?

-ঘরে তোর বউ আছে। জেনে কী করবি?  

 

 


1 কমেন্টস্: