কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৪ |
মা সম্পর্কে একগুচ্ছ
দিজ
পিপল
'মারবে
নাকি বাচ্চাটাকে?’
রাবেয়ার
শাশুড়ি খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে ওঠে কলেজ-দিদিমণির বিস্ফারিত দু’চোখে চোখ রেখে।
‘পেট
যিনি দেচেন দিদি, তিনিই রাখবেন!’
মইদুলের
মোটরভ্যান তখন একটা খন্দে পড়ে, ঝাঁকুনি খেয়ে, আবার লাফিয়ে উঠে এসেছে পিচ-রাস্তায়। এ
রাস্তার পুরোটাই এরকম টালমাটাল। এই অঞ্চল থেকে
সবচেয়ে কাছের রেলস্টেশন পৌঁছতে মোটরভ্যানই ভরসা। স্কুলকলেজের স্যার-ম্যাডাম হোক বা
চাষাভুষো, সবার এক গতি। ওঁরা অবশ্য সামনের সিটে বসে পা দোলান। লোকালরা অলিখিত নিয়মে
মাঝে পা গুটিয়ে বসে, বা পিছনে। তবে মইদুল বলে, তাতে সুবিধে এই যে, ওয়াঁরা গায়ে গতরে
ভারি... পিছনে বসলে গাড়ি উল্টোনোর ভয় ছিল।
পিছনে
এককোণে পা ঝুলিয়ে বসা বোরখাটিও ভারি প্যাংলা। তার উপর, শরীর অদৃশ্য হয়ে এখন জেগে আছে
শুধু পেট।
দিদিমণিরা
আলোচনা করেন,
‘থার্ড
ট্রাইমেস্টার?’
‘হবে।
এই অবস্থায় ভ্যানে এরকম সমারসল্ট!’
পেটসর্বস্ব
রাবেয়ার পেটের খানিক উপরে বুকের মধ্যে কিছু দুরুদুরু করে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ইঞ্জেকশন
নিলে পোয়াতিকে টাকা দেয়। মোটরভ্যান ছাড়া যাবে কেমন করে সে টাকা আনতে! শীর্ণ দুটো হাত
দিয়ে সে বোরখা-ঢাকা তলপেট চেপে ধরে।
মায়ের কথা মনে পড়ে। অনেকগুলো মরা ভাইবোন বিইয়েছিল মা। বছর-দুবছরে একটা করে বিয়োতো। রাবেয়ার এই প্রথমবার।
দিদিমণি
বলেন, ‘দিজ পিপল!’
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন