কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২

সমরেন্দ্র বিশ্বাস

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৪


উল্লসিত পরীগুলো

 

আমি কি কখনো পরীগুলোর সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম? সেইসব পরীরা কখনো কখনো আকাশ থেকে নেমে আসে। মানুষ আর প্রকৃতির শরীরে ভর করে! সবাই তখন  উছলে ওঠে, হাসে, নাচে, ডানা মেলে ওড়ে। যে কোন মুহূর্তেই ওরা মিশে যেতে পারে যে কারোরই শরীরে, মনের ভেতরে, চোখে মুখে চেহারায়! সময়গুলো হয়ে ওঠে আনন্দে ভরপুর!

আদম ও ইভ যখন জ্ঞান বৃক্ষের ফল খেয়ে একজন আরেক জনের প্রতি আকর্ষিত হচ্ছিল, তক্ষুনি ওরকম দুটো পরী নিঃশব্দে ঢুকে পড়েছিল ওদের আত্মায়! জল পাথর জঙ্গলের দেশে নেমে এসেছিলো স্বর্গের জোনাকিরা! খুশীতে ঝলমল করছিল জগৎ সংসার। আশ্চর্য যাদুকরী ক্ষমতা এইসব পরীদের!

একটা জ্ঞানীলোক, অর্ধ উলঙ্গ, ভেজা শরীর, খালি পা, রাজপথ দিয়ে ছুটছিলো, তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসছিল চীৎকার – ‘ইউরেকা! ইউরেকা!’ লোকটার নাম ছিল আর্কিমিডিস। স্নান করার সময়ে কাণায় কাণায় ভরা চৌবাচ্চাটা উপচে  পড়লো। অপসারিত জলের সাথে নিজের শরীরের ভার লাঘবের সম্পর্কটা আর্কিমিডিস হঠাৎই আবিষ্কার করে ফেললো। তখনি আকাশ থেকে উড়ে এলো  উল্লসিত পরীটা! লোকটার শরীরে প্রবেশ করলো আনন্দ, মুহূর্তেই কী একটা উল্লাস তাকে পাগল বানিয়ে দিল! আর্কিমিডিসের চেতনায় প্রকাশিত হলো বাঁধভাঙ্গা খুশী!

আরেকদিন। বহুকাল আগের এক ঝুলনপূর্ণিমা! রাখালিয়া জঙ্গলে, গাছের ছায়ায় রাজপুত্র বাপ্পাদিত্য শোলাঙ্কি রাজকুমারীর হাতে হীরের বালা পরিয়ে গান্ধর্ব মতে একজন আরেকজনকে বিয়ে করে ফেললো। ওরা গাছের ডালে বেঁধে রাখা দোলনায় একসঙ্গে ঝুলে ঝুলে গান গাইলো – ‘ঝুলত ঝুলনে শ্যামর চন্দ / আজ কী আনন্দ...!’ বাঁশের বাঁশিতে মন পাগল করা সেদিনটাতেও পরীর ডানায় ভর করে নেমে এসেছিল বিস্ময়কর কিছু; বাপ্পাদিত্য আর রাজকুমারীর শরীরদুটো ভেসে গিয়েছিল আনন্দের স্বর্গলোকে!

সেদিন আমরা কয়েকজন, পার্টির একটা এনকাউন্টারের শেষে সাঁওতালদের সঙ্গে একটা সন্ধ্যা কাটিয়ে গভীর রাতে আস্তানায় ফিরছিলাম। কোজাগরী পূর্ণিমার রাত। উন্মুক্ত একটা মাঠ আলোয় খাঁ খাঁ করছে। বন্ধুরা খোলা মাঠ ধরে ঘরে ফিরতে ফিরতে গণসঙ্গীত ধরলো। আমি গান গাইতে পারি না। হাঁটাতেও  স্লো। দুধে সাদা অবাক করা খোলা-মাঠটাকে দুচোখ মেলে দেখতে দেখতে ভাব-বিহ্বল হয়ে পড়েছিলাম। ওদের পেছন পেছন নেশাখোরের মতো হাঁটছিলাম। তখনি আকাশ থেকে আমার কাছে নেমে এলো সেই পরীটা। বললো- ‘আমাকে তো তুমি নিশ্চয়ই চেনো?’

চাঁদের আলোয় আকাশ থেকে নেমে আসা উল্লসিত পরীটাকে আবার সামনাসামনি দেখলাম। কী একটা অনির্বচনীয় আনন্দে দিশাহারা হয়ে উঠলো।  কী একটা ঘোরের মধ্যে অবাক করা খোলা-মাঠটাতে আমি একা একাই  হাঁটছিলাম! ততক্ষণে আমার বন্ধুরা আমাকে ফেলে অনেকদূর এগিয়ে গেছে।

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন