কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২

উপল মুখোপাধ্যায়

 

সমকালীন ছোটগল্প


অজুকাকা

 

প্রথম গোলটা কে করে, সে নিয়ে ঝামেলা আছে। সে বিকেলে রোদও ছিল, তবে গরম কেমন হতে পারে, একদম মনে নেই। হতে পারে এমন যে গোলটা করেছিল স্বপন সেনগুপ্ত, যার ডাকনাম চিংড়ি কেন হল, সে খবর গড়ের মাঠ নামে লেটার প্রেসে ছাপা কাগজে -  খেলোয়াডদের ধ্যাবড়ানো ছবি দেওয়া কাগজে নেই। যদিও সেই অবছায়া ছবিই দেখতাম। মানে অনেকদিন দেখেছি। ওই কাগজটা প্রথম আমাকে অজুকাকা কিনে দেয়। আমি অজুকাকার ঝুলপির দিকে তাকিয়েছিলাম। বড় লম্বা ঝুলপি আর গায়ে কী যেন সেন্ট মাখা। সেন্টের গন্ধ সারা মাঠ ছড়িয়েছিল তারপর খেলা শুরু হতে ঘামের গন্ধ সারা মাঠ ছড়িয়েছিল। প্রথম গোলটা কি স্বপন সেনগুপ্তই করেছিল? কখন গোল হয় সেটা মনে করতে পারি না। এমন নয় যে এখন বুড়ো হয়ে তারপর বয়স হয়েছে বলে মনে করতে পারছি না। কখনই কোন ম্যাচে প্রথম কে গোল করে এটা মনে করতে পারছি না ছোটবেলা থেকে, মানে যখন বয়স কম ছিল সেই সময়েরও কিছু আগে থেকে। এটা একটা অভ্যেস আমাদের এখানে ওই  জন্য কাজল মুখার্জির কথা কেউ মনে রাখে না। সে নাকি জর্জ বেস্টের থেকে ভালো কাটাতে পারত, নাচাতে পারত। এমনটা বলেছিল অজুকাকা। সেই শুনে ত্রিশ বছর সাত বছর আর পঁয়তাল্লিশ বছর পরপর আমি ক্রমাগত বলেছি, “ধ্যাৎ”। শুনে জর্জ বেস্ট হেসেছিল। আর অজুকাকা প্রত্যেক বারই বলে এসেছে, “সত্যি বলছি রে! ওহ্ যদি দেখতিস!” তবে সেদিন আরেকটা গোল করে হাবিব যাকে বড়ে মিয়া বলা হয়। হাবিব না স্বপন সেনগুপ্ত কে যে প্রথম গোলটা করে সে নিয়ে ওই গরম মাঠে গরমের মধ্যে ঠাণ্ডা মাথায় ভাবা সম্ভব নয় হলে তো আমাদের ফুটবল লাতিন দেশের মতো হতো! যেখানে মাঠে গরমের সঙ্গে ছায়াও দেখা যায় আর ওরা জিঙ্গা বলে একটা করে বল নিয়ে তাতে মাথার কোন ভূমিকা থাকে না,  কারণ পায়েরা মাথার মতো করে আলাদা আলাদা ভাবতে পারে। এটা অচ্যুত ব্যানার্জি ধরতে পারতেন, ফুটবলারের পা দেখে কাকে কী শেখাতে হবে। গড়ের মাঠে অচ্যুত ব্যানার্জির ছবি বেরিয়েছিল এটা অজুকাকা আমাকে বলে, যদিও সে ছবি দেখাতে পারেনি আর আবার আমি তার ঝুলপিটা দেখছিলাম। আর দেখলাম ভৌমিকেরও ঝুলপি আছে, পিকেরও ঝুলপি ছিল। সেদিন মাঠে পিকেকে ছোটাছুটি করতে দেখেছিলাম লাইন বরাবর। ১৯৭২য়ে মোহন ইস্ট একটা লিগ ম্যাচের কথা বলছি, সেই মাঠে খেলা চলার সময় পিকে কিছুতেই মাঠে ঢুকতে পারল না, কারণ পিকে ছিল কোচ। যেখানে পিকে ছোটাছুটি করছিল সেখানে তখন প্রচুর ছায়া। সেই দেখে আমি অজুকাকাকে বলি, “ছায়ায় চলো না!” শুনে অজুকাকা বলল, “সেকিরে! মাঠে ছায়া থাকে নাকি!” সেই সময় কেউ একটা গোল করল আর আমি দেখলাম বড়ে মিয়া মানে হাবিব ঠিক মাঠের মধ্যে ছায়ার মতো বলকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আগেও ছাড়ছে না পরেও ছাড়ছে না, আর সবাই তাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করছে, যার মধ্যে ভৌমিকও আছে, যার ঝুলপি দেখে বারবার অজুকাকার কথা মনে হচ্ছিল। সেই কাকাই আমাকে প্রথম নিয়ে যায় মাঠে, যাকে ময়দান বলে, যেখানে প্রচুর রোদ আর বৃষ্টি হয় প্রায়শই, তবুও চারদিক রোদ ঝলমল করে উঠল আর গড়ের মাঠ কাগজটায় ধ্যাবড়ানো ছবি দিয়ে খবর বের করল ইস্ট ২ মোহন ০। গোলের সংখ্যা কিছুতে অক্ষর দিয়ে লেখা যায় না। সবসময় সংখ্যা দিয়ে লেখা যায় বলে সেদিন মাঠেও প্রচুর লোক হয়েছিল। আর হ্যাঁ অজুকাকা বেলবটম প্যান্ট পরত। অনেক বছর পর বাবা আমাকে একটা বেলবটম প্যান্ট কিনে দিল। তারপর থেকেই কি আমি ঝুলপি রাখতে আরম্ভ করি? নাকি আগেই? অনেকটা কে প্রথম গোল করে বড়ে মিয়া না চিংড়ি বা স্বপন সেনগুপ্ত, ব্যাপারটা সেরকমই আরকি!


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন