কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২

অচিন্ত্য দাশ

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৪


কালোসাদা ছবি            

            

সেই হাই-স্কুল থেকেই শুভায়নের ছবি তোলার শখ। শখ না বলে নেশা বলাই ঠিক। তবে ফোনের পরদায় ছবি দেখা তার একেবারে পছন্দ নয়। এমনকি কম্পিউটার কিংবা বড় টিভির পরদাতেও নয়। তার পছন্দ ফটোর কাগজে স্টুডিও থেকে করানো ছবি। সে নিজে অবশ্য বাড়িতেই একটা ‘অন্ধকার ঘর’ মানে ডার্করুম করেছিল। ছবির বিষয় নিয়েও তার বাছবিচার ছিল। প্রাকৃতিক দৃশ্যটিশ্য তেমন তুলতো না। শুভায়ন তুলতো মানুষের ছবি, মানুষের মুখের ছবি। যাকে পোট্রেট বলে। সে ছবি প্রস্ফুটিত হতো কালোসাদায় খসখসে ম্যাট কাগজে।

শুভায়নের তখন সাতাশ-আঠাশ, মোটামুটি একটা চাকরিও করছে সে। যেমন হয়ে থাকে, শুভায়ন প্রেমে পড়ল। মেয়েটির নাম রাকা। রাকা বলেছিল – তুমি এ যুগে সেই সাদাকালো ছবিতে পড়ে থাকো কেন? আর ওই খসখসে কাগজের ছবি আমার ভালো লাগে না। ফটোর জন্য এক রকমের তেলতেলা চকচকে কাগজও তো হয়!

শুভায়ন বুঝিয়েছিল – ধরো একটা মুখের ফটোগ্রাফ। মুখ হলো মনের আয়না। ম্যাট কাগজের সাদাকালো ছবিতে মানুষটার মনের ভাব যেমন ফুটে ওঠে, যেমন করে আমাদের বিঁধে ফেলে, রঙীনে তা হয় না

দুহাজার তেরোতে রাকা-শুভায়নের প্রেম। ষোলোতে বিয়ে। আঠারোতে জন্মালো ঝুমকো। এ পর্যন্ত ঠিকই চলছিল সব। সেবার মার্চ মাসে যখন চারে পড়ল ঝুমকো তখন আচমকা মেঘ ঘনিয়ে এলো ঈশান কোণে। রাকা দেখল শুভায়নের মন ঘর থেকে সরে যাচ্ছে। অসময় বাড়ি ফিরছে, মিথ্যে বলছে। কারণটা জানতে রাকার সময় লাগল না। কারণ হলো ওর অফিসের সহকর্মী তৃণা। পরকীয়ার টান দিনদিন বাড়তেই লাগলো। তৃণার ফোন নম্বর, ঠিকানা সব আছে – কিন্তু রাকা কী করবে? সোজাসুজি ঝগড়ায় নামবে? তাতে কী কিছু হবে না ব্যাপারটা আরও জট পাকিয়ে যাবে…

সেদিন রাকা বাড়ি ফিরে দেখল ঝুমকো কেঁদে ভাসাচ্ছে। তার পুতুলের হাত ভেঙে গেছে। কাজের মাসি বলছে – “বাবা এসে ঠিক করে দেবে, কাঁদিস নে সোনা...”

রাকা কিছু না বলে ফোন বার করে ঝুমকোর ছবি তুলল।

স্টুডিওর ভদ্রলোক বললেন ফোনের ছবি ছাপিয়ে দেবেন। রাকা বলল – “খসখসে কাগজে কালোসাদা ছবি হতে হবে কিন্তু।”

খামটা খুলে তৃণা দেখল কোনো চিঠি নেই, শুধু একটা ছবি। শুভায়নের মেয়ে ঝুমকোর ছবি। তৃণা ঝুমকোকে অনেকবার দেখেছে। ছোট্ট মেয়ের ছবিটা তৃণা দেখতে থাকে, দেখতেই থাকে… খসখসে ম্যাট কাগজে কালোসাদা ছবি। হাতভাঙা পুতুল নিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে শুভায়নের মেয়েটা। তৃণার ভাবনা-চিন্তা গুলিয়ে যায়। পরকীয়া সম্পর্কটা কি চালিয়ে যাবে না চালানোটা ঠিক হচ্ছে না? না কি সে মিছিমিছি এসব নিয়ে ভাবছে? আজকালকার দিনে সব চলে, চলছেও।  সে যাইহোক ম্যাট কাগজের কালোসাদা ছবিটা কিন্তু তৃণার মাথা থেকে যায় না, ঘুরে ঘুরে আসতেই থাকে।

শুভায়নের পাশে রাকা রাত্তিরে কাঠের মতো শুয়ে থাকে। ভাবতে থাকে শুভায়ন যেমন বুঝিয়েছিল তেমনই খসখসে কাগজে সাদাকালো ছবি করিয়ে তো পাঠালাম। অস্ত্রটা কাজ করবে কি…

 

 

 


1 কমেন্টস্:

  1. রঙ অনেক কিছু আড়াল করে কিন্তু সাদাকালো স্পষ টা প্রকাশ করে ।

    উত্তরমুছুন