কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২

অচিন্ত্য দাশ

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১২


ফুল

সুখনদের ইস্কুল ছুটি হয় চারটে বাজলে। শর্টকাট করতে আজ মেঠো রাস্তা ধরেছিল। ঝোপঝাড়ের ভেতর দিয়ে চট করে বাড়ির কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়। যেতে যেতে সুখনের চোখে পড়ল একটা ভারি সুন্দর ফুল ফুটেছে। লাল-হলুদ মেশানো রং, দেখে মনে হচ্ছে একটা পাখি। এক্ষুণি ডানা মেলে উড়ে যাবে যেন। ঝোপঝাড়ের পাঁচমিশেলি গাছগাছড়ায় এমন ফুল ফুটতে সে আগে কখনো দেখেনি।

ফুলটা সে দিদিকে দেখাবে। দিদি তার থেকে আট বছরের বড়। বাকি রাস্তাটা  একছুটে পেরিয়ে সুখন দিদিকে বাড়ি থেকে ডাকতে গেল। দিদি তখন কলেজের খাতায় একটা বই থেকে কী যেন টুকছিল। সুখন বলল, “অ্যাই দিদি, একটা জিনিস দেখবি আয়”।

“এখন কাজ আছে। পরে।”

“আরে চল না। এই তো এখানে।”

“না, পরে।”

সুখন লক্ষ করেছে যেদিন থেকে দিদির বিয়ের কথা শুরু হয়েছে, দিদির  মনমেজাজ ভালো না। ছোট হলেও সুখন জানে, দিদি এখন বিয়ে করতে চায় না আর ছেলেকেও তার পছন্দ নয়। মা খানিকটা দিদির পক্ষে, তবে বাবা জোর-জবরদস্তি করছে। বলছে, বয়স বেড়ে গেলে আর পাত্র পাওয়া যাবে না। ছেলের নাকি দিদিকে খুব পছন্দ, তাই ওদের বাড়ি থেকেও চাপ আসছে।

সুখন একটু সাধতে দিদি রাজি হল। ওড়না জড়িয়ে, চপ্পল গলিয়ে সুখনের সঙ্গে বের হলো।

কার্তিকের ছোটবেলা পড়ে আসছে। গ্রামের কাঁচা রাস্তা – দু-পাশে কোথাও হালকা কোথাও ঘন ঝোপঝাড়। গাছগুলো লম্বা ছায়া ফেলে ঝিম মেরে আছে। কবিতায় যেমন থাকে তেমনি পাখিরা গাছে কিচির-মিচির করছে। গোটা কয়েক বড় ডানার পাখি আকাশের রাস্তা ধরে বাসায় ফিরছে। বাতাস বইছে না। তবে দূর থেকে উত্তুরে ঠাণ্ডা আসব আসব করছে। দিদি ওড়নাটা আর একটু জড়িয়ে নিল।

আরে, ফুলটা তো এখানেই ছিল! গেল কোথায়? সুখন তো ইস্কুল থেকে ফেরার  সময় এই জায়গাটাতেই দাঁড়িয়ে ফুলটাকে দেখেছে ভালো করে! এই তো একটু আগে। কী হলো ব্যাপারটা! দিদির মুখ গম্ভীর। সুখন হতাশ আর অবাক হওয়া স্বরে বলল, “সত্যি বলছি রে দিদি, ঠিক এইখানটাতেই ফুটেছিল। কী সুন্দর  ফুলটা ছিল…”

দিদির মন-মেজাজ মোটেই ভালো যাচ্ছে না আজকাল। সুখনের মাথাটা ধরে ডানদিকে ঘুড়িয়ে দিল। বলল, “দ্যাখ!”

সুখন দেখল ঝোপের ভেতর থেকে একটা নাদুসনুদুস কালো রামছাগলের পেট আর ল্যাজ বেরিয়ে আছে।

দিদির দিকে তাকিয়ে দেখল, দিদি রাগ রাগ মুখে ছাগলটাকে দেখছে। সুখনের  বয়স কম নয়ত ও বুঝতো দিদির চাহনিতে রাগের সঙ্গে কতখানি অসহায়তা মেশানো ছিল।

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন