কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২

সোনালি বেগম

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১২


মুখোশের আড়ালে কে বা কারা?

ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে খুব কম মানুষের সঙ্গেই কথা হয় সুমনার। বেশির ভাগ সময় নিজের মতো করে সময় কাটায় সে। নিজের সুখ-দুঃখের কথা সহজে কাউকে বলে না। শুধু ভাবে যে, এই ক’বছরে তাকে জীবনে অনেক অপমান ও অবিচার সহ্য করতে হয়েছে এবং হচ্ছে, যেগুলোর কারণ একদম অমূলক। আজকাল এক ধরনের শূন্যতা জড়িয়ে ধরে তাকে। সেদিন ফোনে একজন অপরিচিত মহিলা বললেন, ‘বারবার মিসড্‌ কল দেন। কে আপনি? আপনার বোধহয় কোনো কাজকর্ম নেই? তাই মানুষকে বিরক্তের কাজটি বেছে নিয়েছেন!’ কথাগুলো শুনে সুমনা কিছু বলতে যাবে, ওপাশ থেকে ফোন তৎক্ষণাৎ কেটে গেল।

রাতে খাওয়াদাওয়া শেষ করে একটু ফেসবুক খুলে বসে সুমনা। মেসেঞ্জারে ইনবক্সে মেসেজ এসেছে ইন্দ্রনীলের। লিখেছে সে : ‘তোমার নাম্বার থেকে আজ কল এল। কিন্তু তুমি কোনো কথা বললে না! একজন অপরিচিত লোক কথা  বলছিল। লোকটি বলল যে তুমি মানসিকভাবে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছো। তুমি এভাবে বিভিন্ন মানুষকে ফোন দিচ্ছো এবং কনফারেন্সে লাগাচ্ছো। বুঝতে পারছি না, হঠাৎ কেন এরকম করছো? তোমার মতো সেন্সিবল মানুষ এরকম করবে, ভাবতে পারছি না। মানিও না। তোমাকে কল করছি, কিন্তু সব সময় আউট অফ কভারেজ এরিয়া কিংবা সুইচড্‌ অফ শোনাচ্ছে। কী করবো বুঝতে পারছি না। তোমার সঙ্গে কথা হলে ভালো হতো। তাই অনিচ্ছাস্বত্ত্বেও আপাতত তোমাকে ব্লক করলাম।’ মেসেজটার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝল না সুমনা। সে তো আজ ইন্দ্রনীলকে কোনো কল করেনি!

ফেসবুকে কৃষ্ণকলি পোস্ট করেছেন : ‘না! আর নেওয়া যাচ্ছে না। সুমনার মিসড্‌ কলে অস্থির হয়ে যাচ্ছি। আবার কখনও কখনও ওর ফোন ধরলে অন্য কেউ কথা বলছে। সুবিধের বিষয় নয়। শিগগিরই পুলিশে যাবো, সাবধান! সুমনা তোর মুখোশ টেনে খুলবো।’

আর একটা পোস্ট অনিমেষের : ‘সুমনা মাতাল হয়ে গেছে। ও ভেবেছেটা কী? আমরা সব বোকা! আমি তো শেষ দেখেই ছাড়বো!

একদম সরাসরি আঘাত করে পরিচিত মানুষজনের পোস্টগুলি দেখছে সুমনা। মোবাইল হ্যাক করে কে বা কারা এই গন্ডগোল করছে, কেন করছে, তার কারণ অজানা। মোবাইল নম্বর চেঞ্জ করেও সুরাহা হচ্ছে না।

ইদানীং মাত্রা অতিক্রম করে যাচ্ছে। সুমনা থানায় সাইবার ক্রাইম সেলে এফ আই আর করতে ছুটলো। এস পি সত্য গুপ্ত খুব মন দিয়ে সমস্ত প্রবলেম শুনলেন। এবং মোবাইল কিছু দিনের জন্য থানায় জমা করতে বললেন। তিনি আরও বললেন, ‘আসলে ম্যাডাম, হ্যাকাররা মোবাইলে ভাইরাস ফেলে এইরকম বিরক্ত করছে। কিন্তু এভাবে বিরক্ত করা দন্ডনীয় অপরাধ।’

‘থ্যাংকস স্যার। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেখুন বিষয়টা। এফ আই আর জরুরি হয়ে পড়লো। দীর্ঘদিন ধরে এই মেন্টাল টর্চার সহ্য করছি।’

সুমনা দ্রুত রাস্তায় ফিরে আসে। মোবাইল কাছে নেই, সুতরাং আজ ওলা-উবের ধরা যাবে না। বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে সে।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন