কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২

কাজল সেন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১২


ঢিল

ঢিল ছুঁড়লে পাটকেল খেতে হয়। একটি বহুল প্রচলিত বাংলা প্রবাদবাক্য। কিন্তু আগে তো জানা দরকার, ঢিলটা কে ছুঁড়েছে? না হলে পাটকেলটা মারবে কাকে? সেদিন যখন উড়ন্ত ঢিলটা এসে আছড়ে পড়ল অতসীদের ফ্ল্যাটের তিনতলায়  ব্যালকনির কাচের জানালায়, তখন অতসী সেই ব্যালকনিতে একটা দোলনায় দোল খেতে খেতে শব্দজব্দ খেলছিল। আচমকা বেখাপ্পা আওয়াজে জানালা ভেঙে কাচের টুকরোগুলো সারা ব্যালকনিতে ছড়িয়ে পড়ায় অতসী এতটাই হকচকিয়ে গেছিল যে, সেই মুহূর্তে উঠে জানালা থেকে মুখ বাড়িয়ে কে এই কর্মটি করেছে, তাকে দেখার কথা মনেও হলো না! কিন্তু একটু পরেই শব্দজব্দর থেকেও জটিল এই ভাবনাটা তাকে ভাবিয়ে তুলল।

‘অপরূপা’ শিরোনামের এই ফ্ল্যাটবাড়ির দক্ষিণমুখো তিনতলায় অতসী তার মা-বাবার সঙ্গে থাকে। অতসী তার মা-বাবার একমাত্র কন্যাসন্তান, তারা দুজনেই  তখন নিজের নিজের অফিসে কর্মরত। অতসীরও ঘরে থাকার কথা নয় এই বেলা সাড়ে-বারোটায়, ইউনিভার্সিটির ম্যাথেমেটিক্স ক্লাসে থাকার কথা। কিন্তু মেনস্ট্রুয়েশনের সবে দ্বিতীয় দিন, একটু বাড়াবাড়ি রকমের রক্তপ্রবাহ চলছে, তাই ঘরে থাকাই মনস্থ করেছে। তাহলে এটা পরিষ্কার ব্যাপার যে, যে ঢিলটা  ছুঁড়েছে, সে জেনেবুঝেই ঢিল ছোঁড়ার এই সময়টা বেছে নিয়েছে। অর্থাৎ এখন কেউ বাড়িতে নেই, সুতরাং এটাই সঠিক সময়। ঠিক আছে, তা না-হয় মেনে নেওয়া গেল। কিন্তু কথা হচ্ছে, ঢিলটা কেউ ভালোবেসে ছোঁড়েনি! এই ছোঁড়ার পেছনে তার রাগ বা অভিমান অথবা আক্রোশ বা প্রতিশোধ-স্পৃহা আছে! তবে যাই থাক না কেন, অতসী শুনেছে, ঢিলের প্রত্যুত্তরে পাটকেল মারার রীতি  আছে। কিন্তু এখানেও একটা সমস্যা, ঢিল-ছোঁড়া ব্যক্তিটি কে জানতে না পারলে, পাটকেলটা মারবে কাকে!

অতসী একটা ফুলঝাড়ুর সাহায্যে ব্যালকনির মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা কাচের ভাঙাটুকরোগুলো জড়ো করতে করতে আর একটা ব্যাপারও গভীরভাবে চিন্তা করতে লাগলো, যে ব্যক্তি ঢিলটা ছুঁড়েছে, তার রাগ বা অভিমান অথবা আক্রোশ বা প্রতিশোধ-স্পৃহা কার বিরেদ্ধে! এমন তো হতে পারে না যে, বাবা-মা-অতসী একসঙ্গে সবার বিরুদ্ধে! না, তেমন কোনো সম্ভাবনা অতসীর মাথায় আসছে না। তাহলে আলাদা আলাদা করে যদি ভাবতে হয়, প্রথমেই বাবার কথা ভাবতে হয়। অতসী যতটুকু জেনেছে, বিয়ের আগে বাবা নাকি আদৌ সুবোধ বালক ছিল না। যতরকম চ্যাংড়ামি ছ্যাঁচড়ামি উঠতি মাস্তানরা করে থাকে, বাবা তা চুটিয়ে  করেছে। অতসী এমনও শুনেছে, বিয়ের আগে সবাই নাকি ভেবেছিল, বিয়ে হলে ঘরে বউ এলে, ছেলের নাকি মতি ফিরবে। কতটা মতি ফিরেছে, তা অতসীর জানা না থাকলেও, মাঝে-মাঝেই মা-বাবার মধ্যে ধুন্ধুমার বেঁধে যায়, আর তার কেন্দ্রে থাকে অন্য এক নারী। সুতরাং বাবা অজাতশত্রু নয়। আবার আড়ালে আবডালে অতসী শুনেছে, মা নাকি সুযোগ পেলেই দেখা করতে যায় তার বিবাহ-পূর্ব প্রেমিকদের সঙ্গে। সেই নিয়েও মা-বাবার মধ্যে তুমুল ঝগড়া।

তবে অতসী খুবই দুশ্চিন্তায় পড়ল তার ভালোলাগা দুই মানুষের কথা ভেবে। দুজনেই ইউনিভার্সিটির এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর। দুজনেরই সাব্জেক্ট ম্যাথেমেটিক্স। দুজনেই অতসীর প্রণয়প্রার্থী। অতসীর সন্দেহ হলো, মুখার্জিস্যার, নাকি বিশ্বাসস্যার, ঢিলটা কে ছুঁড়েছে!     

4 কমেন্টস্:

  1. দুর্দান্ত প্লট। যা ছোট গল্পের আদর্শ কাঠামো, তা উজ্জ্বল উদাহরণ। জটিল শব্দ নয় জটিল সমাজ সম্পর্ক থেকে উৎসারিত __✍️ রিনরিনিয়ে বাজবে পাটকেলটি কাকে ছুঁড়বে অতসী। কিন্তু জীবন যেমন হয়... উত্তরের খোঁজে।

    উত্তরমুছুন