কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২

<<<< সম্পাদকীয় >>>>

 

কালিমাটি অনলাইন / ১০৭ 

 

বাঙালি জীবনে শরৎকালীন পুজো তথা উৎসবরের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে শারদ পত্র-পত্রিকা, মূলত শারদ সাহিত্যপত্রিকা। আমার জানা নেই, বাংলাভাষায় প্রকাশিত পত্র-পত্রিকা ছাড়া আর কোনো ভাষায় শারদ সাহিত্যপত্রিকা প্রকাশিত হয় কিনা; তবে ঈদ উৎসব উপলক্ষ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে সাহিত্যপত্রিকা প্রকাশিত হয়। এবং তা বাংলা ভাষাতে। আমার মনে পড়ে, আমি যখন শৈশব থেকে কৈশোরে অনুপ্রবেশের সন্ধিপর্বে ছিলাম, আমার আগ্রহ অনুভব করে ‘শুকতারা’ নামে একটি ছোটদের  পত্রিকা নিয়মিত বাড়িতে রাখার বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন আমার মা-বাবা। পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো কলকাতার ঝামাপুকুর লেনের ‘দেব সাহিত্য কুটির’ প্রকাশনা থেকে। আর প্রত্যেক বছর শরৎকালে পুজো উপলক্ষ্যে তাঁরা প্রকাশ করতেন একটি ঢাউস আয়তনের ছোটদের উপযোগী বই। মনে আছে এখনও, সারাটা বছর আমি অপেক্ষা করে থাকতাম, শরতকালের একটি মনোরম সকালে বইটি আমার হস্তগত হবে জেনে। সেই শারদ সাহিত্যপত্রিকার জন্য শুধু আমার  নয়, বরং আমার বয়সের সামান্য কম-বেশি সব বাঙালি ছেলেমেয়েদের যে কী উচ্ছ্বাস ও উন্মাদনা ছিল, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে ঐসময়ে ছোটদের জন্য আরও বেশ কয়েকটি পত্রিকাও প্রকাশিত হতো, যেমন সন্দেশ, কিশোরভারতী ইত্যাদি; কিন্তু আমাদের বাড়িতে শুধু ‘শুকতারা’ই আসত এবং  আসত ‘দেব সাহিত্য কুটির’ থেকে প্রকাশিত পুজো বার্ষিকী। তারপর যখন কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করলাম, তখন লক্ষ্য করলাম, যেন আমার বড় হবার অপেক্ষাতেই এতদিন উন্মুখ হয়েছিল সারা বছর সাধারণ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত এবং বছরে একবার শারদসংখ্যা রূপে প্রকাশিত বড়দের জন্য অসংখ্য বাংলা পত্র-পত্রিকা। বিশেষত তখনও পর্যন্ত লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলন আজকের মতো এতটা সর্বজনীন হয়ে ওঠেনি, তাই বিভিন্ন বৃহৎ প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত সাহিত্যপত্রিকাগুলি, মূলত শারদসংখ্যাগুলি আমরা বুভুক্ষের মতো পড়তাম, গিলতাম এবং আনন্দ উপভোগ করতাম। যেমন শারদসংখ্যা দেশ,  আনন্দবাজার পত্রিকা, বসুমতি, যুগান্তর, নবকল্লোল, ঘরোয়া, জলসা, উল্টোরথ, সিনেমাজগত, বেতারজগত, শিলাদিত্য ইত্যাদি। আর আমাদের অগ্রজদের কাছে শুনতাম, তাঁদের যৌবনকালে প্রকাশিত ভারতবর্ষ, প্রবাসী, বার্ষিক বসুমতি, সুলভ সমাচার, সাধনা, বঙ্গবাণী ইত্যাদি পত্রিকার কথা। আর এইসব  শারদসাহিত্যে লিখেছেন কোন লেখকেরা – স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে শরতচন্দ্র, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, জলধর সেন, তারাশঙ্কর, বিভূতিভূষণ, মানিক, জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, সন্তোষকুমার ঘোষ, বনফুল, শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়, বিমল মিত্র, সুবোধ ঘোষ, সমরেশ বসু, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় – না, এই তালিকা সম্পূর্ণ করা কখনই সম্ভব নয়। তবে এই অসংখ্য শারদ পত্র-পত্রিকার ভীড়ে যদি কেউ আগ্রহী হন প্রথম প্রকাশিত শারদসংখ্যা পত্রিকাটি সম্পর্কে, তাহলে উল্লেখ করতেই হয় ‘সুলভ সমাচার’ পত্রিকার কথা। আজ থেকে প্রায় একশ পঞ্চাশ বছর আগে ব্রাক্ষ্মসমাজের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব কেশবচন্দ্র সেন এই পত্রিকাটি প্রকাশ করেছিলেন। ১২৮০ বঙ্গাব্দের শরৎকালীন পুজোর সময় তাঁরই উদ্যোগে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত ‘সুলভ সমাচার’ পত্রিকার সঙ্গে একটি ক্রোড়পত্র সংযোজন করা হয়েছিল, যার শিরোনাম ছিল ‘ছুটির সুলভ’। পত্রিকাটির বিনিময় মূল্য ছিল মাত্র  এক পয়সা। তবে পরবর্তী সময়ে ১৯১৩ সালে পুজোর সময় জলধর সেনের সম্পাদনায় ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকার যে সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছিল, সেটাই ছিল প্রকৃত অর্থে প্রথম বাংলা ভাষার শারদসংখ্যা। দুশো পৃষ্ঠাসংখ্যার এই পত্রিকার জন্য কলম ধরেছিলেন সেই সময়ের দিকপালেরা। ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো ‘গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্স’ প্রকাশনী থেকে।   

 

সবার প্রতি আমাদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।

 

আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :

kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com

 

দূরভাষ যোগাযোগ : 9835544675

 

অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ : Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India.

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন