কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২

মেঘ অদিতি

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১২


মুক্ত বাজার লাইভ

বৃষ্টিটা এতক্ষণে ধরেছে। ঘরের ভেতর তাণ্ডবও নিভুনিভু। রবিন বেরিয়ে গেছে। ঘরে থম মেরে দাঁড়িয়ে রুপা। মেঝেতে ছড়িয়ে আছে আনাজপাতি, খুচরো পয়সা, হাতব্যাগ আর একপাটি উল্টে থাকা চটি।

রবিনের শ্লেষ ওকে স্রেফ ঝলসে দিয়েছে। উফফ… চোখ বুজে ফেলে রুপ… কীরকম তীর্যকস্বরে বলছিল… গত দু’বছরে ফেসবুক লাইভে ব্যবসা করে তোমরা যারা  কোটিপতি হয়েছ, তারা কখনই মহামারীর পর বৈশ্বিক মন্দা কেন হয় বুঝবে না।  রোজরোজ অনলাইন শপিং চলবে আর রোজ ঘরে পার্সেল ঢুকবে। ব্যবসার নামে এই ফ্ল্যাটটার অবস্থা তো বঙ্গবাজারের পাইকারী বিক্রেতার দোকানের মতো… তার ওপর কিনে এনেছ এই সাতাশ হাজার টাকার ইলিশ, বছরভর খাবে বলে। বদ্ধ উন্মাদ তুমি?

চোখে-মুখ জ্বালা করে। জলের ঝাপটা দিতে দিতে ভাবে, গতরাতে সম্বলপুরী শাড়ি  ঢুকেছে দুই লট। কেরানীগঞ্জ বৌবাজার থেকে গার্মেন্টস আইটেম ঢুকেছে পরশু। দুটোরই লাইভ বাকি। ঘরের হাল সত্যিই করুণ। কিন্তু রাখবেই বা কই! গরমে ম্যাক্সি চলছে খুব। সেগুলোর ডেলিভারি বাকি। ছেলেগুলো আর কিছুক্ষণ পর ঢুকবে। প্রোডাক্ট বুঝে নিয়ে ডেলিভারিতে বেরিয়ে পড়বে। মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা জিনিসগুলো তুলতে তুলতে রবিনের কথাই ভাবে। ঠিক বুঝতে পারে না দোষটা সে কী করল। ইলিশের মরসুম চলে যাবার আর বেশি দেরি নেই। বাড়িতে এই ফ্রিজার, যা সে কদিন আগেই কিনেছে, তাতে সে কিছু ইলিশ রাখলে, রবিনের সমস্যা কী? সবাইকে দিয়ে খাবে বলেই তো কেনা। আর ফেসবুক লাইভ করার ঠেস, টাকার খোঁটা… আবার অনলাইন শপিং-এর খোঁচাও তো দিল! গায়ে বিছুটির জ্বলন শুরু  হয়। মাথা ঝাঁঝাঁ। মারীকালে যখন রবিনের প্রাইভেট অফিসের বেতন অর্ধেকেরও কম হয়ে গেছিল তখন সংসার চালাতে কে পাশে দাঁড়িয়েছিল রবিনের? কই রবিন তখন তো কিছু বলেনি! বরং মাস্ক, স্যানিটাইজার থেকে শুরু করে ব্রা, প্যান্টিও তো ও পাইকারি বাজার থেকে কিনে এনে দিতে রুপাকে। ধীরে ধীরে রুপা শাড়ির ব্যবসা শুরু করে। দুটো পয়সা করে। রুপা’স ক্রিয়েশন-কে আজ কে না চেনে? অথচ রবিন… নাহ্, নড়ে ওঠে রুপা। লাইভের জন্য তৈরি হতে হবে।

কলিংবেল বেজে ওঠে। ভেবেছিল ডেলিভারির ছেলেগুলো। না, রবিন। বড় একটা বাজারের ব্যাগ ওর হাতে। ঘরে ঢুকেই সটান ফ্রিজারের কাছে চলে যায়। ডালা খুলে গুচ্ছের ইলিশ ব্যাগে ঢুকিয়ে যেমন এসেছিল তেমন বেরিয়ে যায়। রাগে ক্ষোভে রুপা স্তম্ভিত। কী করছে রবিন? ফেলে দেবে নাকি মাছগুলো? এক দৌড়ে রবিনের পিছু নেয়। কিন্তু নাহ, যেন ভোজবাজির মতো যেন মিলিয়ে গেছে রবিন। দ্রুত মোবাইল  ফোনটা হাতে তুলে নেয় ও। রবিনকে ফোন করতে হবে। ইলিশগুলো রুপা নিজের রোজগারে কিনেছে। রবিনের কোনো অধিকার নেই ইলিশ নিয়ে ঝামেলা করার।  কিন্তু ফোন করার আগেই একটা টুং-শব্দ, রুপা থামিয়ে দিল। ফেসবুক জানাচ্ছে  রুপা’স ক্রিয়েশন ইজ লাইভ নাও…

ট্যাপ করতেই চোখ বড়বড় হয়ে গেল ওর। রবিনের দু’হাতে দুটো দেড় কিলো সাইজের ইলিশ। হাসিমুখে রবিন ইলিশ লাইভে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছে।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন