কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২

অপরাহ্ণ সুসমিতো

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১২


টোপলা

লোকটার কাঁধে বানর, এক হাতে একটা ডুগডুগি, অন্য হাতে একটা কাঠের বাক্স।  পেছন পেছন আরেকটা বড় ধরনের পোটলা হাতে আমার বয়সী একটা ছেলে হাঁটছে। বাজারের ডানদিকে একটা খোলা জায়গায় লোকটা এসে থামে। ইচ্ছা যে এখানে সে বানরের খেলা দেখাবে।

ডুগডুগি বাজিয়ে জোরে হাঁক দেয়: ভানুমতির খেল...

পেছনের ছেলেটাও তার ক্ষীণ স্বরে চেঁচিয়ে বলে: ভা নু ম তি র খে ল দে খে ন ভা নু ম তি র খে ল

লোকজন ধীরে ধীরে জড়ো হতে শুরু করে। ছোট্ট বানরটা কাঁধ থেকে তড়াক করে নেমে চোখ বড় বড় করে এদিক ওদিক তাকায়। আমি অবাক হয়ে বানরের দিকে তাকিয়ে থাকি। কী রকম ড্যাবড্যাবে বড় চোখ! মনে হয় পৃথিবীর সব মায়া চোখে। প্রাণিজগতে প্রায় সবার চোখ সুন্দর। অনেকক্ষণ তাকনোর পর যখন আলতো পলক পড়ে, মনে হয় কী যে মায়া! একটু ধরে ছানামনা করতে ইচ্ছা করে। বানরটা তার খেলা শুরু করে। লোকটা বলে;

: ভানুমতি, স্কুলে যাও!

ছোট্ট বানরটা কতগুলো বইখাতা বগলে নিয়ে পিটুপিটু হাঁটতে শুরু করে। পিচ্চি ছেলেটা গুরুগম্ভীর হয়ে দুই আঙ্গুল মুখে পুরে শিষ দেয়, শিষ শেষ করেই বলে;

: বাচ্চালোক জোরসে তালিয়া হবে!

সবাই হাততালি। আমিও।

বানরটার কাজকর্ম, আদেশ পালন দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই। ভিড়ের মধ্যে স্কুল ফাঁকি দিয়ে হাফপ্যান্টের পকেটের ভিতর হাত ঢুকিয়ে হারিয়ে যেতে থাকি। বানরটার একটা নাম দিয়ে ফেলি মনে মনে-

টোপলা!  

তখন এরকম এক আধো প্রায় সন্ধ্যায় আমাদের বাসার সামনে একটা জলপাই রঙের জিপ এসে থামে। আমরা মহা আনন্দে জানালার পর্দা তুলে দেখি ছোটমামা। চুল ছোট ছোট, ওরকম প্রায় সন্ধ্যায়ও চোখে সানগ্লাস। বুটের খটখট শব্দ তুলে হেঁটে আমাদের বাসার দরজার দিকে আসতে থাকেন, পেছন পেছন আরেকটা আর্মি। মামা আর্মিতে, হ্যাঁ।

পেছনের আর্মিটার হাতে একটা কাঠের বাক্স। মা দরজা খুলে দেয়। ছোট মামাকে দেখে আমরা ভাইরা আটখানা। রৈ রৈ।

আমাদের বাসায় তখন কেউ বেড়াতে এলে আমরা খুব খুশি। কারণ:

ক. স্কুলের পড়া ও বাসার কড়া নিয়ম কানুনে ফাঁকি

খ. বাসায় মজার মজার খাবার

পেছনের আর্মি কাঠের বাক্সটা বাসার মেঝেতে রেখে সশব্দে স্যালুট করে মামাকে। মামা ওদিকে পাত্তা না দিয়ে সানগ্লাসটা খুলে মা’র দিকে ভুবনজয়ী একটা হাসি দিয়ে বলেন-

: আপা, বান্দরবান (মামা’র পোস্টিং তখন বান্দরবান) থেকে ওদের জন্য একটা বান্দর নিয়া আসলাম।

বলে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে দিলেন।

মা পারে তো তখন লাঠি নিয়ে আসে মামাকে পেটানোর জন্য। হৈ হৈ করে ওঠে। আমি হাঁটু ভেঙ্গে কাঠের বাক্সটার সামনে ঝুঁকে বসি। বাক্স খাঁচাটার শিক গলে তাকিয়ে দেখি বানরটা আমার দিকে ইকুলুবিকুলু বড় বড় তাকিয়ে আছে।

ওমা সেই টোপলাটা!

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন