কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১২ নভেম্বর, ২০২১

লেনোর কানডেল

 

প্রতিবেশী সাহিত্য

 

বিট জেনারেশনের মহিলা কবি লেনোর কানডেল-এর কবিতা (১৯৩২ - ২০০৯)

 

(অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী)




 

প্রথমে ওরা দেবদূতদের জবাই করলো

 

(১)

 

প্রথমে ওরা দেবদূতদের জবাই করলো

তারের দড়ি দিয়ে তাদের রোগা শাদা পা বেঁধে

আর

তাদের রেশমের কন্ঠ শীতল ছুরি দিয়ে চিরে

মুর্গির বাচ্চার মতন ডানা ঝাপটিয়ে তারা মারা গেল

আর তাদের অবিনশ্বর রক্ত জ্বলন্ত পৃথিবীকে ভিজিয়ে দিলো

আমরা মাটির তলা থেকে তা দেখলুম

সমাধিফলক থেকে, কবরের গুপ্তঘরে

আমাদের হাড়গিলে আঙুল চিবিয়ে

আর

পেচ্ছাপে দাগ-ধরা গোটাবার চাদরে কাঁপতে লাগলো

বিদায় নিয়েছে উচ্চশ্রেনির দূতেরা আর স্বর্গীয় দূতেরা

ওরা ওদের খেয়ে ফেলেছে আর মজ্জার লোভে হাড় ফাটিয়েছে

ওরা নিজেদের পাছা পুঁছেছে দেবদূতদের পালকে

আর এখন তারা পাথুরে রাস্তায় হাঁটছে

আগুনের গর্তের মতন চোখ নিয়ে

 

(২)

 

দেবদূতদের ব্যাপারে কে শাসকদের খবর দিয়েছে?

কে যিশুর শেষ-ভোজের পেয়ালা চুরি করেছে আর তা বদলে দিয়েছে একজগ মদ দিয়ে?

কে গ্যাব্রিয়েলের সোনালি শিঙকে লোপাট করেছে ?

                            তা কি কোনো ভেতরের লোক করেছিল?

কে দেবতার মেষশাবককে পুড়িয়ে খেয়েছে ?

কে সন্ত পিটারের চাবিগুলো উত্তর সাগরতীরের

পায়খানার মধ্যে ফেলেছে?

কে সন্ত মেরিকে ঘরসামলাবার ছাপ মেরেছে?

                            তা কি কোনো ভেতরের লোক করেছিল?

আমাদের অস্ত্রগুলো কোথায়?

আমদের গদাগুলো কোথায়, আমাদের আগ্নেয়তীর, আমাদের বিষ-গ্যাস

আমাদের হাতবোমা?

আমরা বন্দুকের জন্যে হাতড়াই আর আমাদের হাঁটুতে গজায় ক্রেডিট কার্ড।

আমরা বাতিল চেক বমি করি

দুই পা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকি চাপের সামনে সাবান-মাখা মুখে ফুঁপিয়ে

আমাদের রেডিওঅ্যক্টিভ চোখে

আর চিৎকার করি

শেষতম রাইফেলের জন্য

পয়গম্বরি কামান

ইস্টারের বোমা

নারীদের গর্ভ চিরে শিশুদের বের করে আনে

বেয়োনেট দিয়ে

অন্ধ নার্সদের চোখে রক্ত ছেটাতে থাকে

তাদেরই তরোয়ালে তাদের কচুকাটা করার আগে

পুরুষদের লিঙ্গ হয়ে উঠেছে নীল ইস্পাতের মেশিনগান,

বুলেট বীর্যপাত হয়, মৃত্যুকে ওরা অরগ্যাজমের মতন ছড়িয়ে দ্যায়

ঝোপের ভেতরে প্রেমিকরা একে আরেকের লিঙ্গ ওপড়াতে থাকে

লোহার নখ দিয়ে

টাটকা রক্ত খেতে দেয়া হয় স্বাস্হ্যের জন্য বীজাণুহীন

কাগজের কাপে

ক্লাবের সিফিলিসে ভোগা মেয়েরা তা এক ঢোঁকে গিলে ফ্যালে

পেপিয়ার মাশে মুখোশ পরে

প্রত্যেকে মুখ হাতে রাঙানো হ্যামলেটের মা

দশ বছর বয়সে

আমরা মাটির তলা থেকে দেখি

আমাদের চোখগুলো দূরবীনের মতন

আমাদের আঙুল ছুঁড়ে দিই কুকুরদের দিকে লজেঞ্চুসের জন্য

তাদের ডাক থামাবার উদ্দেশে

শান্তি বজায় রাখার খাতিরে

বন্ধুত্ব করা আর প্রভাবিত করার জন্য

 

(৩)

 

বোমা পড়লে আশ্রয় নেবার কোলাপসিবল ঘরগুলো আমরা কোলাপস করে দিয়েছি

আমরা জীবন বাঁচাবার গোটাবার নৌকোগুলো গুটিয়ে ফেলেছি

আর বারোটা বাজবার পর

সেগুলো ভেঙেচুরে ইঁদুরের গুয়ে জমে পাহাড় হয়েছে

সার হয়েছে বিষাক্ত ফুলের জন্য

আর ভিনাসকুঁজো গাছের জন্য

মাটির তলায় আমরা গুঁড়ি মেরে থাকি

আমাদের ছ্যাঁদাকরা বুক জড়িয়ে ধরি ছাতাপড়া বাহু দিয়ে

আমাদের ছিন্ন শিরা থেকে টপটপ রক্ত পড়ার আওয়াজ শুনতে থাকি

আমাদের চেনলাগানো খুলির ব্রহ্মতালু উপড়ে তুলি

মস্তিষ্কে হাওয়া খেলানোর জন্য

                   ওরা আমাদের দেবদূতদের খুন করেছে

কৌতূহলীদের কাছে আমরা আমাদের দেহ আর সময় বিকিয়ে দিয়েছি

আমরা আমাদের শৈশব বেচে দিয়েছি ডিশওয়াশার আর মিলশহরের বিনিময়ে

আর নুন ঘষেছি রক্তাক্ত স্নায়ুতে

অনুসন্ধানের সময়ে

                 আর ওরা দেবতার খোলা মুখে হেগেছে

ওরা সন্তদের শেকল বেঁধে ঝুলিয়েছে আর ওরা

পয়গম্বরদের ঘুমের ইনজেকশান দিয়েছে

ওরা ক্রিস্ট আর শিশ্ন উভয়কেই অস্বীকার করেছে

আর বুদ্ধকে বলেছে স্কিৎসোফ্রেনিবার রোগী

ওরা যাযকদের আর পবিত্র পুরুষদের নপুংসক করে দিয়েছে

এমনকি প্রেমের শব্দগুলোকে সেনসর করেছে

         প্রতিটি মানুষের জন্য মগজের শল্যচিকিৎসা!

আর তারা রাষ্ট্রপতি পদের জন্য একজন অবমানবকে বেছেছে

         প্রতিটি গৃহিণীর জন্য মগজের শল্যচিকিৎসা!

         প্রতিটি ব্যবসাদারের জন্য মগজের শল্যচিকিৎসা!

         শিশুদের প্রতিটি স্কুলের জন্য মগজের শল্যচিকিৎসা!

আর তারা দেবদূতদের খুন করেছে

 

(৪)

 

এখন গলিগুলোতে উভলিঙ্গীরা জড়ো হয় কুষ্ঠরোগিদের ঘণ্টা বাজিয়ে যেমন করে ধুনুচি জ্বালিয়ে দেবতাদের ধর্ষণ করার উৎসবের তোড়জোড় করে

         যে চর্বি ওদের ঠোঁটে চকচক করে তা দেবদূতদের দেহের

         যে রক্ত তাদের থাবায় জমে থাকে তা দেবদূতদের রক্ত

ওরা রাস্তায় জড়ো হচ্ছে আর দেবদূতদের চোখ নিয়ে দাবা খেলছে

         ওরা শেষ মানুষদের প্রলয়ের জন্য গড়ে তুলছে

  

(৫)

 

এখন ভোরবেলার পরে

আমরা মাটির তলায় পাথর সরাচ্ছি, গুহার ভেতর থেকে

আমরা ফণিমনসার আঠায় পাওয়া দৃষ্টিপ্রতিভায় চোখ বড়ো করে তুলেছি

আর দাঁত মেজেছি গত রাতের মদে

আমাদের বগল ঠুসে বন্ধ করেছি ধুলোয় আর ছুঁড়ে দিয়েছি

আর তর্পণ করেছি একে আরেকের পায়ে

আর আমরা রাস্তায় ঢুকবো আর তাদের মধ্যে হাঁটবো আর লড়াই করব

আমাদের রোগা ফাঁকা হাত তুলে ধরব ওপরে

আমরা জগতের আগন্তুকদের মাঝে তিক্ত বাতাসের মতন প্রবেশ করব

আর আমাদের রক্ত গলিয়ে ফেলবে লোহা

আমাদের শ্বাস গলিয়ে ফেলবে ইস্পাত

আমরা খোলা চোখে মুখোমুখি দাঁড়াব

আর আমাদের চোখের জল ঘটাবে ভূকম্পন

আর আমাদের বিলাপ পাহাযগুলোকে উঁচু করে তুলবে

সূর্যের পথচলা থামিয়ে দেবে

ওরা আর কোনো দেবদূতকে খুন করতে পারবে না!

 


1 কমেন্টস্: