কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০২ |
হাইফেন
লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছি। ইমরান তখনই উঠছিল। একেবারে মুখোমুখি দেখা। ইমরান হাসল। আমাকে দেখে ওর না হাসারই কথা। তবুও হাসল। আমারও মুখে হাসি চলে এল। প্রতিবর্ত ক্রিয়াই নিশ্চয়ই, তবে সেটা মুখের পেশির, না পুরনো বন্ধুত্বের, সেটা বুঝলাম না।
— একটু দাঁড়া। বইগুলো জমা দিয়েই আসছি।
আমি সিঁড়ি দিয়ে নেমে বাইরে ফুটপাথে দাঁড়ালাম। শীতের বিকেলে ক্যামাক স্ট্রিটের শাশ্বত ক্যাকোফনি। মিনিট পনেরোর মধ্যেই ইমরান এল।
— চল, কোথাও বসা যাক।
বসা হল পাশের একটা বারে। পরিচিত জায়গা। লাইব্রেরি এলে হামেশাই এখানে আসি। একা। ইমরানের সঙ্গে দেখা না হলেও হয়তো আজ আসতাম।
দু বোতল পিন্ট বিয়ারের অর্ডার দিলাম। কোরোনা। নাম শুনে ও হেসে ফেলল, এই নামে চিনে একটা রোগ হচ্ছে না! কী যেন ভাইরাসটার নাম?
আমিও দেখেছি খবরটা। কিন্তু তিন বছর পর ইমরানের সঙ্গে দেখা। ভাইরাস, সংক্রামক রোগ, এইসব নিয়ে আলোচনার ইচ্ছে নেই। বিয়ার খেতে খেতেই কথা চলল। পুরনো স্মৃতি, নতুন খবর — অনেক রকম কথা। শুধু একটা কথা বাদে। তোয়ার কথা। যে মেয়েকে আমি ছিনিয়ে নিয়েছিলাম ইমরানের থেকে। চোরা অম্বলের মতো অপরাধবোধ এখনও। ইমরান কি জানে যে তোয়ার সাথে আমার আর...! তবে তোয়ার কথা দু’জনের কেউ না বললেও পাতিলেবুর রস মেশা বিয়ারের টক-তিক্ত স্বাদ, কাবাবের পোড়া গন্ধের মাঝেও তোয়া জুড়ে রেখেছিল আমাদের। অনেকটা যৌগিক শব্দের হাইফেনের মতো।
বছর খানেক পর। ভোটের ডিউটির চিঠি এসেছে। আমার চাকরি জীবনে এই প্রথমবার। ভেবলে আছি। খেয়ালই করিনি কখন একটা মেসেজ ঢুকেছে মোবাইলে। হোয়াটসঅ্যাপ নয়; আদি, অকৃত্রিম এস এম এস।
— ইমরান চলে গেল আজ সকালে। করোনা।
তোয়ার মেসেজ, স্বচ্ছতোয়ার। এই নাম্বার আমার আত্মস্থ।
ইমরান-করোনা-তোয়ার মেসেজ, সব যেন কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। এক সহকর্মী আমাকে কিছু বলছে। কোনো কথাই কানে ঢুকছে না। আমি তখন ভাবছি একটা যতিচিহ্ন। আমাদের তিনজনের মধ্যে হাইফেনটা ঠিক কে? তোয়া নাকি … আমাকে বুঝতেই হবে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন