কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১২ নভেম্বর, ২০২১

ঝিলম ত্রিবেদী

 

কবিতার কালিমাটি ১১২


দিব্যি

 

দোলনা দোলে গোধূলি দোলে

আকাশ মাঠ দোলে

লাইব্রেরির করিডোরে দাদুর প্রশ্রয়ে

নাতনি দেখে নাতনি ছুটি নাতনি দোল খায়

 

গঙ্গাপাড় পাড়ার-দল

ঈশান কোণে মেয়ে

বান্ধবীর লম্বা ঝুঁটি টেনেই একদৌড়

 

কার কপালে চোখ আঁকল

ঈশ্বরেরা মিলে

ধরলে তোকে সরস্বতী ঠাকুর করে দেব!

 

ঐ যে দেখো ভূতের বাড়ি

ভয় করছে খুব

মেয়ে হলেই ভয় করে যে, বোঝে না সন্ধে!

 

দাদু ফুচকা ঝালমুড়ি

দাদু বুড়ির-চুল

দাদু, হাতের রেখায় তুমি আমায় ঢেকে নাও...

ঘরে ফেরার রাস্তাগুলো হারিয়ে যাক না রে!

 

দোলনা-দোলা খেলা ভেঙে

চলে যাস না সই

শোন, কাছে আয়, কানে কানে প্রতিজ্ঞা করছি-

পরের জন্মে বন্ধু হব- "মা কালীর দিব্বি!"

 

ঘাটশিলা

 

এক গভীর কোনও লোক

এই নদীর পাড়ে এসে

ওই মুখটি তুলে বলে

দায় কতটা বেড়েছে?

 

তার দুপুর আশ্বিন

তার রাত্রি অঘ্রাণ

মোর নিবিড় কালো তারায়

তার প্রশ্ন বিলি কাটে

 

আমি সংসারের দেনা

ভীরু ত্রস্ত ধূসরতায়

তার দু'হাত জুড়ে রাখি

সে অবাক হয়ে তাকায়

 

কেন গহিন নয় মানুষ

কেন জলোচ্ছ্বাস মানুষ

যেন তিমির হয়ে এলে

তবু দিনের শেষে মানুষ-

 

কালো অন্ধকারে বাজে

বাজে আঁধার ক্ষেতে ক্ষেতে

একা একটি দু'টি পায়ে

তার ধুলোয় খেলে মানুষ...

 

সে হাঁটছে ধীরে ধীরে

সে হাঁটবে ব'লে হৃদয়

আমি বিছিয়ে দিয়েছি যে

নীল পথের তীরে তীরে

 

তার শ্বাসের হাওয়া দেয়

ঘাটশিলার স্টেশনে

ব'সে বাদাম নিয়ে দাদু

মীন আঁখির পানে চায়

 

ঘাটে বসেছি দু'জনে

সু-বর্ণরেখা নদী

তার বর্ণ কী রংয়ের

কে ভেবেছে সংসারে

 

হাতে হাতের আভা তোর

ঠোঁটে ঠোঁটের নাভিমূল

এই জ্যোৎস্না দিয়ে লিখি

তোর লোকান্তর মুখ

 

ওই গভীর কালো লোক

আজ উদাস গাছে গাছে

তুই জলের মতো ব'

আমি তোকেই দেখি আখর...

 

ছবি

 

তার বন্ধু পাঠিয়েছে সাদাকালো একখানি ছবি

ছোট ছোট ঘাসের প্রান্তর

টুকরো টুকরো গাছপালা

শিশুদের মতো খেলছে চারিপাশে লুব্ধ নীরবতা

 

কে যেন দূরে, গির্জায় প্রার্থনা করে-

ঈশ্বর, সবাইকে দেখো

গতকাল রাত্রে বড় জ্যোৎস্না হয়েছিল পৃথিবীতে

আমাকে সামলে রেখো-

যাযাবর হয়ে যেন না যাই...

 

এসো

তোমার চোখ আঁকি

চিঠির পাতার মতো তোমার অক্ষর ধুলোবালি

শরীরে কলম ছোঁয়ালেই কেঁপে উঠছে রক্তের নগর

 

ঐ চোখ দিয়ে তুমি, দেখছ হাজার মৃত্যু

শিকড়ে শিকড়ে তার জল ঢালছ নিবিড় নিবিড়

কাহারা শুইয়া আছে পাথরের সমুদ্রের জলে

তালু ভরে ফুল নয়, স্পন্দন দিচ্ছ উপহার

 

বন্ধু যদি মৃত্যু পাঠায়, তুমি তবে কবরখানা হও

আমরা দু'জনে হাত ধরাধরি করে ভেসে যাই

যেন আত্মা, যেন ঘাস, প্রার্থনার দূরগামী বাতাস

দু'জনেই মরে গেলে সাদাকালো শিশু হয়ে যাব?

 

তবে এসো মৃত্যু আঁকি তোমার নয়নে নয়নে...


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন