কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১ মে, ২০১৯

<<<< সম্পাদকীয় >>>>




কালিমাটি অনলাইন / ৬৭ 


বাঙালির জীবনে আড্ডা একটা অত্যন্ত জরুরি অভ্যাস ও গুরুত্বপূর্ণ যাপন। আড্ডা ব্যতিরেকে জন্মসূত্রে কোনো বাঙালি কখনও মননে যথার্থ বাঙালি হয়ে উঠতে পারে না। আরও অনেকগুলি ব্যাপারও অবশ্য বাঙালি মানসিকতার ক্ষেত্রে একান্ত অপরিহার্য। যেমন মাছ-ভাতের প্রতি আসক্তি, পুলি-পিঠে-পায়েসের প্রতি লোভ, রবীন্দ্রসঙ্গীত-নজরুলগীতি-আধুনিকগানের জন্য আকুলতা, বাংলা নতুন  বছর উদযাপনের জন্য ব্যাকুলতা, ফুটবলের প্রতি আকর্ষণ, কবিতা লেখা ও প্রেমে পড়ার জন্য সন্তরণ ইত্যাদি আরও অনেক কিছু। তবে এরমধ্যে বাঙালি জীবনে আড্ডাটাই হচ্ছে সব থেকে মুখ্য ও প্রতিষ্ঠিত। নতুন প্রজন্মের জন্মসূত্রে বাঙালি ছেলেমেয়েরা অবশ্য ইদানীং বিশ্বের খোলা বাজার-অর্থনীতির আওতায়  এসে এতটাই ব্যস্ত সমস্ত হয়ে পড়েছে যে, কবিতা লেখা দূরে থাক, কবিতা পড়ারও আদৌ আগ্রহ অনুভব করে না। আর প্রেম করার ইচ্ছে ও আগ্রহ পুরোমাত্রায় বজায় থাকলেও সময়ের টানাটানিতেই তা আর সম্ভব হয়ে ওঠে না।  কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন যতটুক প্রেম করা যায়, তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। একবার কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করলে সময়ের অভাব হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়। কিন্তু সেসব কথা আপাতত থাক। আমরা বরং বাঙালির আড্ডার প্রসঙ্গে অনুপ্রবেশ করি বাংলাসাহিত্য আড্ডার মজলিসে। গত ৩১শে মার্চ এরকমই একটা আড্ডায় আমন্ত্রিত হয়ে সস্ত্রীক উপস্থিত হয়েছিলাম কবি কানাইলাল জানার কলকাতার বাঁশদ্রোণীর বাসাবাড়ির ছাদে। হ্যাঁ, দমবন্ধ হয়ে আসা কোনো ঘরের ভেতরে আড্ডা নয়, বরং উদার আকাশের তলায় প্রশস্ত ছাদের চাতালে। আবার সেই ছাদকে কানাইলালবাবু পরম যত্নে সাজিয়েছেন ফুলের টবে। চারিদিকে যেন রঙিন ফুলের জলসা বসেছে! আর সেই রঙিন ফুলের জলসাকে আরও মোহময়ী করে তুলতে লাগিয়েছেন বিভিন্ন শোভার আলোর শেড। এদিকে সারাটা আকাশে একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়ছিল কৃষ্ণবর্ণ মেঘ।  আরামদায়ক ঠাণ্ডা হাওয়া ছুটে আসছিল দূর দূরান্ত থেকে। সত্যিই, সে এক মনোরম পরিবেশ! আর সেই মনোরম পরিবেশকে আরও মনোহর করে তুলতে কানাইলালবাবুর কন্যা উদ্বোধনী গান শুরু করল, ‘বসন্ত এসে গেছে...’

প্রখ্যাত গল্পকার রামকুমার মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘ইদানীং আর এইরকম  খোলামেলা সাহিত্যের আড্ডা বিশেষ হয় না। মূলত সাহিত্য আলোচনা, গল্পপাঠ, কবিতাপাঠ, আবৃত্তির আসর আয়োজিত হয় বিভিন্ন মঞ্চে ও হলঘরে। সেখানে বক্তা ও শ্রোতারা বসেন সারিবদ্ধ চেয়ারে, পেছনের আসনের মানুষটির মুখের  ওপর পৃষ্ঠদেশ রেখে। এভাবে কিন্তু আড্ডাটা ঠিক হয় না। বরং কানাইলালবাবুর ছাদে চেয়ারে গোল হয়ে বসে সবার মুখ দর্শন করতে করতে নিজের কথাটা বলার মধ্যে একটা আলাদা রোমাঞ্চ থাকে’রামকুমারবাবু সেদিন ঠিক কথাই  বলেছিলেন। সেই আড্ডায় প্রায় একশোর কাছাকাছি আড্ডাবাজ হাজিরও  হয়েছিলেন। কেউ আবৃত্তি করলেন, কেউ কবিতাপাঠ করলেন, কেউ গল্পপাঠ করলেন, কেউ শুধু কথাই বললেন। কিছু গানও ছিল।
কবি কানাইলাল জানা বিগত আঠাশ বছর ধরে প্রতি বছর তাঁর আবাসস্থানে এই সাহিত্যের আড্ডার আয়োজন করে আসছেন। আগে সাহিত্যের সঙ্গে সঙ্গীতও যুক্ত ছিল। এখন শুধুই সাহিত্য। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের আগে এই আসর বসত আলিপুর জেলখানায়। সে এক বিচিত্র ব্যাপার! আসলে কানাইলালবাবু   কর্মজীবনে ছিলেন আলিপুর জেলের জেলার। আর জেলারের যা কাজ, মানে অপরাধী বন্দীদের জেলে বন্দী করে রাখা, তা সেই কাজটা বছরে একদিন তিনি কবি-সাহিত্যিকদেরও সঙ্গে করতেন কবিতা-গল্প-প্রবন্ধ লেখার অপরাধে। এখন  অবসর গ্রহণ করার পর আলিপুর জেলে আর নয়, বরং নিজের বাঁশদ্রোণীর বাসভবনকেই একটি সন্ধ্যার জন্য জেলে রূপান্তরিত করেন। জয় হোক কবি কানাইলাল জানার!

বাংলা নতুন বছর শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। নতুনকে আমরা সব সময় স্বাগত জানাই। সবাই ভালো থাকুন, আনন্দে থাকুন, এই কামনা করি।


আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা : 
kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com 

দূরভাষ যোগাযোগ :           
08789040217 / 09835544675  

অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India

2 কমেন্টস্:

  1. বাঙালি আড্ডাবাজ। আর সেটি যদি হয় সাহিত্যআড্ডা তাহলে বাঙালি হয়ে ওঠে রসরাজ।আড্ডা নিয়ে সম্পাদকীয়টা শুধু ভালোই লাগেনি রসোত্তীর্ণ হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  2. বাহ্ অত্যন্ত সুন্দর সম্পাদকীয়। ঝরঝরে গতিশীল গদ্য। একটানে দমবন্ধ করে পড়ে যাবার জন্য আকুলতা জাগায়। বাঙালির রক্তের সঙ্গে মিশে আছে আড্ডা, আড্ডাবাজ জাতি বাঙালি। নতুন যে সাহিত্য আড্ডাস্থলের সন্ধান দিলেন সম্পাদক, প্রকৃতপক্ষেই সুপার্ব।

    উত্তরমুছুন