দাহ
সবাই যখন ঘুমোচ্ছে তখন সব ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে নিয়েছি। দরকারী জিনিসগুলো কেনাই আছে। টেবিলের এলোমেলো বইখাতা যেমন ছিল, থাকুক। কিছু কথা হয়তো উদ্ধার করেই ফেলবে। তোর কিছু কিছু কথা মোছা গেল না! ইরেজারগুলো ভালো ছিল না রে!
মা বাবা কেমন একত্রে চলে গেল, দেখলি? মুহূর্তে যেন বাষ্প হয়ে
গেল! আমি মাঝে রইলাম বুকের ভাঙাচোরা ঢিপঢিপ নিয়ে। জানালার ধারে রোজ জিদ করে বসি। সেদিনও বসেছিলাম।
তুই কি জানিস, এতকাল যে মানুষ কোন খবর নেয়নি আমার, সেও একবার দেখতে এসেছে! ফোনে খোঁজ করেছে অচেনারা! এমন তো আসলে কারোর হয় না, আমার হলো।
সবাই আমাকেই ভালোবাসলেও আমি শুধু তোকে...! তোর মনে আছে, রাতের পর রাত পড়া বাদ দিয়ে আমাদের গল্প করা? না, তোর রেজাল্ট ভালো হলো না। খুব কৌশলে সরে গেলি। যেন আমারই সব দোষ! যেন মা বাবার চলে যাওয়াও আমার দোষ! সিলিন্ডার বাস্ট করাও আমার দোষ! যেন পায়ে আঘাত নিয়ে বাড়িতে বসে যাওয়া আমার দোষ! তোকে সময় অসময়ে আঁকা আমারই দোষ!
বড় বোনেরা নিজেদের ঘর গোছাতে লাগল। তারা পালা করে একদিন আমার সাথে থাকবে ঠিক করেছে। আমি হাসলাম। বুবু, তোমরা ভাইকে নিয়ে কত ভাবো!
ফের ঘর থেকে বেরিয়েছি। সবার ঘরে ঘরে গিয়ে উঁকি দিলাম। সবাই ছুটির আমেজে অলস। আমিও। নাস্তা খেলাম সময় নিয়ে।
তুই একবার ভাব। আমি ঠান্ডা মাথায় এসি চালিয়েছি। দরজা খুব শব্দহীন বন্ধ করেছি। সাইডটেবিল খাটের উপরে তুলেছি। ফ্যানে কীভাবে নাইলনের দড়ি বাঁধতে হবে তা অনেক আগে থেকেই প্র্যাক্টিস করেছি। সবাই যখন অনিচ্ছায় ছেড়ে গেলো, তুই কেন ইচ্ছে করে গেলি রে ময়না?
বেশ কিছু জামাকাপড় বাতিল করেছি। সব বুয়া খালাকে বুঝিয়ে দিলাম। বইখাতা জুনিয়ার ক্লাসের স্টুডেণ্টকে দেবার কথা ছিল। তাও রেডি বই ভর্তি চোখ আঁকা। তোর চোখ। আচ্ছা, আম্মু যাবার দিন কি রঙ শাড়ি যেন পড়েছিল?
তোর কেন মনে হলো আমি আর অপেক্ষা করছি না? আমার পায়ের জন্য বছরটা হারালো। পড়া থেকে পিছিয়ে পড়লাম। তুই আমাকে পেছনে ফেলে ভর্তি হলি নতুন ক্যাম্পাসে।
পাখিকে খুদ খাওয়ানোর সময়টুকু তোর সাথে কথা বলে বলে খাওয়াতাম। মনে করে গিটারটা নিয়ে যাস কান্না ফুরালে। বলেছিলি ইন্টারনেটে গিটার শিখবি!
বুকে পাথর বেঁধে বোনেরা আমাকে নামাবে, মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে কাঁদবে। সত্যি একমাত্র ভাইকে হারাবে তারা, পনের মিনিট আগে ভাবেনি। কাঁদবে বুয়া খালাও।
ও, এখন মনে পড়েছে! আম্মু কোরারঙের ওপর কমলাপাড়
শাড়ি পড়েছিল। আমরা কান ভর্তি করে গান নিয়ে ফিরছিলাম। চিনির কটকটি, মুড়কি, ঢোল আর ধুলোসমেত পহেলা বৈশাখই।
আচ্ছা বাবা কি আগে পুড়েছিল?
বাহ্
উত্তরমুছুনগল্পটা বেশ এগিয়ে যাচ্ছিলো