কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১ মে, ২০১৯

মৃণালিনী মৃণাল




শৈশব


শিশুর মনস্তত্ত্বকে জানতে হলে পন্ডিত বা অভিজ্ঞ হবার প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন
ধৈর্য  দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ। আজকাল অভিভাবকও স্কুল কলেজের শিক্ষক বা সমাজে
বসবাসকারী যে কোন সাধারণ মানুষের মধ্যে এর প্রচন্ড অভাব লক্ষ্য করা যায়।

মনস্তত্ত্ব আলোচনায় সিগময়েড ফ্রয়েড

তাঁর অবদানকে অস্বীকার করা যায় না। তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর নতুন মনস্তাত্ত্বিক
ভাবনা, মনের গঠন  কার্য প্রণালীর এক দিগন্তকারী স্রষ্টা। যদি শৈশব বয়ঃসন্ধি  কৈশোর এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়আলোচনা করা যায় তবে প্রথমেই বলতে হবে, মানব জীবনের শৈশব থেকে প্রতিষ্ঠা পর্ব বা সব বয়স স্তরেই কিছু না কিছু stress, চাপ বা বাইরের ঘটনাবলী মনকে খুব চঞ্চল অস্থির করে তোলে, জন্ম থেকে মৃত্যু
অবধি এই stress চলতে থাকে। একটি ২/৩বছরের শিশু চঞ্চল, মনোজগতে সে  সম্পূর্ণ অন্য দ্বীপের বাসিন্দা। সাধারণত অভিভাবরা তাদের সন্তানদের চোখে চোখে
রাখেন,বিভিন্ন সময়ে সন্তানের কোন ক্ষতি হবার সম্ভাবনায় বিভিন্নভাবে বাধা সৃষ্টি
করেন। কিন্তু এই বয়সে একটি শিশুকে তার নিজেরইচ্ছে মতো কাজে বারবার বাধা দেবার চেষ্টা করলে বেশির ভাগ সময়ে সে বারণ শোনে না বরং তার ইচ্ছে করে ওই কাজটিআবার করে  বারবার 'না' কারণে Oppositional defiant Behaviour লক্ষ্য করা যায়, যা বড় হয়ে তার মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকরে।
সাধারণত, ৩/৫ বছর বয়সের শিশুদের মধ্যে অদ্ভুত আচরণ লক্ষ্য করা যায়। যেমন  বাবাকেও অনায়াসে নিজেরপ্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। বাবার প্রতি একটা Complex বা
ঘৃণার তৈরী হয়, যার নাম OedipusComplex. যেমন, পুরানে রাজাইউদিপয়স
রাগে অন্ধ হয়ে বাবাকে খুন করেছিলেন। মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে সামান্য হলেও
মায়ের প্রতি একটা বিরূপতাComplex আসতে পারে যার নাম Electra Complex. সে নিজের মাকেও প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করে বাবার স্নেহের একচ্ছত্র অস্তিত্ব লাভের আশায়। এই সময় শিশু প্রথম স্কুলের গন্ডিতে পা রাখে, শুরু হয়  পরিবার বিচ্ছিন্ন জীবন। বলাবাহুল্য, এই সময়থেকে শুরু হয় মন  আচরণের  পরিবর্তন। যা হয়তো অনেক অভিভাবক দেখেও দেখেন না। যদিও বা শিশুর  আচরণের সামান্যকিছু পরিবর্তন দেখেন, অন্য শিশুদের সঙ্গে তুলনা করে তেমন  গুরুত্ব দিয়ে ভাবেন না। আর দরিদ্র পরিবারের শিশু? তাদেরআচরণ লক্ষ্য করবার  মতো সময়  মানসিকতা অভিভাবকদের কতটা থাকে, তা অজানা নয়। কিন্তু  শিশুর মনস্তত্ত্ব তো ধনীদরিদ্র ভেদাভেদহীন এবং সকলে একই সমাজে বড় হয়ে  ওঠে। তাই, শিশু মনস্তত্ত্ব আলোচনা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণবিষয়।

মনোরোগ উৎপত্তি  তার প্রেক্ষাপট হিসেবে ফ্রয়েড বা Carl jung, Adlafadler  প্রত্যেক মনোবিশ্লেষকের তত্ত্বে Psycho-analytical theory র মূল স্তম্ভ হল শিশু বয়সে মনের আঘাত, ক্ষত, দ্বন্দ্ব, ভৎর্সনা বা শৈশবের  সমস্যা।
শিশুদের মতো বড়দেরকয়েকটি মানসিক গোলযোগ দেখা দিতে পারে একটু অন্য ভাবে উপস্থাপিত হয়ে যেমন, Anxiety Disorder, Seperation Anxiety Disorder যা বাবা মাকে ছেড়ে থাকবার উৎকন্ঠা, স্কুল ভীতি (Schoolphobia) বা স্কুলে যেতে হতে পারে এই ভয়েই সিঁটিয়ে থাকা। কখনও কখনও Stress বা সংকট বেশি হলে ObsessiveCompulsiveDisorder  দেখা দিতে পারে। ফলে Conflict বা যন্ত্রণারবহিঃপ্রকাশই উপসর্গরআকারে মানসিক Phobia,Hysteria বা  Obsession সৃষ্টি করে। এগুলো আমাদের চোখের সামনে ঘটেচলেছে। উপসর্গ  জানিয়ে দেয় মনোরোগের কথা। কিন্তু কতটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয় আর আজকের নিউক্লিয়ার ফ্যামেলিরএকটি সন্তান, তার চাকরিরত বাবামায়ের সঙ্গে থেকেও যে  কষ্ট  নিঃসঙ্গতায় ভোগে তা বুঝতে না পারলে একজন শিশুর(এখানে শিশু বলতে ৩/১২ বছর বয়স পর্যন্ত সময়সীমাকেই ধরে চলব) তার অদ্ভুত আচারআচরণের  মূল কারণ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠবে

রবীন্দ্রনাথের কবিতায় শিশু মনস্তত্ত্ব ফুটে উঠেছে চমৎকার ভাষায়-
"খোকা
 মাকে শুধায় ডেকে/এলেম আমি কোথা থেকে,/ কোনখানে তুই কুড়িয়ে  পেলি আমাকে।"


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন