কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১ মে, ২০১৯

অচিন্ত্য দাস




পুষ্প-সওদাগর


তা সায়ন্তন ছেলেটার অনেক গুণ। বাংলা, ইংরেজি দুটোই ভাল লেখে। আর ছবি আঁকার হাত তো সেই ছোটবেলা থেকে আর্ট-কলেজ থেকে পাশ করেছে  গতবার বাজারে আর্টিস্টের চাকরি খুব কম, অনেক চেষ্টা করেও হল না। শেষে একটা কাগজে রিপোর্টারের চাকরি পেয়েছে। সারাদিন ঘুরতে হয়, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তথ্য জোগাড় করে লেখা তৈরি করা ওর কাজ। খবরের কাগজের ভাষায়  যাকে বলে ‘স্টোরি’একেবারে সময় পায় না। মা বলেন – “রং-তুলি তো শুকিয়ে কাঠ। সময় করে একটু বসলে ্তো পারিস!” কলেজের অধ্যাপক মনোজবাবু  ঋষিতুল্য মানুষ, সায়ন্তনকে খুব স্নেহ করেন বলেছিলেন - “তোমার চোখ আছে, কল্পনা আছে... আঁকা ছেড়ো না!” আঁকার সময় করতে না পারলেও,   মনোজবাবুর বাড়িতে এখনো সায়ন্তন মাঝে মাঝে যায়

রবিবার সকালে স্যারের বাড়িতে সায়ন্তন এসেছে। “স্যার, একটা অদ্ভুত বিষয় নিয়ে কাজ করছি। ফুল এডিটর সাহেবের ফরমাশ। আজকাল যে ফুলের চাষে সবজির থেকে বেশি আয় হয়, তা জানতাম নারজনীগন্ধা, গাঁদা, পুকুর থাকলে  পদ্ম – ভাল রোজগার জল আর সার ঠিক ঠিক দিতে হয়, এই যা। নইলে ফলন পড়ে যায়, অনেক টাকার লোকসান হয়ে যেতে পারে। ট্রাক ট্রাক ফুল শহরে চালান আসে রোজ। ফুলের সব থেকে লাভের ব্যবসা কি জানেন স্যার? শশ্মান, শ্রাদ্ধবাড়ি, কবরখানা”
“বল কী হে!”
“হ্যাঁ স্যার। ফুল ফিরিয়ে এনে আবার বিক্রি করা যায় যে। তিন-চারবার পর্যন্ত।  রজনীগন্ধা বাসি হলদে হয়ে গেলে কাপড়কাচার নীল গোলা জল ছিটিয়ে সাদা করে দেয় পুরো ‘চেন’ আছে স্যার। চুল্লীতে দেহ ঢোকার আগে ফুল পাচার হয়ে যায়। ভ্যান-রিক্সায় ভেজা-চট ঢাকা দিয়ে গুদামঘর, তারপর দোকান। ফের  কাউকে স্বর্গে তুলে আবার দোকানেকী লাভ যে করে! চাঁইগুলো তো দিন সাত-আট হাজার তুলছে। ভাগ অবশ্য সবারই আছে। পার্টির দাদারাও পায়পদ্ম,  রজনী ছাড়া গ্লাডিওলি আজকাল বাজারে ভাল দর পাচ্ছেঅনেক খবর জোগাড় হয়েছে স্যার, এমন কী সাক্ষাৎকারও নিয়েছি”
“সাক্ষাৎকার?”
“ভ্যান-রিক্সাওয়ালার। শ্মশান টু গোডাউন, আপ এন্ড ডাউন অনেকগুলো ট্রিপ  মারে রোজ। জানেন স্যার, আজকাল লোকে এ সব খবর খুব চায়, লেখাটা মনে হয় হিট হবে শিরোনাম থাকছে ‘পুষ্প-সওদাগর’

সায়ন্তনের কাছে এসব ব্যবসায়িক কথা শুনতে মনোজবাবুর বোধহয় ভাল লাগছিল না যাইহোক সব শুনে বললেন – “লোকেরা যখন চায় তখন তো লিখতেই হবে। না হলে কাগজ চলবে কেন! তবু সায়ন্তন, তুমি বলেই বলছি, মানুষের লাভ-লোকসানের ঘোরপ্যাঁচে পড়েও ফুল কিন্তু এখনো বড় সুন্দর। এতকিছু খবরের মধ্যে এই কথাটার জন্য একটু অন্তত জায়গা রেখো...”


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন