কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১ মে, ২০১৯

দেবযানী বসু




মোটরস্নায়ু


বক্তৃতা কি এমনি এমনি দেওয়া যায়! চিরন্তন মনে মনে বক্তৃতা ভেঁজে রাখছে আজ সপ্তাহ দুয়েক হল। উত্তম মঞ্চে আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে প্রগতি সঙ্ঘ। চিরন্তন ব্যাংকের সাধারণ কর্মী। কিন্তু জলসা টলসায় পাড়ার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলে। চিরন্তনের সামনে এখন খাসা হর্ষবর্ধন সময়। অর্থাৎ বিয়ে হবে আগামী শ্রাবণে। আজকাল যেমন হয় আর কী দু’পক্ষের কথাবার্তা পাকা  হয়ে গেলে পাত্রপাত্রী বেশ ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করে আর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রুমালচোর খেলা জমে ওঠে। 

প্রাকবিবাহ ফোটো সেশনও হবে। তার খুব একটা দেরি নেই।
 কাজিন ভাইবোন আর বন্ধুদের নিয়ে প্রিন্সেপ ঘাটে চলে গেলেই হল। আর সমবয়সী তুতো শ্বশুর শাশুড়ি থাকতেই পারে। তাঁদেরকে তেমন আপনি আজ্ঞে না করলেও চলে।  সমবয়সী মাসি শ্বাশুড়ি আছে চিরন্তনের একজন। তাঁর সঙ্গে বেশ 'আমার মুক্তি আলোয় আলোয়' করে কথা বলা যায়। হ্যাঁ, তিয়ানা চিরন্তনের ভাবী বৌ এর নাম। মেয়েটা স্কুটি নিয়ে ঘোরে। হাত ও পায়ের বিশবিশটা নখে বিশ রকমের নেলপালিশ। আর ককটেল চুলে যেন ভোরের মোরগ ডেকে উঠছে। 

তাও এই গল্পের পাত্রপাত্রীর জীবন সেই নব্বই দশকের সময়। মোবাইল তখনও জলভাত হয়ে ওঠেনি। তা ওদের বিএসেনেল আর নোকিয়া ছিল গান ডাউনলোড করে শোনার জন্য। ফোনকল ছিল ভরসা। চিরন্তন একটু গভীর রাতে বার্তা বিনিময় করবেই। মেসেজেই অমৃত স্রোত উপচে পড়ত। কথা বলতে বলতে পূর্বরাগ রাগাঙ্ক, তাপাঙ্ক, স্ফূটনাঙ্ক ছুঁয়ে ফেলেছে কতবার
  হাতের সক্রিয়তায়। তিয়ানার কন্ঠস্বর মানে শরীরে সুনামি। লাভাস্রোত লাভস্রোত সব বয়ে যায়। সম্বন্ধযুক্ত কিছু প্রিপোজিশন দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয় চিরন্তন। তার মধ্যে ওখানে শব্দটা বহু ব্যবহৃত।

মোবাইলে প্রেম সত্যিকারের প্লেটোনিক প্রেম। ওপারের মানুষ সব সময় ধরতে পারে না কখন সর্বোচ্চ ঢেউ উঠে আছড়ে পড়েছে সাগরে। হঠাৎ করে ফোন কেটে যায়। চিরন্তন একবার আকুতি জানিয়েছিল তুঙ্গভদ্র অবস্থায় - প্লিজ করিয়ে দাও।
এখন এই যে তিয়ানাময় জগৎ এর উপরে নাক তুলে সে আর নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। আজ এত ব্যস্ততার দিনে ফুলের মালা, ফুলের স্তবক, উপহার, খাবার প্যাকেট, নিয়ন্ত্রিত অতিথিদের গাড়ির ব্যবস্থা করা ইত্যাদি খুঁটিনাটি সবদিকে তাঁকে নজর রাখতে হচ্ছে।
 

এ সময়ে তিয়ানার ধূমকেতু মার্কা ফোন এলো -- উঃ চুলকাচ্ছে খুব বোঁটায়। চিরন্তন বাথরুমে চলে গেল সোজা মোবাইল কানে। এ সময়ে মোটরস্নায়ুগুলো অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে। হাত তার অভ্যস্ত জায়গায় চলে যায়। একটু কথা এগোতে না এগোতে শুনতে পেল মাইকে ঘোষিত হচ্ছে ওর নাম মঞ্চে আসার জন্য। চিরন্তন মোবাইল বন্ধ করে ছুটল মঞ্চের দিকে। উইংসের পাশে আসতেই আশেপাশের লোকজন চিৎকার করে ছটফটিয়ে উঠল। বন্ধ করুন বন্ধ করুন বলতে বলতে নাড়ু ছুটে আসছে। চিরন্তন খুব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে লোকের দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজের দিকে তাকাল। কখন যে মোটরস্নায়ুর নিয়মে কচুরিপানার প্রত্যঙ্গ জিপখোলা হয়ে ছিল খেয়াল করে নি।



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন