হায়েনা
সময় অসময়ে আমি বউ পেটাই। মোটামুটি এটা আমার রুটিনওয়ার্ক। আমাদের উপজেলায় একটা ক্লাব আছে। সন্ধ্যার পর তাস খেলা হয়।
সমাজসেবা কর্মকর্তা, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, শিক্ষা অফিসার সবাই আসে, ব্রিজ খেলি, কখনো
ছুটির আগে ৩ তাস।
৩ তাসের প্রতি আমার আলাদা টান। টাকাপয়সা ছাড়া তাস খেলার কোন
মানে হয়?
কঠিন সত্য হলো সব সময় আমি জুয়াতে হেরে যাই। আর এই হেরে
যাবার ফলশ্রুতি বাসায় ফিরে এসে বউকে পেটাই। বউটা বুদ্ধিমতী, শব্দ করে কাঁদে না, পাছে
আশেপাশের লোকজন টের পেয়ে যায়।
আমার বাবা মা দুজনেই নিরক্ষর। অথচ বাবা কোনদিন মাকে ধমক
পর্যন্ত দেননি। মা অবাক হয়ে যান আমার এই আচরণে। একদিন মা নিজেই আমার বউকে বললেন;
: এই হায়েনার সাথে সংসার কইরো না বউমা!
হায়েনা জিনিষটা কী আমি শুধু নামেই শুনেছি, কোনদিন দেখিনি।
বউকে একবার প্রশ্ন করেছিলাম;
: তুমি কি কখনো হায়েনা দেখেছ?
বউয়ের জবাব;
: নাহ
পার্সোনিলিটি নেই আমার। উপজেলায় আমাকে কেউ সমীহ করে না। ওসি
সাহেবকে দেখলে কুঁকড়ে যাই। নির্বাহী অফিসারকে দেখলে গুছিয়ে কথা বলতে পারি না, এলোমেলো
হয়ে যায়। তবে বাইরে যতই লাজুক থাকি না কেন, দুটো কাজে আমি বেশ পারদর্শী।
ক. ঘুষ খেতে পারি হাত কচলাতে কচলাতে।
খ. বাইরের বেড়াল ঘরে এসে বাঘ হয়ে যাই, বউ পেটাই তখন উদ্যমে।
খ. বাইরের বেড়াল ঘরে এসে বাঘ হয়ে যাই, বউ পেটাই তখন উদ্যমে।
গত সপ্তাহে নববর্ষ ভাতা পেয়েছি, যদিও আমি বৈশাখী উৎসবের বিরোধী। ক্লাবে এ
নিয়ে বিতর্ক হলেও আমি চুপ থাকি। নববর্ষের মঙ্গল যাত্রার বিরুদ্ধে কথা বললে যদি
আমার প্রগতিশীলতা নষ্ট হয়! বউ আমার কাছে কিছু চায় না।
সন্ধ্যায় ক্লাবে ৩ তাসের আসর বসে। আজ আবার খানিক মদ্য পানের
ব্যবস্থা করেছিলেন থানার ওসি সাহেব। কাকতলীয়ভাবে সেদিন আমি জিততে থাকি দেদারসে।
রাত হলে চুরচুর হতে থাকি। সাঙ্গ হয় জুয়ার আসর। পকেট ভর্তি
কচকচ টাকা। বাড়ি ফিরতে দেখি আমার সাথে হাঁটছে আকাশে ভেসে থাকা ঠাণ্ডা গোলগাল চাঁদ।
রাতের মন্দাক্রান্তা রাস্তা সুনসান। হাঁটতে থাকি একাকী
সম্রাট আকবরের মতো। বাড়িতে ঢুকতে অসুবিধা হয় না। মাথার ভেতর টলটল করে লাবণ্য জল...
দেহতরী নাচে আনন্দ হিমালয়ে। পকেট ভর্তি টাকর সৌরভ।
শিস দিতে দিতে বউকে ডাকি কাছে। শরীরের ভেতর একটা ভুবন চিল পাখা মেলে কামজ বনজে। বউটাকে জড়িয়ে ধরতে টের পাই মাতাল ঋষিত্ব। পকেট ভর্তি টাকার দাপুটে অগ্নিতে আমার ভেতর হো হো করে উল্লাসে ভেসে ওঠে।
...নেশার লাটিম বনবনে টের পেলাম বউ আজ ভয় পাচ্ছে না আমাকে
একরত্তি...
আমার কানের লতিতে কামড় দিতে দিতে হেসে ওঠে...
বউ ফিসফিসিয়ে ওঠে কানে কানে;
: শোনো না, আমি হায়েনা দেখেছি!
: তাই নাকি? কখন? কোথায়?
আমি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠি আচানক। ব্যাকুল হয়ে ও বলল;
: এই যে তুই...
ফস করে নিভে যায় দেহ ফসফরাসের আলো। বাইরের আকাশে উপজেলা
প্রকাণ্ড চাঁদ।
যেন জীবনের গল্প।
উত্তরমুছুন