কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

অচিন্ত্য দাস




আমি সোহম


সোহম


ডিগ্রি-ফিগ্রি তেমন নেই তবে ইংরেজিতে ভাল কথা বলতে পারি। তাতেই এখানে চাকরিটা পেয়েছি। এদের  কারবার হল বড় বড় কোম্পানির জিনিসপত্র বাজারে বিক্রি করা বড় কোম্পানির কর্তাব্যক্তিদের তোয়াজে রাখতে মাসে ছ-সাতটা পার্টি দিতে হয়। আমার কাজ সেখানেই।

হাল-ফ্যাশনের পোষাক পরে পার্টিতে এদের সঙ্গে চোস্ত ইংরেজিতে কথা বলতে হয় নানা বিষয়ে। কথা বলার কতগুলো নিয়ম আছে। ১) নিজের মত জাহির করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ২) যার হাতে বড় ব্যবসা আছে, তাকে মোলায়েম ভাবে তোল্লাই  দিতে হবে। এই যেমন সেদিন মৃণাল সেন ফিল্ম-ফেস্টিভালে কী একটা ছবি  দেখে মারোয়াড়ি বিগ্-বস আর তার বাঙ্গালি ম্যাডাম পার্টতে এসেছেন। তিন-চার  পেগের পর বিগ্-বস বললেন – “এসব ছবি কেন যে বানায়, বিচ্ছিরি একঘেয়ে...!” এনার হাতে অনেক টাকার ব্যবসা। তাই গলা ভারী করে বললাম  – “স্পষ্টবক্তা না থাকাতে এসব ছবি নামেই কাটে, প্রাইজও পায়...!” ম্যাডাম অন্য টেবিলে ফলের রসে একগাদা ভডকা ঢেলে মৌতাত করছিলেন। এনারও বিস্তর ক্ষমতা। আমি যেতেই বললেন – “উফ্, কী ছবি! পরিচালকের কী সূক্ষ্ম আর গভীর অর্ন্তদৃষ্টি! তুমি কী বল ইয়ংম্যান?”
বলতে হল – “জিনিয়াস। এ দেশ বলে তেমন স্বীকৃতি পাননি অতুলনীয় ছবি, তবে আপনার মত সুন্দর করে তো বলতে পারি না...!” ব্যাস্, ম্যাম খুশি, মিস্টার খুশি।  দু’রকম কথা দু’পক্ষ শুনে ফেললে? একবার হয়েছিল। তখন  নিয়ম হচ্ছে ফোন আসার মিথ্যে ভান করে মোবাইল কানে চেপে সরে পড়া।

এ চাকরিতে খাটনি নেই, টেনশন নেই। তবু আজকাল রাত্তিরে ঘুম হচ্ছে না। মনে হয় একটা ভারী তোশক যেন আমার ওপরে চাপানো, আমি হাঁসফাঁস করছি।

দুপুরে অফিসে আমার একটাই কাজ পার্টিতে কত খরচা হল হিসেব রাখা। তাই করছিলাম এমন সময় হঠাৎ মাথা ঘুরে গেল, চোখে অন্ধকার দেখলামআবছা টের পেলাম সকলে আমাকে ধরাধরি করে নিয়ে যাচ্ছে। হুঁশ আসতে দেখি আমি হাসপাতালের বিছানায়। বুকে হাতে মাথায় অনেক তার আর নল। মনিটারে লাল-সবুজ-নীল গ্রাফ চিকমিক করছে। ডাক্তার দেখে গেছে, নার্সও এল বারকয়েক। পরের দিন বিকেলে সেই চটপটে নার্স মেয়েটা এসে বলল - “আপনি তো প্রায় ঠিক হয়ে গেছেন, কাল ছেড়ে দেবে...”
“কী হয়েছিল?”
“সম্ভবত মানসিক অবসাদ থেকে ব্ল্যাক-আউট”নার্স চলে গেল। এদিকে করিডরে দেখলাম আমার কলেজের বন্ধু অরিত্র আসছে।


অরিত্র

দূর থেকেই দেখেছিলাম সোহম নার্সের সঙ্গে জমাচ্ছে। মিচকি হেসে বললাম - “কেমন আছিস?”
“ভীষণ ভাল, দারুণ ভাল!”
“অ্যাঁ, শেষে নার্সের সঙ্গে পিরীত!”
“আরে না...
“তবে?”
“দ্যাখ্, এখানে চারিদিকে শুধু আমি। আমার রক্তচাপ, আমার প্রশ্বাস, আমার রক্তের অক্সিজেন। আমার কী হয়েছিল তা নিয়ে সকলে ভাবছে চাকরি পাওয়ার পর এই প্রথম দেখছি আমি বলে কেউ একটা আছে এখনও...!”
সেদিন হকচকিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরে বুঝেছি, সোহমের কথাটা ছিল দারুণ সত্যি, আমাদের অনেকের জন্যই সত্যি।
                                                              
   

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন