চিমনিটা আর এককাপ চা
সে বিছানায় চিত শুয়ে। কপালের
ঘাম শুকিয়ে গেছে। কম্বলটা গায়ের ওপর চাপানো। কুহেলী উদাস বসে। গায়ে শার্ট জড়িয়ে
নিয়েছে। খালি পায়ের ওপর কম্বল ঢাকা। জানালার বাইরে তাকিয়ে। শীতের কথা মনে আসে না। প্রিয় চিমনির মাথা থেকে সাদা
ধোঁয়া উড়ে যাচ্ছে। ধোঁয়াগুলোর মধ্যে হারিয়ে সে যেন ভেসে বেড়াচ্ছে। মাঝে ধুধু মাঠ,
কয়েকটা গাছ আর ল্যাম্পপোষ্ট। সংক্রান্তির সূর্য কিছু আগে অস্ত গেছে। ঘরে জ্বলছে একটা
এলইডি টিউব লাইট।
সে ডান হাতে বেড সুইচটা অফ
করে। ঘর হারিয়ে যায়। মেঝেতে পাতা কাশ্মীরি কার্পেট, দেওয়ালের যামিনী রায়, টেবিলে
রাখা গীতবিতান, অ্যাকোয়ারিয়ামের ভেতর ঘুমন্ত মাছগুলো। বাইরের আলো পড়েছে কুহেলীর
মুখের ওপর। সে বাঁ হাতটা উঁচু করে কুহেলীর মুখের পাশাপাশি। কুহেলীর মগ্নতার কোনো
পরিবর্তন হয় না। সে আঙুলের ওপর আলোর নড়াচড়া দেখে। কুহেলী হাতের দিকে তাকায় না।
প্রিয় আঙ্গুলগুলো একা একা
শূন্যে খেলে বেড়ায়। আস্তে আস্তে কুহেলীর কাঁধের ওপর নামে। চিমনির মাথার ওপর লাল
আলোগুলো ধোঁয়ার ভেতর একইভাবে জ্বলে নেভে। আঙুলগুলো কুহেলীর বুকের ওপর স্থির হয়। সন্ধ্যের
সব পাখি ঘরে ফিরে গেছে। আঙুলগুলো আবার নড়েচড়ে ওঠে। কুহেলীর চোখ কুঁচকে যায় -কি হল?
ছুঁয়ে দেখছি।
কুহেলী বিছানা থেকে নেমে
উলিকটের প্যান্ট পরতে পরতে বলে, আর ছুঁয়ে দেখতে হয় না। তোমাকে দেখলে আমার বিরক্ত
লাগছে।
আঙুলগুলো কিছুক্ষণ শূন্যে
ঝুলে থাকে। অন্ধকার। উঁচুতে ওঠে। বাইরের আলোতে একবার মুঠো হয়। ঘরের আলো জ্বলে ওঠে,
আঙুল ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যায়। কার্পেট, যামিনী রায়, গীতবিতান, অ্যাকোয়ারিয়াম চকচকে
হয়ে ওঠে। আবার আলো নেভে। চিমনির মাথা থেকে আলো এসে আঙুলে পড়ে। অন্ধকার আঙুলের
নড়াচড়া। এমনি চলতে থাকে। আলো আর অন্ধকার। আঙুলগুলো নিজে নিজে মুঠো হয়, খুলে যায়। একা একা। তারপর থেমে যায়। অন্ধকারে একটা
ঝিঁঝিঁপোকা ডেকে ওঠে। রান্নাঘরে চামচের শব্দ শোনা যায়।
রান্নাঘর থেকে দুটো কাপ দু’
হাতে ধরে কুহেলী বিছানায় বসে। একটা কাপ চুপচাপ পাশে নামিয়ে রেখে চা খেতে শুরু করে।
ঝিঁঝিঁটা একটানা ডেকে চলে।
বেশ লাগল।
উত্তরমুছুন