কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

দেবযানী বসু




দানববাক্সো


কম বয়েসে মঞ্চের উপর খুব লাফঝাঁপ করে গান করতেন নীলিম সরকার। ষাট বছরের ইদানিং হাল্কা শরীর ঝাঁকিয়ে গান করেন। তিনি কিশোরকন্ঠ গায়ক। দুর্গা পূজায় মুম্বাইয়ের বাঙালিদের দ্বারা আমন্ত্রিত হয়ে গান গেয়ে এসেছেন। কোথাও কোথাও নারকেল কান্ড দিয়ে বাঁধানো ঘাটে পা পিছলে যাবার মতো সুর পিছলে যায় তার। দর্শকরা মন্তব্য করে। কয়েকটি গানের স্কুলে শিক্ষকতা করেন। আর ম্যারাপবাঁধা মঞ্চে নানা অনুষ্ঠানে গান করেন। 
নীলিমের পুত্র এটাই বোঝে না যে এই ইউটিউবের যুগে মানুষ যখন যেমন ইচ্ছে গান শুনতে পায় কানে হেডফোন লাগিয়ে অন্যকে বিরক্ত না করে অথবা অন্যকে বিরক্ত করে (অর্থাৎ যখন পরিবারের কেউ কিছু বলে বা ডাকে তখন শুনতে না পাওয়া) তখন দশপাড়া কাঁপিয়ে জগঝম্প সাউন্ড বক্স বসিয়ে গানের অনুষ্ঠান মানুষ করে কেন। আর পাড়াতুতো পিঠ চুলকানি তো থাকছেই। বছরের পর বছর সেই এক মিউজিক সেই এক কন্ঠস্বর -- ম্যায় হুঁ ডঅঅঅঅন...
পারতপক্ষে তপোব্রত বাবার এই সব অনুষ্ঠানে যায় না। যদিও সে ড্রাম বাজানো শিখেছে আর কাঁধ অব্দি বড়ো চুল রেখেছে।
তপোব্রতর অবাক লাগে একটু বিষাদগ্ৰস্ত মেলোডিয়াস সুর বাজারে খায় বেশি। কে কোথায় অফবিট থেকে সুর ধরছে বা এক নিঃশ্বাসে হাজারটা তান তৈরি করছে এ সব কোথায় ভেসে যায়। বেঁচে থাকে সেই পাঁচালী মার্কা গান। যাতে সুরের চাইতেও কথার দাম বেশি। আসলে আবহমান কালের গল্প বলা গানগুলোর জনপ্রিয়তা বেশি। ফিল্মের গান না গাইলে বা ফিল্মে গান না করলে সে তো গায়ক না।
তপোব্রত ইদানিং ব্যান্ডের সঙ্গে ফাংশানে যায়। সে খোলামাঠে ফাংশান করা পছন্দ করে না। অলিতে গলিতে তো নয়ই। তার অডিটরিয়ামে বাজিয়ে অভ্যাস।
 
নীলিম সরকারের খ্যাতি ভারে কাটছে। শ্রোতারা ওল্ড ইজ গোল্ড বলে নীলিমের গান শোনে। তবে নতুন প্রজন্মের অনেকেই আর ঘন্টা খানেক স্টেজের উপর তাঁকে সহ্য করতে পারে না। এবার ক্রিসমাসের ফাংশানে আটশো স্কয়ার ফিটের মতো একটা গলির মোড়ে গিটার হাতে গান করছিলেন। রাত এগারোটা। আশেপাশের বাড়ির লোকেদের কানের পোকা বেরিয়ে গঙ্গাস্নান করতে গেছে। কোত্থেকে একদল চ্যাংড়া বেজায় হাততালি দিতে শুরু করল। তারা দফায় দফায় সিটি মারল। কমিটির লোকেরা ছুটে এলো।প্রায় মারপিট বেঁধে যায়।একদল মঞ্চে উঠে এলো। গান থামাবেন না নীলিমদা... বিরাট হুঙ্কার... অতএব গন্ডগোলসহ ম্যায় হুঁ ডঅঅঅঅন...
 
তপোব্রত ক্লাব কর্তৃপক্ষের এক পরীক্ষার্থী ছেলেকে নিয়ে নিজের মামাবাড়ি চলে গিয়েছিল নির্বিঘ্নে পড়ার সুযোগ করে দিতে।
 
তপোব্রতর পিঠ তাতে করে বাঁচবে কি কে জানে। পিকচার আভি বাকি হ্যায় দোস্ত।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন