কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

ওত্তো রেনে কাস্তিইয়ো




প্রতিবেশী সাহিত্য


ওত্তো রেনে কাস্তিইয়ো’র কবিতা  

(অনুবাদ : জয়া চৌধুরী)  




কবি পরিচিতিঃ

ওত্তো রেনে কাস্তিইয়া গুয়াতেমালার কবি। ১৯৩৬ সালে সে দেশের কেতসালতেনাঙ্গো শহরে জন্ম তাঁর। জীবনের শুরু থেকেই এক দায়িত্ববান কবি হিসাবে তাঁর আত্মপ্রকাশ। বামপন্থী এই কবি তাঁর আদর্শের জন্য লড়াই করতে তিনি বেছে নিয়েছিলেন কবিতাকেই। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জ্যাকব আরবেঞ্জকে যখন আমেরিকা মিলিটারি ক্যুয়ের মাধ্যমে সরিয়ে দেয় তখন তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন ক’রে মাত্র আঠারো বছর বয়সে তিনি দেশ ছেড়ে এল  সালভাদোরে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। বহু বছর বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে অবশেষে গোপনে স্বদেশে ফেরেন তিনি গেরিলা বাহিনী তৈরী করার জন্য। ১৯৬৭ সালে যে বছর চে গেভারা নিহত হন সে বছরের শুরুর দিকেই সেনাবাহিনীর সাথে এক সম্মুখ যুদ্ধে সস্ত্রীক ভয়াবহ ভাবে আহত হন। এক সপ্তাহ পরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। তাঁর বিখ্যাত কবিতা ট্রিলোজি “চলো পিতৃভূমি, হাঁটা যাক, আমি তোমায় সঙ্গে হাঁটব”–র থেকে লাইন উচ্চারণ করতে করতেই তাঁকে ভয়ঙ্কর  ভাবে খুঁচিয়ে আহত করে হত্যা করা হয়েছিল। কাপুরুষতার উদাহরণ হিসাবে এটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।  



মুক্তি (Libertad) ওত্তো রেনে কাস্তিইয়ো


তোমার জন্য
আমাদের
ত্বকে
জড়ো করা
এত আঘাত আছে,
যে সেগুলো আর মৃত্যুর
খাপে খাপ খায় না।

আমার দেশে
মুক্তিই একমাত্র আত্মার
সূক্ষ্ম বাতাস নয়,
বরং ত্বকের সাহসও বটে।
তার অনন্ত সমতলের
প্রতি মিলিমিটারে
তোমার নামই লেখা-
মুক্তি।
অত্যাচারিত হাতগুলোয়,
শোকের,
বিস্ময়ে বিস্ফারিত
চোখে।
কপালে,
যখন তার গৌরব ডানা ঝাপটায়।
বুকে,
যেখানে এক বলশালী পুরুষ
আমাদের বড় করে তোলে বিশালে।
পিঠে এবং পায়ে
যারা ভয়ানক কষ্ট পায়।
অণ্ডকোষের কারণে,
যারা অহংকারী।
সেখানেই, তোমার নাম থাকে,
তোমার কোমল মসৃণ নাম,
আশা ও সাহসে ভরপুর সঙ্গীত গায়ন রত।

জহ্লাদের ঘায়ে
আমরা এত দিকে
আহত হয়েছি
এবং এত সামান্য ত্বকে লিখেছি
যতবার তোমার নাম,
যে আমরা মরতে পারব না আর,
কেননা মুক্তির
কোনো মৃত্যু নেই।

ওরা আমাদের মারতে মারতে
ধাওয়া করতে পারে,
জানা আছে, যদি ওরা পারে।
তুমি তো সর্বদাই থাকো জয়ী,
মুক্তি। 
আর যখন আমরা
ছুঁড়ে দিই
শেষ কার্তুজ,
তুমিই হবে প্রথমা
যে কন্ঠে গায়
আমার স্বদেশবাসীর,
মুক্তি।
কেননা
পৃথিবীর
বিশালত্বের ওপরে
এর চেয়ে সুন্দর আর কিছু হয় না,
যে একটি স্বাধীন জনপদ,
সাহসী ত্বক,
একটা পদ্ধতির ওপরে
যা সমাপ্ত হয়।

মুক্তি,
তখন,
পাহারা দেয় ও স্বপ্ন দেখে
যখন আমরা
প্রবেশ করি রাত্রিতে
অথবা পৌঁছই দিনে,
মসৃণভাবে প্রেমে পড়ি
তার এত সুন্দর নামের –
মুক্তি।



আমি একা নই কখনো (Nunca estoy solo) ওত্তো রেনে কাস্তিইয়ো


সত্যিই, আমি একা নই কখনো।
আমি শুধু দুঃখী হই
যখন তোমার চোখ
পলাতক হয়ে যায় সেই
স্থান থেকে
যেখানে
আমাদের দেখা করা
দরকার।
এখন অপেক্ষা পচে যায়
সময়ের নিচে,
সেই সময়ের হয়ে যেখানে সে হাসে
আমায় দেখে, মহান প্রেমিক।
প্রেমিকার প্রেম থেকে বঞ্চিত
চিরকাল খোঁজে


অনুবাদক পরিচিতি :  
 
জয়া চৌধুরী রামকৃষ্ণ মিশন, গোলপার্কে স্প্যানিশ ভাষার শিক্ষক। গত কয়েক বছর ধরে তিনি অনুবাদ চর্চায় রত। মূলত স্প্যানিশ-বাংলা-স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদ করেন তিনি। প্যারাগুয়ে দূতাবাস থেকে ২০১৩ সালে একটি উপন্যাস ও একটি কাব্যগ্রন্থের দুটি অনুবাদ বই প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়াও ছোটগল্প সঙ্কলন ও নাটকের অনূদিত দুটি বই গত বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। বেশ কিছু  সাময়িকী, সংবাদপত্র আনন্দবাজার পত্রিকা’, ঢাকা থেকে প্রকাশিত ভোরের কাগজইত্যাদিতে তাঁর বেশ কিছু অনুবাদ ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মঞ্চে নিয়মিত নাটক করেন তিনি, বাংলা ও স্প্যানিশ দুই ভাষাতেই।  সম্প্রতি মৌলিক কবিতাও কয়েকটি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।






0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন