কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

<<<< সম্পাদকীয় >>>>




কালিমাটি অনলাইন / ৬৪    
  

কালিমাটি অনলাইনের ফেব্রুয়ারী সংখ্যা প্রকাশের আগেই শুরু হয়ে যাবে কলকাতা বইমেলা এবং বাংলাদেশ বইমেলা। আর এই দুটি বইমেলাকে কেন্দ্র করে বাংলা ভাষায় যে কত কত বই ও লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হবে, তা ভাবলে একটা অনবদ্য সুন্দর সুখের শিহরণ বয়ে যায় সারাটা অন্তরমহল জুড়ে। সত্যি সত্যিই আজ একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না যে, ভারতে ও বাংলাদেশে এই দুটি বইমেলা মূলত আমাদের বাঙালি জাতীয় জীবনে উৎসবের রূপ ধারণ করেছে। পশ্চিমবঙ্গে এই উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয় দুর্গোৎসবের ঠিক  পরে পরেই, হেমন্তের হিম প্রকৃতিকে স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গেই। প্রস্তুতির আগের প্রস্তুতি অবশ্য শুরু হয়ে যায় আরও অনেক আগেই। শুধুমাত্র সাহিত্যের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানই নয়, বরং অসংখ্য ছোট ছোট সাহিত্য প্রকাশন এবং অসংখ্য লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও লেখকেরা রীতিমতো সক্রিয় হয়ে ওঠেন প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। তারপর যথাসময়ে মেলা বা উৎসব প্রাঙ্গনে উপচে পড়ে সাহিত্য-শস্যের বিশাল ও ব্যাপক সম্ভার।

আমরা এই পর্যায়ে আবার এবং বারবার নিবিড়পাঠ করতে পারি রবীন্দ্রনাথের সেই অনন্য প্রবন্ধ ‘উৎসবের দিন’, যেখানে তিনি খুব সহজ অথচ গভীরভাবে আমাদের জন্য উপস্থাপিত করেছেন উৎসবের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য। তিনি লিখেছেন - “জগতের যেখানে অব্যাহতশক্তির প্রচুর প্রকাশ, সেইখানেই যেন মূর্তিমান উৎসব। সেইজন্য হেমন্তের সূর্যকিরণে অগ্রহায়ণের পক্কশস্যসমূদ্রে সোনার উৎসব হিল্লোলিত হইতে থাকেসেইজন্য আম্রমঞ্জরীর নিবিড় গন্ধে ব্যাকুল নববসন্তে পুষ্পবিচিত্র কুঞ্জবনে উৎসবের উৎসাহ উদ্দাম হইয়া উঠেপ্রকৃতির মধ্যে এইরূপে আমরা নানাস্থানে নানাভাবে শক্তির জয়োৎসব দেখিতে পাই” আর মানুষের উৎসব প্রসঙ্গে লিখেছেন - “মানুষ যেদিন আপনার মনুষ্যত্বের শক্তি বিশেষভাবে স্মরণ করে, বিশেষভাবে উপলব্ধি করে, সেইদিন। যেদিন আমরা আপনাদিগকে প্রাত্যহিক প্রয়োজনের দ্বারা চালিত করি, সেদিন না যেদিন আমরা আপনাদিগকে সাংসারিক সুখদুঃখের দ্বারা ক্ষুদ্ধ করি, সেদিন না যেদিন প্রাকৃতিক নিয়মপরস্পরায় হস্তে আপনাদিগকে ক্রীড়াপুত্তলির মতো ক্ষুদ্র ও জড়ভাবে অনুভব করি, সেদিন আমাদের উৎসবের দিন নহে; সেদিন তো আমরা জড়ের মতো উদ্ভিদের মতো সাধারণ জন্তুর মতো সেদিন তো আমরা আমাদের নিজের মধ্যে সর্বজয়ী মানবশক্তি উপলব্ধি করি না সেদিন আমাদের আনন্দ কিসের? সেদিন আমরা গৃহে অবরুদ্ধ, সেদিন আমরা কর্মে ক্লিষ্ট সেদিন আমরা উজ্জ্বলভাবে আপনাকে ভূষিত করি না সেদিন আমরা উদারভাবে কাহাকেও আহ্বান করি না সেদিন আমাদের ঘরে সংসারচক্রের ঘর্ঘরধ্বনি শোনা যায়, কিন্তু সংগীত শোনা যায় না’ প্রসঙ্গত তিনি আরও লিখেছেন – “প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র দীন একাকী – কিন্তু উৎসবের দিন মানুষ বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র হইয়া বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করিয়া মহৎ”।  

উৎসব প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের এই অমোঘ বিচার ও অভিমত শিরোধার্য। উৎসবের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য পর্যায়ে আমাদের এ ব্যাপারে সব সময় সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে, তবেই আমরা যে কোনো উৎসবকে সার্থক করে তুলতে সক্ষম হব।

সবাই ভালো থাকুন, আনন্দে থাকুন, সৃজনে থাকুন।

আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা : 

kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com 

দূরভাষ যোগাযোগ :   
        
08789040217 / 09835544675  

অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :

Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন