ছবি
ছবিটা
তোলা হয় বেশ কিছুদিন আগে। অনেক বছর আগে হয়তো বা। কোনো বইমেলায় কি? না হলে কলেজ
স্ট্রীটে নিশ্চিত। নতুন বইয়ের গন্ধ উঠত যে ছবিটা থেকে এক সময়! এখন, উঠে আসে কিছু আঠালো
ধুলো হয়তো বা।
ছবিটা
দেখে প্রথমে মনে হয় বিলীন হতে থাকা অর্থহীন কিছু ছাপ কোনোরকমে লেপটে রয়েছে।
শীতের সাঁঝবেলায় মড়াপোড়ানো ধোঁয়ার রেশটুকু মাঝপথে যে ভাবে লেপটে থাকে কুয়াশায়। ঝাপসা
আঁকিবুঁকি আর ধূসর দাগ মিশে আছে কাগজে। পরে, ভালো করে দেখলে, দেখতে পাওয়া যায় ডান দিকে, উপর থেকে
নিচ পর্যন্ত, কিছু একটা ঝুলে
আছে। অনেকটা মেঘের মতো। মেঘ-রঙা ওড়না কি? তাই হবে বোধহয়। ছবির বাইরে থেকে যাওয়া
মানুষটার কাঁধ থেকে খসে গিয়ে ঢুকে পড়েছে ছবির ভিতরে। চিরতরে খসে পড়ার আগে এক
নিদারুণ চেষ্টায় ছড়িয়ে দিয়েছে নিজেকে, জড়িয়ে ধরার আপ্রাণ আবেদনে। কিন্তু কাকে জড়িয়ে
ধরতে চায়? উলটো দিকে, ছবির বাঁ দিকটায়, কাউকেই তো দেখা যায় না!
বাঁ
দিকে, ছবির বাকি সমস্ত অংশ জুড়ে, জেগে উঠেছে কালো কালো কিছু ছোপ। রাস্তায় ছড়িয়ে
থাকা আবর্জনার মতো। ওরা কি রং হারিয়ে ফেলেছে খুব তাড়াতাড়ি? নাকি কোনোদিনই রং ধরেনি
ওদের গায়ে? ওরা কি রাস্তার অ্যাশফল্ট? নাকি ফুলশয্যার শেষে শুকিয়ে যাওয়া গোলাপ?
বোঝা যায় না কিছুতেই! এক দূরারোগ্য অন্ধকার ঢেকে ফেলে গোটা ছবিটাকে।
গোটা
ছবি জুড়ে ছড়িয়ে পড়া ঐ নিকষ আঁধার চিরে, ডান দিক থেকে বাঁ দিকে, একটা চওড়া দাগ চলে
গেছে। অবশিষ্ট অন্ধকারের থেকে
অনেকটা বেশি স্পষ্ট, অনেকটা প্রাণবন্ত ওই দাগ। একটা ঝুলন্ত সেতুর মতো লাগে। একটু বেশি ঝুলে গেছে কি
সেতুটা? দুর্বল? তাহলেও তখনো ভেঙে পড়েনি কিন্তু! তবে, যদি খুঁটিয়ে দেখা যায়, বোঝা
যাবে ওটা আসলে দুটো হাত। ছবির এপার থেকে ওপারে ছড়িয়ে রয়েছে। ছবির ফ্রেমের বাইরে
থেকে ভিতরে ঢুকে আসা ওই হাত দুটো একে অপরকে আঁকড়ে ধরে এক সেতু নির্মাণ করেছে ছবির
ঠিক মাঝখানে। যে দুটি মানুষ ছবির দু’দিকে ফ্রেমের বাইরেই থেকে গেছে এক চিরকালীন অভ্যেসে— অদৃশ্য, তাই অস্তিত্বহীন— তাদেরই
দুটি হাত ছবির মধ্যে ঢুকে এসে গড়ে তুলেছে এক আশ্চর্য সেতু। মায়াবী, অথচ সজীব;
আদুরে, অথচ সংকল্পে দৃঢ়।
ছবিটা
যখন তোলা হয়েছিল তখন ওই সেতু দিয়ে অবিরাম ছুটে যেত শিহরণ। এক দিক থেকে আর এক দিকে।
তারপর ছড়িয়ে পড়ত চারিদিকে। এখন, গোটা ছবি জুড়ে ছড়িয়ে আছে শুধুমাত্র ফুরিয়ে যাওয়া
ন্যাপথালিনের শেষ ঘ্রাণটুকু।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন