কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ৯ মার্চ, ২০১৬

অপরাহ্ণ সুসমিতো

বরাদ্দ অন্ধকারে


: কলিমুল্লাহ, কলিমুল্লাহ...
কলিমুল্লাহ জানালার শিক ধরে বাইরের দূরে হারানো রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে থাকে। রাস্তাটা কই গেছে?
কলিমুল্লাহর কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে হুজুর খেঁকিয়ে ওঠে
গলার রগ ফুলিয়ে আবার ডাক দেয়;
: হারামজাদা কতা কস না কেন? কি হইসে?

হুজুর পাজামার গিঁট কষে বাঁধতে বাঁধতে তার তালেব ই এলম কলিমুল্লাহর রুমের দিকে এগিয়ে আসে। কলিমুল্লাহর রুমে আরো তিনজন রুমমেট, কিন্তু সবাই কোরবানীর ঈদে নিজেদের বাড়ি গেছেকলিমুল্লাহ এতিম, কোথাও যাওয়ার নেইমাদ্রাসা বন্ধ হলেও এখানে রয়ে গেছে

আরাজীসুন্দর গ্রামে ধারে কাছে কোনো স্কুল নেই। এটাই একমাত্র ফোরকানিয়া। অধিকাংশ ছাত্রই গরীবসরকারী কিছু অনুদান আর উপজেলার কিছু লোকজনদের অর্থ সাহায্যে চলে এই মাদ্রাসা

ঈদের ছুটিতে ছাত্রদের বলে দেওয়া হয়েছে, তারা যেন বিভিন্ন জায়গা থেকে চামড়া  বেচার টাকা সংগ্রহ করে
কলিমুল্লাহ বিকেল গড়িয়ে গেলেও ওর হস্টেলের রুম থেকে বের হয়নিজানালা দিয়ে রাস্তার দিকে তার মনোযোগ

গত রাতে হুজুর তাকে কাছে ডাকে। বলে হুজুরের নাকি মাথাব্যথা। তারপর বলে হাত পা ব্যথা
কলিমুল্লাহ সওয়াবের কাজ ভেবে হুজুরের হাত পা টিপে দিতে থাকে মহা আনন্দে। হুজুরের নি:শ্বাস ঘন হয়হুজুর পরম যত্নে তার তালেব ই এলম কলিমুল্লাহ’র পাজামায় হাত রাখেহুজুর ফিসফিস করে কলিমুল্লাহর কানে কানে বলে;
: একদম নড়বি না। আল্লাহর আরশ কাঁপি উইঠবে

হানাদার রাত আর হুজুর সমার্থক হয়ে ওঠে রাতের বুটের শব্দে

হুজুর কলিমুল্লাহ’র কোনো সাড়া না পেয়ে ওর রুমে ঢুকে দেখে সে জানালার শিক ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে
হুজুর ধীর পায়ে ওর পেছনে এসে দাঁড়ায়খুব স্নেহভরে ওর কাঁধে হাত রাখে কলিমুল্লাহ মুখ ঘুরিয়ে তাকাল নাঠান্ডা সোজা দাঁড়িয়েই রইল

: কলিমুল্লাহ, তুই তো আমার পেয়ারের
এরকম বলদের মতো দাঁড়ায়া আছিস কেনে? ভাত খাবিনে। গোসল করবিনেআয় কোরবানীর মাংস আছে, খাবানি দুজন।

ছেলেটা কোনো উত্তর করে না
হুজুর ওর পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে নিচের দিকে নামতে থাকে। নূরাণী চেহারা হুজুরহুজুরের গা থেকে আতরের গন্ধ পায় কাল রাতের মতো। হুজুর এবার গম্ভীর

: শোন এসব কারো সাথে আলাপ করবিনে। বুইঝেছিস? গুনাহ হবি


হুজুরের হাত কলিমুল্লাহর নিতম্ব বরাবর এসে থামতেই কলিমুল্লাহ রোবটের মতো ঘুরে দাঁড়ায় হুজুরের নূরাণী পানেতিনি চমকে দেখেন কলিমুল্লাহর পাথরের মতো চোখমনে হলো পদ্মার ইলিশ চোখ, চোখের পাতা নেইঅনুভূতি নেই, পলক নেই।

হুজুর খেয়াল করল আবছা করে ছেলেটার বাম হাত খানিকটা বেড়ে গেছে। কি? আধো অন্ধকারে বোঝা গেল না
হুজুরের মনে হলো কেউ তার কানে কানে বলছে গোঙানোর মতো করে;

: নড়বেন না হুজুরআল্লাহর আরশ কাঁপবে...

সাঁওতাল মেয়ের মতো লাবণ্য ভরাট করে সন্ধ্যা হলো আরাজীসুন্দর গ্রামে
িদ্যুত বাতি নেই বলে জানালা গলে রাস্তায় মন্ত্রণালয়ের মতো থোক থোক বরাদ্দ অন্ধকার

দূরের পথটা আর আঁকাবাকা মনে হচ্ছে নাএকদম কলিমুল্লাহর মতো সমান সোজা...




1 কমেন্টস্:

  1. কবিতার মতো সুন্দর ভাষা। 'নূরাণী'র মতো বেশ কিছু শব্দ আমার অচেনা হলেও, শান্ত প্রতিবাদী চোখদুটো সামনে ভেসে উঠল ।

    উত্তরমুছুন