হ্যান্ড ড্রায়ার এবং দেশ-দশের একটি প্রেমের গল্প
হ্যান্ড ড্রায়ারের নিচে একটা
হাত। হাওয়া দিচ্ছে। হাতের ওপর-নিচ। সাদা-কালো। কম্পমান। শিরায় শিরায় হাওয়া দিচ্ছে। যেন এক
লহমায় কেউ হাত বুলিয়ে চলে যাচ্ছে। শিরাগুলো একটা একটা করে ফুলে উঠছে, উঠে দাঁড়াচ্ছে। হাতটা ড্রায়ারের নিচ
থেকে সরিয়ে নিলেই যে কে সেই। শিরাদের কথাবার্তা শেষ। সবাই ঘুমিয়ে পড়ছে আবার। নতুন করে। হাওয়া দিলে হাওয়ায় হাওয়ায়
শিরাদের ভেতর সেঁধিয়ে যাচ্ছে একেকটা গল্প। হাওয়া
বন্ধ হলে সেইসব গল্প মরে যাচ্ছে এমনটা নয়। শিরা থেকে উপশিরা হয়ে হাওয়ারু সেই সব গল্প রক্তে গিয়ে মিশছে। আর গল্প
একবার রক্তে মিশে গেলে আর কিছু করার নেই।
হাতটা তাই হ্যান্ড ড্রায়ার
ভালোবাসে। তার কাছেই ওর ফিরে ফিরে আসা। ভালোবাসে হাতের শরীরে হাওয়ার গল্প-সঞ্চালন।
হাতটা আরো আরো গল্প ভরতে চায় শিরায় শিরায়। হাওয়ার গল্প। হওয়ার গল্প। যতক্ষণ না আয়ুরেখাটাই গল্প হয়ে যাচ্ছে। হাতটা জানে গল্প আর আয়ুরেখার পুরনো দ্বন্দ্ব-বিদ্বেষ। হয়তো
একদিন সকালে হাতটা দরজা খুলতেই গুড়ুম
শব্দে একটা বন্দুক লিখবে শেষ গল্প, তার আয়ুরেখা বরাবর। আয়ুরেখা চিরে। সেই গল্পের কোনো বানান হবে না। কোনো
হওয়া হবে না। না হওয়ারও কি একটা হাওয়া
থাকে? ভালোবাসা থাকে? দেশের
প্রতি? দশের প্রতি? জীবন থেকে
মৃত্যুর প্রতি? আত্মন থেকে হননের প্রতি?
সেইসব প্রগাঢ় ভালোবাসার
বন্দুকেরা গর্জে উঠবে একদিন আর হাতটা খসে পড়বে বাকি শরীর থেকে। যদিও বাকি শরীরের ব্যাকরণ সে
আদৌ কখনো গলাধঃকরণ করেনি। যাইহোক সেই
রক্তমাখা কাটা হাতটাকে কেউ কি তখন একটা হ্যান্ড ড্রায়ারের নিচে নিয়ে গিয়ে বসাবে? কেমন হবে সে দৃশ্য? হাওয়ায় হাওয়ায় কি তখনো গল্প সেঁধিয়ে
যাবে হাতের ফুলন্ত অফুরন্ত শিরা-উপশিরায়? দেশপন্থী-দশপন্থী
প্রেমিকরা কি দেখবে সেই মৃত্যু-পরবর্তী
গল্প-সঞ্চালন? রক্ত তখন শরীরের
ভেতর থেকে বাইরে চলে এসেছে। শরীরের কাছে নিষ্প্রয়োজন স্বয়ম্ভর হাত আর শরীর থেকে ছেঁটে ফেলা রক্তাক্ত একাকী হাতের
ভেতর পার্থক্য শুধু দেশের প্রেম, দশের প্রেম, বিধির প্রেম, অমর প্রেম।
হ্যান্ড ড্রায়ারের নিচে একটা
হাত। হাওয়া দিচ্ছে। হাতের ওপর-নিচ। সাদা-কালো। কম্পমান। শিরায় শিরায় হাওয়া দিচ্ছে। যেন এক
লহমায় কেউ হাত বুলিয়ে চলে যাচ্ছে। শিরাগুলো একটা একটা করে ফুলে উঠছে, উঠে দাঁড়াচ্ছে।
গল্প... অদম্য গল্পের মতো... উঠে
দাঁড়াচ্ছে... উঠে দাঁড়াচ্ছে...
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন