![]() |
কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৮ |
বুড়ি চাঁদ
লিলিথের ব্যথা বুকে বয়ে পথ চলি কিন্তু বিদ্রোহ করতে পারি না। কেবল দাহ, অবসাদ আর অবসাদ! দেহ থেকে ধান হতে আরও কত অপেক্ষা জানি না, শুধু হাঁটি।
চাঁদ কেন হাঁটে আমার সাথে? চাঁদকে
ভয় পাই আমি। সেই শৈশবে পোড়া চাঁদ ঢুকে গেছে আমার ভেতর।
দিঘির মতো বিশাল পুকুরপাড়ে পাটি
বিছিয়ে গল্প করছিল বড়োরা, আমি এককোণে গুটিসুটি শুয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়েছিলাম। তখন বিশ্বাস
করতাম চাঁদের বুড়ির গল্প, আর কোনভাবেই তাকে মেলাতে না পেরে প্রতিদিন নিজেকে আরও একটু
বোকা বলে মেনে নিতাম। বোকাই তো সবাই যা নিশ্চিত দেখছে, আঙুল দেখিয়ে বলছে ওই তো ওই যে
কুঁজো বুড়ি আর সামনেই চরকাটার দিকে বুড়ি ঝুঁকে আছে। কিন্তু আমি কিছুতেই মেলাতে পারি
না, আর সবাই বোকা বলবে বলে বলতেও পারি না, শুধু চোখ ফেড়ে প্রাণ ঢেলে চাঁদের দিকে চেয়ে
থাকি। দেখি পুকুরের ভেতর আরেকটি চাঁদ, মাঝে মাঝে মনে হয় চাঁদ যেন এগিয়ে আসছে, যেন টুপ করে পুকুরে পড়ে যাবে।
তখন কেন যে আমি কাঁদি, বৃষ্টির
মতো ঝরঝর কাঁদতে থাকি! অলৌকিক জোৎস্নায় কেন যে মনে হয়ে চাঁদটা পুড়ে যাচ্ছে আর আমি শব্দ
করে কেঁদে উঠি! মজলিশ ভেঙে যায়, সবাই অস্থির হয়ে ওঠে, প্রশ্নে প্রশ্নে আমি জর্জরিত
হতে থাকি।
আমি বলতে পারি না আমার ভেতরে চাঁদ
ঢুকে গেছে হয়তো, বুঝতেও পারি না। আবোল তাবোল কিছু বলি বা বলি না কেবল হেঁচকি তুলে আরও কাঁদি। সবাই বলে
স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছে। বুড়ি দাদি দোয়া পড়ে ফুঁ দেয় আর রাগ করে তার বেআক্কেল ছেলেমেয়েদের
ওপর। এরকম ঐশী অন্ধকারে নাকি নিশিতে পায়!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন