![]() |
কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৮ |
সেমসাইড গোল
ঘটনাটা জানাজানি হলো বারো বছর পরে, মানে একযুগ পরে। এই বারো বছরে একই ছাদের তলায় বসে শুয়ে এবং দাঁড়িয়ে রতন আর রমা অতিক্রম করেছে দাম্পত্যের বারোটা গ্রীষ্ম বর্ষা শরত এবং আরও তিনটে ঋতু। তাদের এই এতদিনের দাম্পত্যজীবন যে খুব একটা আহামরি ছিল, তা নয়, ঝগড়া ঝামেলা প্রায়ই লেগে থাকত। পাড়ার লোকেরাও জানত, রতন ও রমার ঝামেলা সাপ্তাহিক জীবনযাপনের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু আচমকাই তাদের দাম্পত্যজীবন হোঁচট খেল, যেদিন বিশ্বস্তসূত্রে রমা আবিষ্কার করল, তার সঙ্গে বিয়ে হবার আগে রতন বিবাহিত ছিল এবং সেই আগের বৌয়ের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ না করেই তাকে বিয়ে করেছিল। অর্থাৎ তাদের বিয়েটা অবৈধ, আইনত অপরাধ! কিন্তু একথা তো রতন তাকে জানায়নি! এমন কি প্রথম বিবাহিতা বৌকে কিছু না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে! অর্থাৎ শুধু একজনকে নয়, বরং দু’দুজন মহিলাকে ঠকিয়েছে!
সেদিন রতনের প্রথম বৌ আল্পনার সঙ্গে বাজারে মাছ কিনতে গিয়ে আলাপ হয়েছিল রমার, রমার জানা ছিল না আল্পনা রতনের প্রথমপক্ষ, আল্পনার জানা ছিল না, রমা রতনের দ্বিতীয়পক্ষ। কথায় কথায় জানতে পেরে আল্পনা হকচকিয়ে গেছিল, রতন আপনার বর কেন হবে, ও তো আমার বর! কয়েকবছর আগে ডিভোর্স না দিয়ে আমাকে ছেড়ে পালিয়েছিল। আর দেখুন, লোকটা কেমন জোচ্চোর, আপনাকে আমার কথা না জানিয়ে অবৈধ বিয়ে করেছে! আমি ছাড়ব না, লোকটা আমকে অনেক জ্বালিয়েছে, আমি মামলা করব, ওকে বরবাদ করে ছাড়ব!
রমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। রতনকে বরবাদ করা মানে তারও বরবাদ হওয়া! কোনো সন্দেহ নেই যে, রতন লোকটা সাংঘাতিক ঠগ। আসলে আল্পনা মামলা করলে আদালতের রায় তার পক্ষেই যাবে, ডিভোর্সের কাগজ তো রতন পেশ করতে পারবে না! তারপর রতন আবার আল্পনার সঙ্গে ঘরসংসার করবে কিনা, সেটা পরের কথা, কিন্তু রমার ঘরসংসার তো আর থাকবে না!
রমা বুঝে উঠতে পারছিল না, কী করবে! কেননা, রতন যে কান্ডটা করে আল্পনাকে ছেড়ে পালিয়ে তাকে বিয়ে করেছিল, ঠিক সেই কান্ডটাই করেছে রমা নিজেও। রমার প্রথম বিয়ে হয়েছিল নিতাইয়ের সঙ্গে। কিন্তু নিতাইয়ের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না। প্রায়ই হুজ্জোতি লেগে থাকত। একদিন গভীর রাতে নিতাইকে ছেড়ে পালালো। পালিয়ে এসে সধবার বেশ ও চিহ্ন ত্যাগ করল। আর তখনই ঘটনাচক্রে আলাপ হয়েছিল রতনের সঙ্গে। আলাপ থেকে প্রেমালাপ। রতন রমাকে বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ করতেই রমা তা লুফে নিয়েছিল। আর তারপর বারোটা বছর ঝগড়া ঝামেলার মধ্যেই কেটে গেছিল।
রমা এই দুঃসময়ে রতনকে সান্ত্বনা
দিয়ে বলল, তুমিও আমাকে ক্ষমা কর প্লিজ!
রতন অবাক হলো।
-কেন, কেন? তুমি ক্ষমা চাইছ কেন?
রমা কাচুমাচু মুখ করে বলল, আসলে
তোমাকে বিয়ের আগেও একটা বিয়ে করেছিলাম যে! তোমাকে জানানো হয়নি!
বেশ লাগল। শঠে শাঠ্যং নাকি চোরে চোরে …
উত্তরমুছুন