কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / ষষ্ঠ সংখ্যা / ১৩৩

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / ষষ্ঠ সংখ্যা / ১৩৩

বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫

অনুভব তুলসীর কবিতা

 

প্রতিবেশী সাহিত্য

অনুভব তুলসীর কবিতা

(অনুবাদঃ অভিজিৎ মিত্র)

 


কবি পরিচিতিঃ মাত্র একমাস আগে গত হলেন অসমীয়া সাহিত্যের অন্যতম কবি অনুভব তুলসী (ডিসেম্বর ৩, ১৯৫৮ - জুলাই ১, ২০২৫)। রেখে গেলেন প্রায় ২০টি কবিতার বই, ৬টি অনুবাদ গ্রন্থ, বেশ কিছু আলোচনা ও সম্পাদিত বই। এবং সাহিত্যিক হিসেবে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পুরস্কার। তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল সেই ২০০৮-০৯ সাল নাগাদ, বন্ধুবর প্রসূন বর্মন (কটন কলেজের প্রফেসর) ও অগ্রজপ্রতিম তুষারকান্তি সাহার (‘মজলিস’ পত্রিকার সম্পাদক) সৌজন্যে। বেশ কয়েকবার আড্ডা মেরেছি।  তিনি তখন স্থানীয় এক কলেজের ইংরাজীর অধ্যাপক, আমি তখন আই-আই-টি গুয়াহাটিতে পড়াই। মনে  আছে, তিনি ‘কৌরব’ সম্বন্ধে খবর রাখতেন এবং আমি কৌরব গোষ্ঠীর লেখক বলে আমাকে বেশ পছন্দ করতেন। গুয়াহাটির বেশ কয়েকটা পত্রিকায় তাঁর কিছু কবিতা অনুবাদও করেছিলাম তখন। দুর্ভাগ্য, এখন আর সেগুলো কিছুই হাতের কাছে পেলাম না। ইন্টারনেটে প্রাপ্ত অন্য কয়েকটা কবিতা অনুবাদ করে তুলে দিলাম, তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে। তাঁর কবিতা অন্য লেখকদের তুলনায় বেশ খানিকটা আলাদা, প্রতীকী, সেটা নিচের অনুবাদ পড়লেই বুঝতে পারবেন। সত্যি, সময় কী তাড়াতাড়ি কেটে যায়! মৃত্যু তাঁর লেখা “সূর্যর সতে মই যি চুক্তি করিছিলোঁ তার ম্যাদ উকলি গৈছে” প্রমাণ করে দিল।

 

চুক্তি

সূর্যের সাথে আমার চুক্তির মেয়াদ শেষ।

আমি মুক্ত,

এখন স্বাধীনতাও আমাকে ছুঁতে পারবে না।

এ জন্মে তুমিও আর পারবে না,

একমাত্র দেয়ালের ঐ আঙটা আমায় ছুঁয়ে থাকবে।

আঙটা হতে গেলে

মনে রেখো 

তোমাকেও অতীতের চাকায় ঘুরতে হবে,

তদ্দিনে রাস্তার অনেক দূরে

আমি অন্যলোকে আগুনে পোড়াব,

আঙটার চোদ্দ পুরুষ পুড়িয়ে দেব।

সেই ধোঁয়া পড়বে তোমার চোখে,

জানি তোমার চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসবে।

কিন্তু চোখের জলও আর আমায় ছুঁতে পারবে না,

আমি মুক্ত। 

সূর্যের সাথে আমার চুক্তিশেষের বহু আগেই

                              সূর্যের মেয়াদ শেষ।

 

মরণোত্তর

লাস্টগেটের ধর্মঘটে

গুলি খাওয়া ন’বছরের নিষ্পাপ শিশুর বুকে ঐ দ্যাখো

                                              দুটো ফুটো।

বড় ফুটো দিয়ে আকাশে চাইলে

দেখতে পাচ্ছি

হাতিঘাস দিয়ে বানানো ঝুপড়িগুলো

কারা অবলীলায় ধ্বংস করছে। 

ছোটটায় লাগিয়ে রেখেছে এক দূরবীন

যেটা দিয়ে তাকালেই গোটা পৃথিবীর

রাজনীতি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। 

আর চোখ সরালে –

                      এইসব সত্যি দৃশ্যরা ভ্যানিশ

                      তখন শুধু না বোঝা বিস্ময়।


স্বাধীনতা

হাওয়া আজ পরিহাসের ছলে কথা বলছে।

পতপত করে উড়তে থাকা পতাকা

হো হো করে হাসছে।

বাতাসকে বলছে - তোমার কথাই ভাবছিলাম,

                                      দীর্ঘজীবী হও।

হাওয়ার পরানখোলা হাসি

পতাকার পতপতে আরো জোরে ছড়িয়ে যাচ্ছে।

হাওয়া পতাকাকে জিজ্ঞেস করল,

যারা গ্যাসবেলুন ছাড়ল,

আকাশে পায়রা ওড়াল,

ওরা কি স্বাধীনতার নামে তোমায় খুলল?

তোমায় সত্যি খুলল নাকি শেকলে বাঁধল?

পরের দশ মিনিট

                    পতাকা আর বাতাস,

                    দুজনেই স্তব্ধ। 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন