কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / ষষ্ঠ সংখ্যা / ১৩৩

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / ষষ্ঠ সংখ্যা / ১৩৩

বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫

সুপর্ণা বোস

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৮


পিং জং দং

বউয়ের চাপে পড়ে বাড়িতে মিস্তিরি লাগাতে বাধ‍্য হল সুশীল। রীতিমত হুমকি দিচ্ছিল সুরভি। ঘরদোর সারিয়ে রঙের কলি না চড়ালে সে নাকি বরাবরের মত বাপের বাড়ি চলে যাবে! অগত‍্যা সুশীলের থুতু দিয়ে চেটানো ঘরে একজন রাজমিস্তিরির আবির্ভাব ঘটল। তিনি এমনই ভঙ্গিতে গৃহে প্রবেশ করলেন যেন সাক্ষাৎ বিশ্বকর্মা পান্ডবদের প্রাসাদ গড়ার বরাত পেয়েছেন!

সুশীল সচরাচর স্থিতাবস্থারই পক্ষে। যেখানে যা-যেমন আছে তেমনই থাক। যেমন চলছে চলুক। এই নীতিতে  বিশ্বাসী সুশীল নেহাত গেরোয় না পড়লে বাড়িতে মিস্তিরি ঢোকায়? সে আবার এমন মিস্তিরি যে পশ্চিমের দেয়ালের নোনা ছাড়িয়ে প্লাস্টার করতে বললে পূবের দেয়ালে হাতুড়ি ঠুকে ইঁট বার করে ফেলে! তার কান্ডকারখানা দেখে শেষপর্যন্ত সাত-চড়ে-রা-না-কাড়ার মানুষ সুশীলও খেপে গিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে-

-'মিস্তিরি, তুমি দেখছি  ঠুকেই পুরোবাড়ি ফেলে দিয়ে আবার নতুন করে তৈরি করবে! কানখুলে শুনে নাও, এভাবে কাজ করলে তুমি একটাকাও পাবে না আমার থেকে।

বেগতিক দেখে মিস্তিরি তার হাত ও হাতুড়ি সংবরণ করে। কামারের একঘা-এর বদলে স‍্যাকরার ঠোকাঠুকিই চলতে থাকে দিনভর। দিনান্তে এসে দাঁড়ায় সুশীলের সামনে-

-'বাবু, সামাল করেই কাজ করছিলম বটেক। কিন্তু উদিগের দিয়াল ট-এ কেমন জানি ঢবঢব শব্দ কইরছে! ভিদরে কুনো গুপ্তধনটন...'

মিস্তিরির কথা শেষ না হতেই সুশীল চেয়ার ছেড়ে তড়াক করে অকুস্থলে পৌঁছয়। তারপর যথাস্থানে হাতুড়ি দিয়ে ঠুকতেই সেই ঢবঢব আওয়াজ! সুশীল তাড়াতাড়ি  বলে-

-'ওসব গুপ্তটুপ্ত কিছু এবাড়িতে নেই। পুরনো বাড়ি তাই অমন শব্দ হচ্ছে।'

তৎক্ষণাৎ মিস্তিরির রোজ মিটিয়ে তাকে বিদায় করে সুশীল।

সন্ধে হলে ছেনি হাতুড়ি নিয়ে নিজেই দেওয়াল খুঁড়তে লেগে পড়ে। সুরভি হেসে বলে-

-'সাবধানে ঠোকো, বাস্তুসাপ জড়ানো মোহরের ঘড়া যেন অক্ষত থাকে'!

সুশীল ঘন্টাখানেকের চেষ্টায় দেয়ালের গায়ে বড়সড় একটা গর্ত করে ফেলে। গভীররাতে সেই গর্তের ভিতর টর্চের আলো ফেলে সুরভি। সুশীল বার করে আনে হলদে হয়ে যাওয়া একবান্ডিল কাগজ!

সেই কাগজ আতিপাতি করে পড়ে বোঝে, পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া বহু পুরনো জমির দলিল। এক-আধ কাঠা নয়, বিঘের পর বিঘে। সাল-তারিখ অনুযায়ী প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো। এমনকি দলিলে ব‍্যবহূত শব্দগুলিও বেশ অদ্ভুত! ফর্দ মানে যে দলিলের পাতা, তাই বা কে জানতো! খং মানে খতিয়ান আর বং মানে বাহক! অর্থাৎ কিনা যিনি নিরক্ষর ব‍্যক্তির নাম লেখেন। আবার নিরক্ষরের শর্টফর্ম হল নিং! এজমালি শব্দটা অবশ‍্য সুরভি তার কাকাদের মুখে শুনেছে অনেকবার। দং বিং সাং এইসব শব্দ পড়তে পড়তে কনফিউজড হয়ে সুশীল সুরভিকে বললো-

-'সুরো আমার বাপ-ঠাকুদ্দার এইজমি চীনদেশে নয়তো?'

সুরভি চিন্তা করে বলে,

-বিচিত্র কিছুই নয়! তোমাদের পদবী তো হুই! চিনেমার্কা গন্ধ একটা আছেই! হতেও তো পারে তুমি ফা-হিয়েন অথবা হিউয়েন সাংয়ের বংশধর?

সুশীল আরো খানিক পাতা উল্টে বলে-

-পিং মানে পিতা আর জং মানে স্বামী! দং মানে দখলকারী আর মং মানে মোট!

সুরভি হেসে উঠে বলে-

-তাহলে চায়না যাওয়ার তোড়জোড় করি!

 


1 কমেন্টস্: