কবিতার কালিমাটি ১০৮ |
মহামারী ও মৃত্যুভয়
একসময় মহামারী
লেখা ছিলো সাদা পাতায়, কালো অক্ষরে
পড়তে পড়তে
থমকেছিলাম ঘটনার ভয়াবহতায় ও নিরন্ন মানুষের আর্তনাদে।
তারপর কেটেছে
কত দশক, বয়ে গেছে কত বেনো জল!
হঠাৎ পৃথিবীতে
ছেয়ে গেলো বিষ অন্ধকার... অণু জীবাণুর সংক্রমণ!
মানুষ একে একে
ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে গেলো মৃত্যুভয়ে!
এ এমন মৃত্যুভয়
যা জীবজগতকে করে দিলো ভীত আর প্রকৃতি হলো ভয়শূন্য, উদার আরো !
চিরকালীন আকাশ
হলো যেন আরো বেশি স্বচ্ছ-নীল
বহমান বাতাস
যেন ভীষণ নির্মল ও শুদ্ধ।
আর যারা এতদিন
রাঙানো চোখ ও নখ দাঁত দিয়ে শাসন ও শোষণ করছিলো
সমাজ - জাতি, ধর্ম!
তারা আজ নিয়েছে
স্বেচ্ছা নির্বাসন, কারণ একটাই
মৃত্যুভয়
!
এ সময় সীমান্তে
কেউ ছুঁড়ছে না আর পাথর
কোনো জিহাদী
ছুঁড়ছে না কোনো বোমা
মন্দির - মসজিদ
- গির্জা সব বন্ধ!
এই মৃত্যুভয়
মানুষকে মানুষ করে দিলো !
যে যার ভিটেমাটির
টানে বিভ্রান্তের মতো ছুটলো
কারণ রেল -
বাস - জনপথ সব বন্ধ
শুধু দুটি পা
তখন একমাত্র সম্বল!
অসহায়, দরিদ্র,
আনপড় মানুষ হাঁটলো
একশো মাইল,
দুশো মাইল, পাঁচশো মাইল -
সড়কে রোদ, রোদে
পিচ গলে যাওয়া পথে তারা
খালি পায়ে, ভুখা - জীর্ণ শরীরে শুধু হাঁটলো!
হাঁটছে কানপুর,
হাঁটছে বেনারস, হাঁটছে শহর!
আর শিক্ষিত
মানুষ টিভিতে সোশাল মিডিয়ায় সংলাপ আওড়েছে
ডালগোনা কফিতে
চুমুক দিয়ে দুঃখের মিথ্যে ভরং করেছে!
আর অজ্ঞতায়
আমাদের শরীরে এক একটা অদৃশ্য চাবুক ও মুখে থুথু এসে পড়েছে ...
এই মহামারী
মানুষকে মানবিক করে তুলেছে!
ঈশ্বর আল্লাহ
যীশু যা পারেনি
হাসতে হাসতে
এ মৃত্যুভয়
মানুষকে মানুষ
করে তুলেছে!
লকডাউন
এই স্থবির নিঃশ্চুপ
জীবনে কিছু স্বয়ংক্রিয় উদ্ভট ভাবনা ও আতঙ্ক গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছে আর টোকা দিয়ে
যাচ্ছে বেলা-অবেলায়। ওদের শহরে কোন কারফিউ নেই, ওরা নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়াচ্ছে গলি
থেকে রাজপথ, গ্রাম থেকে মোহল্লা। সীমাহীন স্বাধীনতা এখন ওদের রাজ্যে। রাতের অন্ধকার
হোক বা সকালের নরম ভোরের আলোয় ওদের বিষাক্ত ডানায় ভরা আছে যে নীল বিষ, ছড়িয়ে দিচ্ছে
অবলীলায়, অকাতরে! আর আমরা বুকের হাঁপরে, নিশ্বাসে প্রশ্বাসে জড়িয়ে নিচ্ছি সেই ভয় !
আমরা যতই থাকি
ঘরবন্দি, ওরা কিন্তু জানে আমাদের মনের গোপন চাবিকাঠি! জানিনা কবে নির্মূল হবে ওদের এই অবাধ্য আধিপত্য!
আশ্বাসবাণী
ভালো থেকো গাছ,
ভালো থেকো মোহ
যেটুকু অন্নজল
রাখা আছে
নিরন্ন মুখেদের
তুলে দিও
রোগ ব্যাধি
সেরে গেলে
দু'দন্ড জিরোও
-
বড় অদ্ভুত
বালিশ চাপা এ সময়ে
নোনা জলে, চাপা
আর্তনাদেও বাঁচো
এ বাঁচার লড়াইটুকু
একা হাতে লড়ো
শুধু ভালো থাকো,
আর ভালো রাখো।
দৃশ্যায়ন
এই নিঝুম শান্ত
সময়ে যেখানে ব্যস্ততাহীন চারপাশ, তাও কিছু ব্যস্তবাগীশ জীবের চলাফেরা এখন অবাধ! কোনকিছুকেই গ্রাহ্য যেন করে না
তারা।
সবুজ ঘাসে পিছলে
পরা রোদে গা সেঁকে নেয় ঘুমন্ত শামুক, জল ফড়িং আর ডেঁয়ো পিঁপড়ের সারি, তারপরই যেন দিনমানের
কাজ কাঁধে নিয়ে বেড়ানো ওদের নিয়মমাফিক।
ঠায় দাঁড়িয়ে
থাকা ঝাঁকড়া মাথায় থোকা জবার গাছের ঘুম ভাঙিয়ে দিয়ে যায় ত্রস্ত কাঠবিড়ালীর দল। যেন
কত যুগ পর ফিরে পাওয়া তাদের পর্ণকুটিরের সংসার।
কি অনায়াসে
সাদা পাথরের মেঝেতে গড়িয়ে পরা ভাঙা চোড়া আলোয় নিঃশব্দে এক’পা দু’পা হেঁটে আসে শালিখ-চড়ুই,
কি যেন খোঁজে তারা চরম ব্যস্ততায়!
তারপর দিনের
আলো নিভে এলে এই ভীষণ ক্লান্ত জীবগুলো কোথায় যেন হয় উধাও।
চার দেওয়ালের
ঘেরাটোপই যেন খোপবন্দি জীবগুলোর আস্ত একটা পৃথিবী। ব্যস্ততাহীন এই আলসেমির মধ্যে চুপ
করে বসে থাকাটাও যেন তখন একরকম কাজ।
এই অকাজ সুলভ
কাজের মধ্যে অনন্ত সময় থাকা সে অলীকতা হোক বা উদাসীনতা তার মধ্যেও
ঢুকে পরে জীবনবোধ
-- যে বোধের বাইরে কোন কিছুই অস্তিত্বশীল নয়।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন