কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯২ |
সামান্য নেতা
ছেঁড়া জামার পকেটে হাত ঢুকিয়ে বসে থাকেন সীতানাথ। হৃদয়ের ভিত খুঁড়তে খুঁড়তে এভাবেই সময় কেটে যায় প্রতিদিন। প্রতি মুহূর্তে আতঙ্ক, এই বুঝি কেউ কোনো সমস্যা নিয়ে এলো – ‘দাদা, বড় হুজ্জোতের মধ্যে পড়ে গেছি, ছেলেটা দিনরাত পার্টির কাজ করে বেড়াচ্ছে – মিটিং মিছিল, বিরোধীদের বাড়িঘর ভাঙচুর। বলছে রাজনীতির দাদারা আছে – চাকরি পাইয়ে দেবে। কোথায় চাকরি বলো? কত শিক্ষিত ছেলেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে ফতিঙ্গা হয়ে। তুমি তো অভিজ্ঞ লোক। একটা বুদ্ধি দাও, কী বলে ওকে বোঝাই!’
সীতানাথ থম মেরে বসে থাকেন। বয়সকালের কথা মনে পড়ে যায়। তখন কোনো সমস্যাই সমস্যা বলে মনে হতো না। অফিসে কেউ হয়ত এসে বলল, ‘দাদা, আমার দু’তিনদিনের মায়নে কাটা গেছে’।
-‘কেন?’
সীতানাথের গলার স্বরে মারাত্মক টংকার।
-‘লেট-কামিং’।
মাথা নিচু করে বলল লোকটি।
-‘কশান-লেটার
দিয়েছিল?’
-‘না’।
বিদ্যুৎ পীড়িত গলার স্বর।
-‘মজা
নাকি? চল সাহেবের কছে’। সীতানাথের আাপাদমস্তক জ্বলে ওঠে।
-‘সাহেব
আসেন নি। লেট আসবেন’। বলল সে।
সমস্যার কি শেষ আছে! পাড়ায় পুজোয় আলোর খেলা হবে। স্পেশাল পারমিশন চাই। ‘চলো চলো কাউন্সিলর সাহেবের কাছে’। আর আজকাল? কারও কাছে দরবার করতে যাওয়া তো দূরের কথা, ওসব কথা মনে হলেই বুক দুরদুর করে। পালান সীতানাথ। এসব কি বয়সের জন্য? হতাশার জন্য? দায়িত্ব নিতে ভয়?
ওই, কে যে এলো – ‘সীতানাথ আছ নাকি?’
সীতানাথ অন্যমনা। দু’পা এগিয়ে, তিন-পা পিছিয়ে এসে দরজাটা বন্ধ করে দেন। নিঃশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকেন।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন