কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৪

অভিজিৎ মিত্র

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৫


সুতান

দুপুরটা বেশ গরম। কেউ বলবে না পৌষমাস পড়ে গেছে। তার ওপর অগুনতি পিকনিক পার্টির ক্যাঁচোড় ম্যাচোড়। কংসাবতীর পাড়ে বসে খেতে খেতে ওদের মনে হল, পোষাচ্ছে না, এখানে অন্তত। অতএব মুকুটমনিপুর ছেড়ে ওরা আবার দূরে, ড্রাইভার ছোটুর কথায়। ছেলেটি বেশ চটপটে, লোকাল, সব চেনে। ও বুঝে গেছে জিত আর ওর বন্ধুরা নির্জনতা ভালবাসে, প্রকৃতির কোল ভালবাসে। ওদের এখান থেকে সুতান নিয়ে যাওয়াই শ্রেয়। রানিবাঁধ ঝিলিমিলি রোড ধরে বাঁদিকে কোরাপাড়া রাউতারা হয়ে। ৪৫ কিলোমিটার পথ এক ঘন্টার মধ্যেই। চারদিকে শাল, পিয়াল, মহুয়া, পলাশ আর শিমূল। একেক গ্রাম এত দূরে, কেউ চেঁচালেও শোনা যাবে না। শুধু মাঝে মাঝে ময়ূর, কেকা, লাক্‌ ভাল থাকলে।

- অপূর্ব। রাস্তার ইউ টার্নে যেন রোদ পিছলে পড়ছে। মাঝে শাল মহুয়ার ছায়া। অনেকদিন পর। ইচ্ছে হয়, এরকম জায়গায় থেকে যাই, বুনো গাছের গন্ধ শুঁকি, হাতির ডাক শুনি। প্রতি বিকেলে মহুয়া।

জিত গাড়ি থেকে নেমে পড়েছে। উত্তেজনায় একটা সিগারেট ধরিয়ে নির্জন বিকেল রাস্তায় একা হাঁটতে শুরু করে। রাউতারা পেরিয়ে একটু ভেতরে আসতেই রাস্তার খাড়াই, একে একে ইউ টার্ন, দুধারে ডিপ খাদের দিকে শাল আর শাল, মাঝে মাঝে পিয়াল মহুয়া। নির্জনতা আর ঝিঁঝিঁ। মোবাইল সিগনাল অফ, যেন মানবজমিন থেকে বহুদূর। গাড়ির ভেতর থেকে মুরারী একটু ভয় পেয়ে মিনমিন করে ওঠে।

- ভাই রে, আর যাস নি, এবার গাড়ি ঘুরিয়ে নে, চল্‌ ফিরে যাই। এত নির্জন। হঠাৎ যদি কোন মাওবাদী এসে অ্যাটাক করে!

জিত, ওর আরো দুই বন্ধু, ছোটু, সবাই হেসে ফেলে।

- চল্‌ ছোটু, এগো। এই অব্দি এসে সুতান ওয়াচ টাওয়ারটা দেখেই যাব। শুনেছি ওখানে নাকি মাঝে মাঝে হাতি আসে? সত্যি?

- চলুন না, নিজেই দেখবেন, ওখানে হাতি থামানোর জন্য ইলেকট্রিক তার লাগানো আছে।

পশুদের জল খাবার লেক আর পাশেই ঘন শালে ঢাকা ওয়াচ টাওয়ারটা দেখে জিত আর ওর বন্ধুরা অবাক। ও নিচে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করল টাওয়ারটা কত উঁচু হতে পারে। চল্লিশ? পঞ্চাশ? খাড়াই সিঁড়ি, একবার উঠলে আর নামতে ইচ্ছে করবে না। সূর্য অস্ত গেছে। অন্ধকার হতে খুব একটা দেরি নেই। ওরা ওয়াচ টাওয়ারের মাথায় বিপি খুলে বসল। জল, ছোলাভাজা। মুরারী অ্যাজ ইউজুয়াল ভয়ে মিনমিন করছে।

দু’পেগের পর জিতের মাথায় শালের আদিম ঢেউ। অদ্ভুত এক ঝলক। অনেকদিনের সাবকনসাস। একটা জন্তু। ভোরে ফোটা সদ্য সূর্যস্নাতা এক গন্ধরাজ ফুল হাতে নিয়ে ১৭ বছর ধরে পাপড়িগুলো পিষেছে, থেঁতলেছে, চটকেছে। ওকে এখান থেকে নিচে ফেললে বাঁকুড়ার শক্ত মাটি ওর কোমর ভেঙে দেবে? নাকি ওর পিঠে জিতের দমাদ্দম লাথি দরকার? কোমর ভাঙতে শক্ত পায়ের কখানা লাথি এনাফ?

- দলমা কদ্দূরে রে ছোটু? নিয়ে যাবি?


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন